জেলা জজ আদালত, রাজশাহী

ব্যতিক্রমী সাজা শেষে আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেন আদালত

আসামি গোলাম রাব্বানীর সাজা ছিল এলাকার নিরক্ষর তিনজনকে অক্ষরজ্ঞান দান করতে হবে। সঙ্গে বৃক্ষ রোপণ করতে হবে ও বই পড়তে হবে। গত এক বছর নিজ বাড়িতে থেকে এই সাজা খেটেছেন তিনি। অবশেষে বুধবার তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।

নিজ বাড়িতে থেকে একইভাবে সাজা খেটে মুক্তি পেয়েছেন আরও দুজন। বুধবার রাজশাহীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম প্রবেশনপ্রাপ্ত এই আসামিদের চূড়ান্তভাবে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন।

আসামি গোলাম রাব্বানীর (২৫) বাড়ি বাগমারা থানার পানিশাইল গ্রামে। রাব্বানির সঙ্গে আবুল কালাম নামের এক যুবকের বোনের সম্পর্ক ছিল। ওই সম্পর্ক পরে বিয়েতে গড়ায়। এতে ক্ষিপ্ত হন কালাম। এর জের ধরে কালাম মারধরের শিকার হন। এ ঘটনায় সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

আদালতের রায়ে গোলাম রাব্বানী বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়। তবে বিচারক তাঁকে কারাগারে পাঠাননি। তিনি আসামির বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মামলার প্রকৃতি ও গুরুত্ব বিবেচনায় নেন। এক বছরের প্রবেশন মঞ্জুর করেন বিচারক। শর্ত সাপেক্ষে আসামি গোলাম রাব্বানীকে বাড়িতে থেকেই সংশোধনের সুযোগ দেন।

এই এক বছরে আসাম গোলাম রাব্বানী নিজ এলাকার নিরক্ষর তিনজনকে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন করেছেন। তাঁরা এখন নিজেদের নাম লিখতে পারেন। নিজ এলাকায় কয়েকটি গাছ লাগিয়েছেন গোলাম রাব্বানী। এর বাইরেও তিনি নিজ এলাকায় মাস্ক বিতরণ করেছেন এবং জনসচেতনতা গড়ে তুলতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছেন। স্থানীয় স্কুল থেকে বই সংগ্রহ করে পড়েছেন। কী কী বই পড়েছেন, তার সারাংশ আদালতে জমা দিয়েছেন গোলাম রাব্বানী।

একইভাবে প্রবেশনে নিজ বাড়িতে সাজা খেটে মুক্তি পেয়েছেন গোদাগাড়ী উপজেলার ছোট নারায়ণপুর গ্রামের জাকির হোসেন (৩১) ও তাঁর স্ত্রী সায়মা খাতুন (২৮)। তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে প্রতিবেশী শিল্পী খাতুনের (২৮) সঙ্গে এই দম্পতির ঝগড়া হয়েছিল। এর জেরে তাঁরা লাঠি দিয়ে শিল্পীকে মারধর করেন। এ ঘটনায় তিনি ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।

আদালতের রায়ে সায়মা ও জাকিরের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়। রায় ঘোষণার সময় আসামিপক্ষ আদালতকে জানায়, আসামি সায়মা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তখন আদালত আসামিদের বয়স, পেশা, অপরাধের ধরন, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ইত্যাদি বিবেচনায় নেন। দুই আসামিকে এক বছরের প্রবেশন মঞ্জুর করেন বিচারক। শর্ত সাপেক্ষে বাড়িতে থেকে সংশোধনের সুযোগ দেন।

প্রবেশন কর্মকর্তা মতিনুর রহমান ও লাইজু সিদ্দীক নিয়মিত আসামিদের তত্ত্বাবধান করেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষকে মুখোমুখি করা হয়। শিল্পীর কাছে ক্ষমা চান সায়মা ও জাকির। শিল্পীকে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ক্ষতিপূরণও দেন। শিল্পীও ওই দম্পতিকে ক্ষমা করে দেন। গত ১২ মার্চ সায়মা ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। প্রবেশনকাল সফলভাবে শেষ করায় বুধবার সায়মা ও জাকিরকে মামলা থেকে চূড়ান্তভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

প্রবেশন হচ্ছে অপরাধীদের সংশোধনের জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতি। এর আওতায় দণ্ডিত ব্যক্তিকে কারাগারে না পাঠিয়ে নিজ পরিমণ্ডলে থেকে সংশোধন ও পুনর্বাসনের সুযোগ দেওয়া হয়। শর্ত সাপেক্ষে প্রবেশন কর্মকর্তার অধীনে আসামিকে নিজ বাড়িতে থাকতে দেওয়া হয়। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে সাজা ভোগের জন্য তাঁকে কারাগারে যেতে হবে। মৃত্যুদণ্ডের অপরাধ ছাড়া অন্য যেকোনো অপরাধে একজন নারীর প্রবেশন মঞ্জুর হতে পারে। তবে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ আসামি হলে প্রবেশন দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে।