সোয়ারীঘাটে অগ্নিকান্ডে ব্লাস্টের শোক, হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবী

রাজধানীর সোয়ারীঘাট এলাকায় রোমানা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ নামক একটি জুতা তৈরির কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।

পাশাপাশি এ অগ্নিকান্ডের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা, আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার বহন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ ২০১০ সালে নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উচ্চ আদালত প্রদত্ত নির্দেশনা সমূহের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য সরকার ও প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছে ব্লাস্ট।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ হতে, গত বৃহস্পতিবার ৪ নভেম্বর ২০২১ আনুমানিক রাত ১:১৫ ঘটিকায় রাজধানীর পুরান ঢাকায় সোয়ারীঘাট এলাকায় রোমানা নামীয় এক জুতা তৈরির কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫ শ্রমিকের মৃত্যু এবং ২ শ্রমিক আহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় লোকদের দেয়া তথ্য মতে, জুতা তৈরির এ কারখানায় প্রচুর পরিমাণে রাবার, প্লাস্টিক এবং রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থের ড্রাম মজুদ করে রাখা হতো। তাদের মতে, মজুদকৃত এ বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থের কারণেই অগ্নিকান্ড ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

উল্লেখ্য যে, বিগত ৩ জুন ২০১০ ঢাকার নিমতলীতে কেমিক্যাল গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ব্লাস্ট সহ ৫টি মানবাধিকার সংগঠন (বেলা, আসক, ব্র্যাক, এবং ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেক্ট বাংলাদেশ) ও পুরাতন ঢাকার একজন বাসিন্দা কর্তৃক দায়েরকৃত জনস্বার্থ মামলায় হাইকোর্ট তার অর্ন্তবর্তীকালীন আদেশে অগ্নিকান্ডের ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ৪টি নির্দেশনা প্রদান করেন। নির্দেশনাসমূহ হচ্ছে:

  • নিমতলী এলাকায় অগ্নিকান্ডের ঘটনার কারণ অনুসন্ধান পূর্বক রিপোর্ট প্রদানের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা;
  • ঢাকা শহরের অননুমোদিত ভবন নির্মাণ, রাসায়নিক এবং বিস্ফোরক দ্রব্যের গুদাম সহ অন্যান্য দাহ্য পদার্থের কারখানা সনাক্ত করার জন্য গঠিত টাস্ক ফোর্স এর রিপোর্ট প্রদান;
  • ঢাকা শহরে কোন্ কোন্ স্থানে অগ্নিনির্বাপনের জন্য জলাধার স্থাপন করা প্রয়োজন এবং কত দিনের মধ্যে তা সম্পন্ন হবে সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রদান; এবং
  • অগ্নিনির্বাপন প্রতিরোধের জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারণা চালানোর জন্য কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, সেই সাথে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ভবনে অগ্নিনির্বাপনযন্ত্র ন্থাপন নিশ্চিত করা এবং অগ্নিকান্ডের সময় জরুরী বহির্গমন পথ নিশ্চিত করার রিপোর্ট প্রদান।

হাইকোর্টের অর্ন্তবর্তীকালীন এই নির্দেশনাসমূহ অনুযায়ী প্রতিবেদন প্রদানের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ৬ মাস সময় নির্ধারণ করে দেন। কিন্ত অদ্যাবধি উক্ত নির্দেশনা অনুযায়ী কোন পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি এবং আদালতে কোন প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি।

পরবর্তীতে গত ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ ঢাকার চকবাজার এলাকার চুড়িহাট্টায় পাঁচটি ভবনে মজুদকৃত বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য, বডি-স্প্রে, প্লাস্টিক পণ্যের থেকে পুণরায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে নিমতলীর ঘটনায় দায়েরকৃত জনস্বার্থ মামলার আবেদনকারীরা পুনরায় আদালতের শরণাপন্ন হলে; গত ৬ মার্চ ২০১৯ আদালত একই বছরের ১১ এপ্রিল চূড়ান্ত শুনানীর জন্য দিন ধার্য করেন।

একইসাথে ২০১০ সালের নিমতলী মামলায় প্রদত্ত অন্তর্বতীকালীন ৪ টি আদেশের প্রেক্ষিতে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তৎসংক্রান্ত সরকারপক্ষের বক্তব্য আদালতে দাখিল করার নির্দেশনা প্রদান করেন।

উল্লেখিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল না করলে বিবাদীগণ ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবে মর্মে বর্ণিত আদেশে উল্লেখ করা হলেও অদ্যবধি মামলাটির পরবর্তী কোন শুনানী হয়নি এবং সরকার পক্ষের কোন জবাব আদালতের নিকট পেশ করা হয়নি।

সরকারের পক্ষ হতে ইতোমধ্যে পুরান ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাগুলো অন্যত্র স্থানান্তরের প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও; এক্ষেত্রে অদ্যাবধি তেমন কোন কার্যকর অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬- এর ৭৮ ধারায় বিষ্ফোরক বা দাহ্য গ্যাস, ধুলা ইত্যাদির নিরাপত্তার বিষয়ে এবং ৭৮.ক (৩) ধারায় কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রত্যেক শ্রমিককে কাজের ঝুঁকি সম্পর্কে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সচেতন করার কথা বলা হয়েছে।

রোমানা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ নামক এ জুতা তৈরির কারখানায় শ্রম আইনের এ সকল বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ না করায় ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ড, শ্রমিকের মৃত্যু ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

-সংবাদ বিজ্ঞপ্তি