চাল মজুতের মামলায় স্কয়ার ফুডের এমডির জামিন
হাইকোর্ট

সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকান্ডে হতাহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে রুল

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের (সেজান জুস) কারখানায় আগুনের ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ রোববার (৭ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

রুলে অগ্নিকান্ডে প্রত্যেক নিহত শ্রমিকের পরিবার এবং আহত শ্রমিকদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- এ মর্মে শ্রম মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষ এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠান হাশেম ফুড এর প্রতি আগামী ০৪ সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন।

একইসাথে, আদালত আগামী ৩০ দিনের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের কারণ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করার জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক এবং বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেন।

শুনানীকালে আবেদনকারীগণ আদালতকে অবগত করেন যে, পরবর্তীতে আর কোন ক্ষতিপূরণ দাবী না করার শর্তে অগ্নিকান্ডে নিহত শ্রমিকদের পরিবার ও আহত শ্রমিকদের কারখানার মালিকপক্ষ থেকে নামমাত্র অর্থ (আনুমানিক ২ লক্ষ টাকা) প্রদান করেন এবং এ মর্মে প্রত্যেকের কাছ থেকে পূর্বে লিখিত পৃথক পৃথক হলফনামায় স্বাক্ষর গ্রহণ করেন; যা সম্পূর্ণ বেআইনী, অবৈধ এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। উল্লেখ্য যে, কোন মানুষের জীবনের বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদত্ত ২ লক্ষ টাকা নিতান্তই নগণ্য ও অপর্যাপ্ত।

শুনানীতে আবেদনকারীগণেরপক্ষে অংশগ্রহণ করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার অনীক আর হক এবং ব্যারিস্টার শারমিন আক্তার। রাষ্ট্রেরপক্ষে অংশগ্রহণ করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমের।

এর আগে চারটি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য এক কোটি টাকা ও আহতদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য ২৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো হলো- আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি।

প্রসঙ্গত, গত ৮ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডসের জুসের কারখানায় আগুন লেগে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত ৫২ জন শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে ২৫ জন শ্রমিক।

এই হতাহতের ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক (সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক) আবুল হাসেম, তার ছেলে হাসীব বিন হাসেম, তারেক ইব্রাহীম, তাওসীব ইব্রাহীম, তানজীম ইব্রাহীম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহান শাহ আজাদ, উপ-মহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ ও প্রকৌশলী মো. আলাউদ্দিনকে আসামি করা হয়।

এর আগে গত ১৪ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাদের প্রতি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেছিলেন, ‘এতজন শ্রমিক নির্মমভাবে মারা গেলেন, এফবিসিসিআইসহ দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো কোনো শোকবার্তা পর্যন্ত জানালো না। গণমাধ্যমে শোক জানিয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কোনো বিবৃতিও চোখে পড়লো না। তাদের ন্যূনতম দায়বদ্ধতাও নাই।’

রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি পরে শ্রমিকদের বেতন বকেয়ার বিষয়টি ১৪ জুলাই আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন। এসময় হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন।