Sentencing সংক্রান্ত পরিবর্তনের সূচনা : রাষ্ট্র বনাম নালু মামলা

আবদুল্লাহ আল মামুন:

“There is an old legend that on one occasion God prayed, and his prayer was ‘Be it my will that my justice be ruled by my mercy.” -Benjamin Cordozo

Nalu vs State-একটি বিখ্যাত এবং অবশ্য পাঠ্য একটি মামলা। ২০১২ সালে আপীল বিভাগ কর্তৃক এই মামলার রায় প্রদান করা হয়। এই মামলাটিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড প্রদান বা মৃত্যুদণ্ডের শাস্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তরের জন্য অসংখ্য মামলায় রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই মামলায় ৪টি Mitigating Circumstance আপীল বিভাগ উল্লেখ করেছেন এবং সেগুলো অভিযুক্তের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তরের জন্য আদালত ব্যবহার করেছেন।তাই,এই রায়টি কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং প্রকোপনমূলক পরিস্থিতির (Mitigating Circumstance) ব্যবহারকে অনেকটা সুসংহত করেছে।

শাস্তি নির্ধারণ কোন ক্ষণিকের চিন্তা বা সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। বরং, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থেকে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত মামলার পরিস্থিতি অনুযায়ী সমানভাবে চিন্তার এবং প্রয়োগের বিষয়। আশার কথা হলো আমাদের কোন সেন্টেন্সিং গাইডলাইন না থাকলেও আমাদের মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট অসংখ্য মামলায় বিচারক এবং আইনজীবির চিন্তার ও প্রয়োগের গতিপথ নির্ধারণ করেছেন যার সর্বশেষ নিদর্শন হলো আতাউর রহমান মামলা। নালুর মামলাটি এই যাত্রায় অসংখ্য চমৎকার রায়ের মধ্যে একটি। সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি পড়ার জন্য। এই লেখাটিও আমার প্রবেশন সংক্রান্ত বইয়ের অংশ।

পড়ার সময় জানবেন আপনি আমাদের আপীল বিভাগের রত্নখচিত একটি রায় পড়ছেন। একই সাথে আপনাকে ভাবার অনুরোধ করবো যে, আপনি অনুধাবন করার চেষ্টা করবেন একজন বিচারক রায়ের আগে বা পরে কতটুকু পরিশ্রম করে একটি রায় প্রস্তুত করেন।

এই রায়ের সাথে আমার নিজস্ব ভাবনা বা পর্যবেক্ষণ রয়েছে। সেগুলো ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী।

Nalu vs State,17BLC (AD) (2012) 204=1ALR(AD)(2012) 222 (Syed Mahmud Hossain J),Date of Judgment- 22nd July,2012 (From the judgment and order dated 10th November,2009 passed by the High Court Division in Death Reference No.78 of 2005 with Jail Appeal No.610 of 2005) (বর্তমান মাননীয় প্রধান বিচারপতি)-এই মামলার ঘটনা অনুযায়ী ১৩/০৫/২০০৫ খ্রিঃ তারিখ ভিকটিম এমরান আলী বিকাল ০৫:৩০ ঘটিকার সময় প্রতিবেশী আতাব আলীর বাড়িতে টেলিভিশন দেখছিলেন।এ সময় তার কাজিন নালু এবং রুবেল (অভিযুক্ত) আম খাওয়ার কথা বলে তাকে ডেকে নিয়ে যান। এরপর তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরদিন দুপুর ১২:০০ ঘটিকার দিকে অভিযুক্ত নালুর ভুট্টা ক্ষেতে ঘাস ও ভূট্টা পাতা দিয়ে ঢাকা অবস্থায় এমরান আলির লাশ পাওয়া যায়। লাশের সাথে ২টি আমও পাওয়া যায়। এলাকার লোকজন এসে লাশ দেখেন।এজাহারকারী অভিযুক্ত নালু এবং রুবেলকে সন্দেহ করেন।কারণ,তারা ডেকে নিয়ে যাওয়ার পরে ভিকটিমের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।মামলা দায়েরের পরে পুলিশ উভয় অভিযুক্তকে আটক করে এবং ভিকটিমের শরীরে থাকা স্বর্ণের চেইন উদ্ধার ও জব্দ করা হয়।অভিযুক্ত নালু ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন।

পুলিশ তদন্ত করে শুধুমাত্র নালুর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করলে এজাহারকারী আদালতে নারাজী আবেদন দাখিল করেন। আদালত অধিকতর তদন্তের নির্দেশ প্রদান করলে পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মানুনুর রশীদ, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ডিবি, মানিকগঞ্জ তদন্ত সম্পাদন করে অভিযুক্ত নালু এবং রুবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত, মানিকগঞ্জ উভয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। আদালত অভিযুক্ত নালুকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং ৩০২ ধারায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন।অপর অভিযুক্ত রুবেলকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। অভিযুক্ত নালু হাইকোর্টে আপীল দায়ের করেন। হাইকোর্ট মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পরীক্ষা করেন এবং নালুর মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি বহাল রাখেন। নালু আপীলেট ডিভিশনে আপীল দায়ের করেন।

আপীল বিভাগে অভিযুক্তের পক্ষে বিজ্ঞ কৌশুলী জনাব এবিএম বায়েজিদ বলেন-অভিযুক্তের ১৬৪ ধারার বক্তব্য স্বেচ্ছাপ্রণোদিত বা সত্য কোনটিই নয়। এই ১৬৪ ধারার বক্তব্য নির্যাতন এবং বল প্রয়োগের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সরাসরি (Direct Evidence) কোন সাক্ষ্য নেই এবং সরাসরি সাক্ষ্যের অনুপস্থিতিতে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা ন্যায়ভ্রষ্টতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী না থাকায় অভিযুক্তকে খালাস প্রদান করা যথাযথ ছিলো।সবশেষে তিনি বলেন-অভিযুক্তের প্রতি মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে কঠোর সাজা আরোপ করা হয়েছে।অভিযুক্তের পূর্ব অপরাধের বা দণ্ডিত হওয়ার (PC/PR) কোন বিবরণ/রেকর্ড নেই।শাস্তি প্রদান কালে দণ্ডিত অভিযুক্তের বয়স বিবেচনা করা হয়নি।সবশেষে,আদালত অভিযুক্তকে খালাস না দিয়ে দোষী সাব্যস্ত করলে করলে অভিযুক্তের বয়স বিবেচনায় মৃত্যুদণ্ডের শাস্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে কমানোর জন্য তিনি বিনীত প্রার্থনা জানান।

অন্যদিকে,রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি এটর্ণী জেনারেল জনাব মোঃ সোহরাওয়ার্দী (বর্তমানে, মাননীয় বিচারপতি হাইকোর্ট ডিভিশন,সুপ্রীম কোর্ট)হতে দাবী করা হয় অভিযুক্তের ১৬৪ ধারার বক্তব্য শুধুমাত্র সত্যই নয়,বরং স্বেচ্ছাপ্রণোদিত।দোষ স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করার পূর্বে সকল আইনগত শর্তসমূহ পালন করা হয়েছে।রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীগণ প্রমান করেছেন যে,আম খাওয়ার ছলে অভিযুক্ত নালু ভিকটিম এমরানকে পি.ডব্লিউ-৬ আতাব আলীর বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং মামলার রেকর্ডে এমন কিছুই নেই যা হতে প্রতীয়মান হতে পারে যে, ভিকটিমের লাশ পাওয়ার পূর্বে ভিকটিম অভিযুক্ত থেকে পৃথক হয়েছিলেন। অর্থাৎ, অভিযুক্ত নালু ব্যতীত অন্য কেউ ভিকটিমের মৃত্যু ঘটিয়েছেন।পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য অনুযায়ী সুস্পষ্ট যে,ভিকটিমকে অভিযুক্তই হত্যা করেছিলেন। সুতরাং,রাষ্ট্রপক্ষ হতে অভিযুক্তের শাস্তি বহাল রাখার জন্য আবেদন জানানো হয়।

অধঃস্তন আদালত ও হাইকোর্টের রায় পর্যালোচনায় আপীল বিভাগ উভয় আদালত কর্তৃক অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা সঠিক মর্মে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। আপীল বিভাগ অভিযুক্তের ১৬৪ ধারার দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী এবং সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের সাক্ষ্য পর্যালোচনা করেন।পর্যালোচনায় আপীল বিভাগের নিকট ১৬৪ ধারার বক্তব্য স্বেচ্ছাপ্রণোদিত এবং সত্য মর্মে প্রতীয়মান হয়েছিলো। অভি- যুক্তের পক্ষ থেকে ঘটনা সংঘটনের সময় অভিযুক্ত শিশু ছিলেন মর্মে দাবী করা হয়।এই বিষয়ে আদালত লক্ষ্য করেন যে,৩৪২ ধারার পরীক্ষার সময় অভিযুক্ত তার বয়স বলেছিলেন ১৭ বছর। কিন্তু,১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য প্রদানের সময় বয়স বলেছিলেন ২২ বছর। এই বিষয়গুলো পর্যালোচনায় আদালত ঘটনা সংঘ- টনের সময় অভিযুক্ত শিশু ছিলেন না মর্মে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। তাই, অভিযুক্ত নালু শিশু আইনের সুবিধা পাননি।

আপীল বিভাগ অতঃপর এই মামলার Aggravating এবং Mitigating Circumstances বিবেচনা করেন।প্রথমেই আদালত অভিযুক্তের বয়স বিবেচনা করেন। আদালত লক্ষ্য করেন অপরাধ সংঘটনের সময় অভিযুক্ত অনেক বেশি তরুণ (Very young) ছিলেন। অর্থাৎ,অভিযুক্ত সদ্য কৈশোরকাল পার হয়ে তারুণ্যে পদার্পণ করেছিলেন।অভিযুক্তের Previous Conviction বা Previous Record (PC/PR) ছিলো না। অর্থাৎ,অভিযুক্ত পাকা/ঝানু (Veteran) কোন অপরাধী ছিলেন না।

আপীল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পক্ষে এবং বিপক্ষে মতামত সম্বলিত Gregg vs Georgia, (1976) 428 US 153 মামলার সিদ্ধান্তকে বিবেচনা করেন। এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডের স্বপক্ষে Majority Judgment লিখেন Justice Stewart. রায়ে বলা হয়েছিলো-

“.. But we are concerned here only with the imposition of capital punishment for the crime of murder, and when a life has been taken deliberately by the offender, we cannot say that the punishment is invariably disproportioante to the crime. It is an extreme sanction, suitable to the most extreme of crimes.

we hold that death penalty is not a form of punishment that may never be imposed, regardless of the circumstances of the offence, regardless of the character of the offender and regardless of the procedure followed in reaching the decision to impose it.”

Gregg vs Georgia-মামলায় Minority Judgment লিখেন Justice Brennan। তার মতামতে বলেছিলেন-“… Death is not only an unusually severe punishment, unusal in its pain,in its finality and in its enormity, but it serves no penal purpose more effectively than a less severe punishment,therefore,the principle inherent in the clause that prohibits pointless infliction of excessive punishment when less severe punishment can adequately achieve the same purposes invalidates the punishment. The fatal constitutional infirmity in the punishment of death is that it treats ‘members of the human race as non-humans, as objects to be toyed with and discarded. It is thus inconsistent with the fundamental premise of the clause that even the vilest criminal remains a human being possessed of common human dignity.”…..I, therefore,would hold, on that ground alone, that death is today a cruel and unusal punishment prohibited by the clause,” Justice of this kind is obviously no less shocking than the crime itself, and the new official murder,far from offering redress for the offense committed against society,adds instead a second defilement to the first.”

ফাঁসির দণ্ড বা Capital Punishment প্রদানের ক্ষেত্রে আপীল বিভাগ রায়ে Gregg vs Georgia রায়ের Minority পর্যবেক্ষণ বিবেচনা করেন।যুক্তরাষ্ট্রের অষ্টম সংশোধনীতে বলা হয়েছে-“ Excessive bail shall not be required, nor excessive fines imposed, nor cruel and unusal punishments inflicted”। এই রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মতামত অনুযায়ী যুক্তিযুক্ত ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দণ্ড প্রদান করতে হবে। অন্যদিকে, লঘিষ্ঠ মতামত অনুযায়ী সর্বোচ্চ দণ্ড মানুষের জন্য অবমাননাকর। কারণ,এই দণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।ফলে,মৃত্যুদণ্ড প্রদান যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী অনুযায়ী অসাংবিধানিক।মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা উচিত কি উচিত নয় বা মৃত্যুদণ্ড আদৌ থাকা উচিত কি উচিত নয়-এটি অত্যন্ত বিতর্কিত বিষয়। বিভিন্ন দেশে আইনের প্রয়োগ ক্ষেত্র অনুযায়ী এই ভাবনা বা প্রয়োগ ভিন্ন হয়। এই রায় উল্লেখ করে আমাদের আপীল বিভাগ মূলতঃ এই রায়ের সংখ্যা লঘিষ্ট মতামত বিবেচনা করেছেন। আদালত বলেছেন-“ Death is irremediable. Death is unknownable, it goes beyond the world.”

আদালতের এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, কঠোর দণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে আদালত দণ্ডের প্রকৃতি, ফলাফল বিবেচনা করবেন।শাস্তি অবশ্যই আদালত “ন্যায় বিচার”-এর নিরিখে নির্ধারণ করবেন।শাস্তি নির্ধারণের সময় আদালতকে অবশ্যই সমানভাবে ভিকটিম এবং অভিযুক্তের প্রতি ন্যায়বিচার হলো কিনা- তা বিবেচনা করতে হবে। অর্থাৎ,শাস্তি শুধুমাত্র অপরাধের (Crime Test) উপর নির্ভর করবেনা। বরং,শাস্তি প্রদানের সময় অভিযুক্তের বিষয়ও (Criminal Test) বিবেচনা করতে হবে।

আপীল বিভাগ এই মামলায় পৃথকভাবে প্রকোপনমূলক পরীক্ষা (Crime Test -Aggravating Circumstance), প্রশমনমূলক পরীক্ষা (Criminal Test-Mitiigating Ciucumstance), বিরল থেকে বিরলতর (Rarest of Rare Test/comparative proportionality test (impact of offence on society,state etc) করেননি। Crime Test, Criminal Test এর ধারণা আমাদের আইনে পূর্ব থেকেই ছিলো। কিন্তু, সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রয়েছে এমন মামলায় Rarest of Rare Test বিবেচনা করার ধারা ভারতের আদালতে প্রচলিত ছিলো। আমাদের আদালতগুলো সরাসরি Crime Test, Criminal Test নামে এটি না করলেও রায়গুলোতে এই বিষয়গুলো বিবেচনা বা আলোচনা থাকে।শাজনীন হত্যা মামলার (Syed Sajjad Mainuddin Hasan vs State, 70 DLR (AD) (2018) 70, (Nazmun Ara Sultana J) রায় অনুয়ায়ী আপীল বিভাগ Crime Test (Aggravating Circumstnace), Criminal Test (Mitigating Circum- stance), Rarest of the Rare Test (R-R Test) বিবেচনা করেছিলেন।

শাস্তি প্রদান সম্পর্কে সম্প্রতি প্রকাশিত Ataur Mridha alias Ataur Petitioner Vs The State, 15 SCOB [2021] (AD)1, CRIMINAL REVIEW PETITION NO.82 OF 2017(From the judgment and order dated 14.02.2017 passed by this Division in Criminal Appeal No.15 of 2010),Date of Judgment-01.12.2020- মামলায় আপীল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে বলেছেন-

“There is no guidance to the Judge in regard to selecting the most appropriate sentence of the cases. The absence of sentencing guidelines is resulting in wide discretion which ultimately leads to uncertainly in awarding sentences. A statutory guideline is required for the sentencing policy. Similarly, a properly crafted, legal framework is needed to meet the challenging task of appropriate sentencing. The judiciary has enunciated certain principles such as deterrence, proportionality, and rehabilitation which are needed to be taken account while sentencing. The proportionality principle includes factors such as mitigating and aggravating circumstances. The imposition of these principles depends on the fact and circumstances of each case. The guiding considerations would be that the punishment must be proportionate. The unguided sentencing discretion led to an unwarranted and huge disparity in sentences awarded by the courts of law. The procedure prescribed by law, which deprives a person of life and liberty must be just, fair and reasonable and such procedure mandates humane conditions of detention preventive or punitive. The main aim of punishment in judicial thought, however, is still the protection of society and the other objects frequently receive only secondary consideration when sentences are being decided. While deciding on quantum of sentence as accused getting away with lesser punishment would have adverse impact on society and justice system. Sentencing for crimes has to be analysed on the touchstone of three tests viz. crime test, criminal test and comparative proportionality test.

The legislature defines the offence with sufficient clarity and prescribes the outer limit of punishment and a wide discretion in fixing the degree of punishment within that ceiling is allowed to the Judge.On balancing the aggravating and mitigating circum- stances as disclosed in each case, the Judge has to judiciously decide what would be the appropriate sentence. In judging an adequate sentence, the nature of the offence, the circumstances of its commission, the age and character of the offender, the injury to the individuals or to the society, whether the offender is a habitual,casual or a professional offender, affect of punishment on the offender,delay in the trial and the mental agony suffered by the offender during the prolonged trial, an eye to correction and reformation of the offender are some amongst many factors that have to be taken into consideration by the Courts. In addition to thosefactors, the consequences of the crime on the victim while fixing the quantum of punishment because one of the objects of the punishments is doing justice to the victim. A rational and consistent sentencing polices requires the removal of several deficiencies in the present system. An excessive sentence defects its own objective and tends to undermine the respect for law. On the other hand, an unconscionably lenient sentence would lead to a miscarriage of justice and undermine the people’s confidence in the efficacy of the administration of criminal justice. Sentencing process should be stern where it should be, and tempered with mercy where it warrants to be, otherwise departure from just desert principle results into injustice (State of Punjab V. Rakesh Kumer, AIR 2009 SC 891). In Criminology sentencing is largely thought to have four purposes:retributive,rehabilitation,deterrence and incapacitation. Justice Krishna Iyer observed that sentencing is a means to an end, a psycho-physical panacea to cure the culprit of socially dangerous behaviour and hence the penal strategy should strike a balance between sentimental softness towards criminal, masquerading as progressive sociology and terror-cum-torment-oriented sadistic handling of criminal, which is the sublimated expression of judicial severity, although ostensibly imposed as deterrent to save society from further crimes. (Krishna Iyer J. perspectives in criminology, law and social change.). One of the prime objectives of the criminal law is imposition of an appropriate, adequate, just and proportionate sentence commensurate with the nature and gravity of the crime and the manner in which the crime is done.”

সুতরাং,এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপীল বিভাগ শাস্তি নির্ধারণকালে সাধারণ বিবেচনাসমূহ উল্লেখ করেছেন যা আপীল বিভাগসহ সকল অধঃস্তন Sentencing Court অনুসরণ করতে বাধ্য।আদালত Rarest of the Rare Test (R-R Test) এর বিষয় সরাসরি উল্লেখ করেননি।Rarest of the Rare Test (R-R Test) শুধুমাত্র সর্বোচ্চ দণ্ড রয়েছে এমন মামলার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।আদালত প্রকারান্তরে Comparative Proportionality Test এর বিষয় উল্লেখ করেছেন। এই তত্ত্ব অনুযায়ী শাস্তি হবে অপরাধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অর্থাৎ, শাস্তি হবে অপরাধীর সংঘটিত অপরাধ এবং ভিকটিম, সমাজ, রাষ্ট্রের উপর অপরাধের প্রভাব এবং অপরাধীর বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে। সুতরাং,সকল মামলার ক্ষেত্রেই আপীল বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্তমানে Crime Test, Criminal Test and Comparative Proportionality Test করতে হবে। আদালত সুচিন্তিত ভাবেই ভারতীয় Rarest of the Rare Test (R-R Test) এর উল্লেখ করেননি।কারণ, ভারতের আইনে হত্যাকাণ্ডের সাধারণ শাস্তি হলো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা যায়। এর বাইরে আদালত Fixed Time Imprisonment প্রদান করে থাকেন। অন্যদিকে, আমাদের আইন অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের সাধারণ শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়ে থাকে। উপরোক্ত রায়ের মাধ্যমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সংক্রান্ত বিষয়ে আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে ২ ভাগে ভাগ করে দিয়েছেন;যা পৃথক অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই মামলায় আদালত বরং সকল ধরণের মামলার ক্ষেত্রে শাস্তি প্রদানের সময় সকল আদালতের আলোচনা বা সিদ্ধান্তের ভিত্তিগুলো কি হবে তা নির্ধারণ করেছেন।এই বিবেচনায় আদালত অপরাধ, অপরাধী, ভিকটিম,সমাজ, রাষ্ট্রকে সমানভাবে গুরুত্ব প্রদান করেছেন।

