বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট আইনজীবী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আইন সংস্কার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট জেয়াদ-আল-মালুম এর স্মরণসভা

মুক্তিযোদ্ধা আইনজীবী জেয়াদ-আল-মালুমকে সশ্রদ্ধ স্মরণ

বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট আইনজীবী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আইন সংস্কার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট জেয়াদ-আল-মালুম এর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে গত ৩ নভেম্বর সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সুফিয়া কামাল ভবন মিলনায়তনে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।

সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির সহসাধারণ সম্পাদক অর্নব সরকার; আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. মোখলেছুর রহমান বাদল; আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক এম সানাউল হক এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম এ সবুর।

এছাড়া পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত অ্যাড. জেয়াদ-আল-মালুমের সহধর্মিনী অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা এবং কন্যা সাদিয়া আফরিন অরনী।

সভার শুরুতে প্রয়াতের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সুরাইয়া পারভীন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু মহিলা পরিষদের সকল আইনি কার্যক্রমের অন্যতম সহযোগী জেয়াদ-আল-মালুমের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে বলেন, সংগঠনের সুফিয়া কামাল ভবনে যার প্রানবন্ত উপস্থিতি ছিল তিনি আজ স্মৃতি হয়ে গেছেন এটা অত্যন্ত বেদনার।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু আরও বলেন, ৯০ এর দশক থেকে মহিলা পরিষদের সাথে যুক্ত হয়ে তিনি প্রথিতযশা, দেশবরেণ্য আইনজীবী ও সংগঠকদের নিয়ে গঠিত কমিটির সাথে অভিন্ন পারিবারিক আইনের প্রাথমিক খসড়া তৈরির উদ্যোগ নেন। নারী আন্দোলন তাঁর এই অবদান সবসময় কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করবে।

সভায় স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম।

তিনি বলেন, আমাদের সাথে তার সম্পর্ক ৫০ বছরের। তিনি মানুষের জন্য রাজনীতি করতেন। আইনপেশায় যুক্ত হওয়ার পর তিনি তরুণ আইনজীবিদের নিয়ে মত বিনিময় সভা করতেন। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের আন্দোলনের রূপরেখা তৈরিতে এবং আন্দোলনের নানা ত্রুটি বিচ্যুতি পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন।

অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বলেন, নারী-পুরুষের সমতায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। তাই নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কিছু সংবেদনশীল মামলার কাজ পরিচালনায় সবসময় আমাদের সহায়তা করেছেন। তিনি প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পাওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে তাদের শাস্তি দিতে পেরেছিলেন।

সভায় বক্তারা বলেন, প্রয়াত জেয়াদ আল মালুম একজন সফল সংগঠক, প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার ধারক ও বাহক এবং সময়ের চেয়ে সাহসী মানুষ ছিলেন। সবকিছুকে তিনি ইতিবাচক দেখতেন। তিনি ছিলেন একজন কমান্ডারের মত। সংগঠনের তরুণ আইনজীবিদের নারী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সবসময় অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।

বক্তারা আরও বলেন, কোর্টে নারী ও শিশু নিপীড়নের মামলার পরিচালনায় ভিক্টিমের পাশে থেকে কিভাবে তাকে সহায়তা করতে হবে তা খুব সূক্ষভাবে তিনি শিখিয়েছেন। তিনি নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কোর্টে লড়াই, করেছেন, আন্দোলনেও সামিল হয়েছেন। কাজের সাথে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে সবসময় তিনি সচেষ্ট থেকেছেন।

বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাজ শুরু করার পর বহুমুখী বাধা, ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে কাজ এগিয়ে নিতে সদা তৎপর ও ‘কমান্ডারের মতো দিকনির্দেশক’ ছিলেন। তার অনেকগুলো কাজের মধ্যে প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন ছিলো শ্রেষ্ঠ কাজ। তাঁর মৃত্যুতে আমরা সাংগঠনিকভাবে ব্যক্তিগতভাবে একজন অভিভাবককে হারালাম। তার অভাব কখনোই পূরণ হওয়ার নয়।

প্রয়াত অ্যাড. জেয়াদ-আল-মালুমের কন্যা সাদিয়া আফরিন অরনী বলেন, বাবা একজন সাহসী মানুষ ছিলেন। অনেক চাপের পরেও তিনি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছেন।

সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, প্রয়াত জেয়াদ আল মালুমের স্মরণে এমন সভার আয়োজন বেদনাদায়ক।

তিনি এসময় তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, সকল মানুষের জন্য বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। জেয়াদ আল মালুম প্রতিটি কাজ নিবিড়ভাবে করতেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মামলা পরিচালনায় তার সফলতা উল্লেখযোগ্য।

এসময় তার সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে পরিষদের সভাপতি বলেন, তার স্মৃতিকে ধরে রাখতে নিয়মিত তার আদর্শের চর্চা করতে হবে। এরপর প্রয়াত এই গুণী আইনজীবীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।

স্মরণসভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের মধ্যে সহ-সভাপতি ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্না, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম , লিগ্যাল এইড সম্পাদক শাহানা কবীর, প্রশিক্ষণ–গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক রেখা সাহা, সমাজকল্যাণ সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি, রোকেয়া সদন সম্পাদক নাসরিন মনসুরসহ নেত্রীবৃন্দ, বিভিন্ন শ্রেণীপেশার ব্যক্তিবর্গ সংগঠনের কর্মকর্তা গণ উপস্থিত ছিলেন।

সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি ডিরেক্টর অ্যাডভোকেট মাকছুদা আখতার।

-সংবাদ বিজ্ঞপ্তি