প্রকাশ্যে ধূমপান ও যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ
হাইকোর্ট

ভারতীয় মায়ের রিট: শিশুসহ পলাতক বাবাকে হাজির করার নির্দেশ

আদালতের নির্দেশ প্রতিপালন না করে তিন বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে পলাতক বাবাকে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ২১ নভেম্বর বেলা ৩টার মধ্যে কোর্টে হাজির করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এ সংক্রান্ত এক আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ বুধবার (১৭ নভেম্বর) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে শিশুটির মায়ের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম ও ব্যারিস্টার ফাইজা মেহরিন। তবে শিশুর বাবার আইনজীবী থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

এর আগে ১৬ নভেম্বর শিশু সন্তানকে নিয়ে তার বাবা বাংলাদেশি নাগরিক শাহিনুর টিআইএম নবীকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। একই বিষয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশকে এ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। শিশুর মা ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাঈদের রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন।

গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট দুই মাসের জন্য ওই শিশুকে ভারতীয় নাগরিক মা সাদিকা সাঈদের হেফাজতে রাখতে আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, মা ও শিশু মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) ব্যবস্থাপনায় থাকবে।

তবে বাংলাদেশি বাবা সপ্তাহে তিন দিন সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত শিশুটির সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। এই দুই মাস সাদিকা সাঈদের পাসপোর্ট গুলশান থানায় জমা রাখতে বলা হয়।

তবে হাইকোর্টের আদেশের পর শিশুর বাবা তার সন্তানকে উন্নত পরিবেশে গুলশান রাখার ইচ্ছার কথা জানান। শিশুর মঙ্গলের কথা চিন্তা করে শিশুর মা রাজি হন। এরপর থেকে গুলশান ক্লাবেই শিশুর মাসহ তারা অবস্থান করছিলেন।

একপর্যায়ে বেড়ানোর কথা বলে গুলশান ক্লাব থেকে শিশুকে নিয়ে যান তার বাবা। তবে এরপর আর শিশুকে গুলশান ক্লাবে মায়ের কাছে দিয়ে যাননি বাবা। এর মধ্যে শিশুর বাবার বিরুদ্ধে জিডি ও মামলাও করা হয়।

এ বিষয়টি গত রোববার (১৪ নভেম্বর) হাইকোর্টের নজরে আনা হলে গতকাল মঙ্গলবার আদালত নির্দেশ দেন, আজ (১৬ নভেম্বর) সকালে শিশুটিকে আদালতে হাজির করতে। কিন্তু শিশুর বাবা আইনজীবীর সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেননি। এ কারণে আইনজীবী থেকে ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।

প্রসঙ্গত, ভারতের বিয়ে সংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে অন্ধপ্রদেশের হায়দরাবাদের সাদিকা সাঈদ শেখ নামে এক নারীকে পছন্দ করেন বারিধারার এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান শাহিনুর টিআইএম নবী। মেয়েটিও হায়দরাবাদের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের। ২০১৭ সালে হায়দরাবাদে তাদের ঘটা করে বিয়ে হয়। বিয়ের পর মালেশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাস শুরু করেন তারা। কয়েক মাস পর ঢাকায় চলে আসেন।

এর মধ্যে এই দম্পতি ২০১৮ সালে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। একপর্যায়ে তাদের সংসারে অশান্তি নেমে আসে। সাদিকা শেখকে মারধরও করেন তার স্বামী। ভারতের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ বিছিন্ন করে দেন। বিষয়টি ভারতে মেয়েটির আত্মীয় স্বজনরা জানতে পারেন।

তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমে ভারতীয় হাই কমিশনে যোগাযোগ করা হয়। তারপরও সমাধান হয়নি। পরে মেয়েটির বোন মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) কাছে আইনি সহায়তা চান।

এরপর গত ৮ আগস্ট সাদিকা শেখ ও তার শিশু সন্তানসহ আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হেবিয়াস কর্পাস (অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে রাখা) রিট করেন ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) পরিচালক ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক লুলান চৌধুরী।

এদিকে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করার পরপরই বাংলাদেশি নাগরিক শাহিনুর টিআইএম নবী ভারতীয় নাগরিক স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন।