অনিয়মে দায়ী পরিচালক ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে ব্যাংক
সংসদে বিল পাস

মিথ্যা তথ্যে গৃহঋণ নিলে ৫ বছরের কারাদণ্ড

মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি) থেকে ঋণ নিলে আগের চেয়ে বেশি সাজার বিধান রেখে বিদ্যমান আইন সংশোধনের প্রস্তাব জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স করপোরেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল- ২০২১’ সংসদে পাসের জন্য তোলেন। পরে সেটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

নতুন আইন অনুযায়ী, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঋণ নিলে পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান করা হয়েছে। লিখিত সম্মতি ছাড়া প্রসপেক্টাসে বা বিজ্ঞাপনে বিএইচবিএফসির নাম ব্যবহারে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।

এর আগে বিলটির ওপর বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সদস্যদের দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

গত জুন মাসে বিলটি সংসদে তোলেন অর্থমন্ত্রী, পরে সেটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

আগের আইনে বলা ছিল, করপোরেশনের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার সময় কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বিবরণী দেন বা জেনে শুনে মিথ্যা বিবরণী ব্যবহার করেন বা কর্পোরেশনে যে কোনো ধরনের জামানত গ্রহণে প্রবৃত্ত করেন তাহলে দুই বছর কারাদণ্ড, দুই হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

বিলে সেটাকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে।

লিখিত সম্মতি ছাড়া প্রসপেক্টাসে বা বিজ্ঞাপনে বিএইচবিএফসির নাম ব্যবহারের সাজা আগে ছিল ছয় মাসের কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা। বিলে জরিমানা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

বিদ্যমান আইনে বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স করপোরেশনের অনুমোদিত মূলধন ১১০ কোটি আর পরিশোধিত মূলধন ১১০ কোটি টাকা ছিল। সংশোধেনে অনুমোদিত মূলধন করা হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা, পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা।

বিলে বলা হয়, করপোরেশনের পরিচালকের মেয়াদ হবে ‘সরকারের সন্তুষ্টিক্রমে’ সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ। করপোরেশন সরকারের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নিতে পারবে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, “করপোরেশনের কার্যপরিধি বিস্তৃতির সাথে সাথে অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ বৃদ্ধি, পরিচালনা পর্ষদের গঠন সুনির্দিষ্টকরণ, ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ, তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে দেশীয় ও আন্তির্জাতিক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সম্পাদনসহ ঋণ গ্রহণ, অপরাধের শাস্তির পরিমাণ বৃদ্ধি, অপরাধের আমলযোগ্যতা, জামিনযোগ্যতা, ফৌজদারি কার্যবিধির প্রয়োগ ও অর্ধদণ্ড আরোপের ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের বিধান সংযোজনসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সঙ্গতি রেখে বিদ্যামান আইন সংশোধনের লক্ষ্যে বিলটি আনা হয়েছে।”

বিলটির জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব ওঠানোর সময় জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী প্রথমবার ফ্ল্যাট নির্মাণকারীদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার দাবি করেন।

তিনি বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। যেসব কর্মকর্তা মিথ্যা তথ্য দেখেও ঋণ দেন, তাদেরও শাস্তির বিধান রাখতে হবে।

সংশোধনী প্রস্তাব ওঠানোর সময় তিনি শহর এলাকার সঙ্গে গ্রামেও গৃহঋণ দেওয়ার দাবি জানান।

জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা পাঁচ শতাংশ সুদে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ পান। এই সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত করা হোক।

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ সহজ শর্তে স্বল্প আয়ের মানুষদের গৃহঋণ দেয়ার দাবি করেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এই সদস্য অভিযোগ করেন, বিলটি নিয়ে আলোচনার জন্য সংসদীয় কমিটির বৈঠকের নোটিস তিনি ঠিক সময়ে পাননি। নিয়ম অনুযায়ী কার্যপত্রও পাননি।

তিনি বলেন, “মাননীয় স্পিকার, আপনি সংসদের সভাপতি, বিষয়টি আপনার অবগিতর জন্য জানালাম। দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিল। আমি নোটিস পেলাম আগের দিন বিকেলে। বললো কার্যপত্র বৈঠকের দিন দুপুর ১২টার সময় পাঠাবে।”

সংশোধনী প্রস্তাব তোলার সময় জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, “অর্থমন্ত্রী এখন কম কথা বলেন। আগে তিনি এমন ছিলেন না। তিনি কথা বললে আমরা এডুকেটেড হই।”

তবে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের এসব কথার জবাবে অর্থমন্ত্রী কিছু বলেননি।