উচ্চ আদালত
উচ্চ আদালত

ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে ফোনে আড়িপাতা ও মিডিয়ায় প্রকাশ করা ঠিক নয়: হাইকোর্ট

ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে আড়িপাতা যেমন ঠিক না, তেমনি মিডিয়া সগৌরবে যেভাবে প্রচার করে এটাও কিন্তু ঠিক না।

ফোনালাপে আড়িপাতা প্রতিরোধের নিশ্চয়তা ও ফাঁস হওয়া ঘটনাগুলোর তদন্ত করার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের ওপর শুনানিতে এমন মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চে শুনানি শেষে আদেশের জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করেছেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং বিটিআরসির পক্ষে আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।

গত ১০ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এ রিট দায়ের করেন।

শুনানিতে শিশির মোহাম্মদ মনির বলেন, আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারের তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে যেকোনো নাগরিকের ফোনালাপ রেকর্ড করার সুযোগ আছে। এটা নিয়ে আমাদের কোনো কথা নেই। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় ফোনালাপ রেকর্ড করুক তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু যেকোনো নাগরিকের ব্যক্তিগত ফোনালাপ রেকর্ড ও ফাঁস করার আইনগত অধিকার কারো নেই। আমাদের বক্তব্য এখানেই। সংবিধান অনুযায়ী ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষায় বিটিআরসিকে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিটিআরসি আইনের ৩০(চ) ধারা অনুযায়ী ফোনালাপ ফাঁস হবার আগেই বিটিআরসি ব্যবস্থা নিতে পারে। কারণ মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ, পর্যবেক্ষণ করার আইনগত ব্যবস্থা বিটিআরসির আছে। সেই ব্যবস্থায় ফোনালাপ ফাঁস ও বন্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে বিটিআরসি। এ কারণে ফোনালাপ ফাঁস বন্ধে রুল জারির আবেদন করছি। একইসঙ্গে এরইমধ্যে যেসব ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে, সেসব ঘটনা সঙ্গে কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে বিটিআরসি যেন তদন্ত করে সেই নির্দেশনা চাচ্ছি।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, যারা রিট আবেদন করেছেন, তারা আইনজীবী। তারা নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এ কারণে তাদের এ রিট আবেদন করার আইনগত এখতিয়ার নেই। কারো ফোনালাপ ফাঁস হলে তিনি বিটিআরসি আইন অনুযায়ী প্রতিকার চেয়ে ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয় আইনেই মামলা করতে পারেন। ক্ষতিপূরণ চাওয়ার সুযোগ আছে। প্রতিকার পাওয়ার সুনির্দিষ্ট আইন থাকায় জনস্বার্থে রিট আবেদন করার সুযোগ নেই।

বিটিআরসির আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব বলেন, আইনে যদি সুযোগ না থাকতো তবেই সংবিধান অনুযায়ী এ রিট আবেদন করার সুযোগ থাকতো। যেহেতু আইনে সুনির্দিষ্ট বিধান আছে, তাই রিট আবেদন করার সুযোগ নেই। কেউ যদি সংক্ষুব্ধ হন তবে তিনি বিটিআরসির কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করতে পারেন। এখানে রিট আবেদনকারী কেউই সেটা করেনি। তাই রিট আবেদন চলতে পারে না। এ সময় তিনি ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে বিভিন্ন কনটেন্ট সরানোর বিষয়ে বিটিআরসির সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন।

এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে আড়িপাতা যেমন ঠিক না, তেমনি মিডিয়া সগৌরবে যেভাবে প্রচার করে এটাও কিন্তু ঠিক না। এজন্য সাংবাদিক, বিটিআরসিসহ সবারই সজাগ থাকা দরকার।

আদালত আরও বলেন, এ ফোনালাপের কথোপকথন মিডিয়ায় প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিন্তু এ ফোনালাপ কারা রেকর্ড করে? দু’পক্ষের মধ্যে যেকোনো এক পক্ষ করে থাকতে পারে, তৃতীয়পক্ষও করতে পারে। তৃতীয় পক্ষের কী লাভ, আমার মনে হয় বিটিআরসিকে এটা দেখা দরকার।