অত্যাবশ্যক পরিষেবার ক্ষেত্রে ধর্মঘট নিষিদ্ধে বিল সংসদে
পরিবহণ ধর্মঘট

ধর্মঘট বন্ধে আইন করছে সরকার, থাকছে জেল-জরিমানার বিধান

ধর্মঘট ডেকে জনভোগান্তি তৈরির বিরুদ্ধে আইন করতে যাচ্ছে সরকার। যে কোনো পরিষেবাকে ‘অত্যাবশ্যক’ ঘোষণার পর তার কর্মীরা বেআইনিভাবে ধর্মঘট ডাকলে তাদের চাকরিচ্যুতির সঙ্গে সর্বোচ্চ ৬ মাসের জেলের বিধান রেখে একটি আইনের খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

গত ৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন, ২০২১’ খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এটি এখন ভেটিং বা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, এ বিষয়ক দুটো আইন ছিল। ‘অ্যাসেনসিয়াল সার্ভিসেস মেইনটেনেন্স অ্যাক্ট, ১৯৫২’ ও ‘দি অ্যাসেনসিয়াল সার্ভিসেস (সেকেন্ড) অর্ডিন্যান্স ১৯৫৮’ এই দুটোকে একসঙ্গে এনে ‘অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন, ২০২১’ হচ্ছে।

তিনি বলেন, “এই আইন পাস হলে সরকার কোনো সময় যদি প্রয়োজন হয়, বিভিন্ন সার্ভিসকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা ডিক্লেয়ার করতে পারবে। এটা ঘোষণা করলে সেখানে স্ট্রাইক (ধর্মঘট) করা যাবে না, বন্ধও করা যাবে না। মলিকরা লে-অফও করতে পারবে না।”

এই ধরনের ক্ষেত্রের উদাহরণ দিতে গিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “যেমন ডাক, টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট সেবা, তথ্য প্রযুক্তিসহ সব ডিজিটাল সেবা, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল, ডিজিটাল আর্থিক সেবা, বিদ্যুৎ উপাদন ও সরবরাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাজ।

তিনি আরও বলেন, “এছাড়া জল, স্থল ও আকাশ পথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন; বিমানবন্দর পরিচালনা; স্থল ও নদীবন্দর পরিচালনা; কাস্টমসের মাধ্যমে কোনো পণ্য ও যাত্রীর পণ্য ছাড় করার কাজ; সশস্ত্র বাহিনীর কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো কার্যক্রম; প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য বা মালপত্র উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যক্রম বা খাদ্যদ্রব্য ক্রয়; সংগ্রহ ও সংরক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কিত কার্যক্রম।”

সরকার যদি মনে করে কোনো কারণে কখনও এগুলোকে অত্যবশ্যকীয় পরিষেবা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে, তবে ঘোষণা করতে পারবে। সেই ঘোষণা সর্বোচ্চ ৬ মাসের জন্য কার্যকর থাকবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

সরকার যদি অত্যবশ্যকীয় পরিষেবা ঘোষণা করে তবে সেক্ষেত্রে লে-অফ, ধর্মঘট করা যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “এই আইন ভাঙলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। শ্রমিক পর্যায়ে কেউ আইন ভাঙলে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা ৬ মাসের কারাদণ্ড হতে পারে। মালিক পর্যায়ে আইন ভাঙলে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হবে।”

খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, “কোনো ব্যক্তি বেআইনিভাবে ধর্মঘট করলে তাকে বরখাস্তসহ তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা অর্থাৎ চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হবে। এছাড়া তাকে সর্বোচ্চ ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।”

তিনি বলেন, “কেউ যদি আইন ভাঙতে প্ররোচিত করে তাকে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে।”