Crime Test (Aggravting Circumstance): প্রতিটি মামলায় সংশ্লিষ্ট অপরাধ হলো প্রথম Aggravating Factor.নালুর মামলায় আপীল বিভাগের মতে একমাত্র Aggravating Circumstance হলো অপরাধ স্বয়ং(Offence itself)।এই মামলায় তাৎক্ষণিক টাকার প্রয়োজন ভিকটিমের গলায় থাকা চেইন দিয়ে মেটানোর জন্য অভিযুক্ত ভিকটিমকে হত্যা করেন। ভিকটিমের স্বর্ণের চেইনটি অভিযুক্তের নিকট থেকে উদ্ধার করা হয়েছিলো।এই বিষয়গুলো ছাড়া আর কোন প্রকোপনমূলক পরিস্থিতি এই মামলায় নেই। অভিযুক্ত সামান্য টাকার প্রয়োজনে লোভের বশে ভিকটিমকে হত্যা করেছেন। ভিকটিমের সাথে অভিযুক্তের কোন শত্রুতা বা কোন বিষয়ে বিরোধ ছিলো না। ভিকটিম তাকে অপরাধ করার বিষয়ে প্ররোচনা দেননি। অর্থাৎ,কোন ধরণের প্ররোচনা ব্যতীতই অভিযুক্ত বিনাকারণে ভিকটিমকে হত্যা করেছেন।সুতরাং,এই মামলার Crime Test ১০০%।

Criminal Test (Mitigating Circumstance): আদালত এই মামলায় Criminal Test (Mitigating Circumstance)তথা অভিযুক্তের বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করেছেন। আদালতের বিবেচনায় এই মামলার Criminal Test (Mitigating Circumstance) নিম্নরূপ-

  1. a) The condemned-prisoner has no significant history of prior criminal activity;
  2. b) Youth of the condemned –prisoner at the time of commission of the offence.
  3. c) Record reveals that the condemned-prisoner would not be likely to commit acts of violence if released.
  4. d) Confinement of the condemned-prisoner in the condemn cell from 09-06-2005 till date i.e. for nore than 7 years during which period the sword of death has been hanging on his head.

আদালতের মতে এই মামলায় প্রথম প্রশমনমূলক পরিস্থিতি হলো অভিযুক্তের কোন Previous Conviction (PC), Previous Records (PR) ছিলো না। আদালত এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানা থেকে কোন প্রতিবেদন তলব করেননি। স্পষ্টতঃ যে, অভিযোগপত্রে উল্লেখিত PC/PR- Nill-কে আদালত বিবেচনা করেছেন। অভিযুক্ত সম্ভবতঃ এই মামলার কোন পর্যায়ে জামিন লাভ করেননি। ফলে, বিচারের সম্পূর্ণ সময় কারাগারে থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই অভিযুক্তের পক্ষে কোন অপরাধে জড়িত হওয়া সম্ভব ছিলো না। কিন্তু, অভিযুক্ত জামিন লাভ করে থাকলে এই বিষয় Mitigating Circumstance হিসেবে বিবেচনার পূর্বে অবশ্যই জামিনে থাকাকালীন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোন দায়ের হয়েছি কিনা বা তিনি নতুন করে কোন অপরাধে জড়িত হয়েছেন কিনা বা কোন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন কিনা -তা রিপোর্ট আকারে তলবের এবং বিবেচনার সুযোগ ছিলো। রিপোর্ট তলব করার বিষয়ে আপীল বিভাগের কোন নজীর নেই। কিন্তু, যেহেতু পূর্ববর্তী অপরাধের রেকর্ড বা দোষী সাব্যস্ত না হওয়ার ইতিহাসকে Mitigating Circumstance হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, ঠিক বিপরীতভাবে, পূর্ববর্তী অপরাধের রেকর্ড বা দোষী সাব্যস্ত হওয়ার রেকর্ড থাকলে সেটি Aggravting Circumstance হিসেবে বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। বিষয়টি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বা পক্ষে বিবেচনার সুযোগ থাকায় প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অবশ্যই রিপোর্ট তলব করা উচিত।সুতরাং,আদালতের বিবেচনা মতে নিঃসন্দেহে পূর্ববর্তী অপরাধের রেকর্ড বা দোষী সাব্যস্ত না হওয়ার ইতিহাসকে Mitigating Circumstance হিসেবে বিবেচনা করে আদালত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

আদালতের মতে এই মামলায় দ্বিতীয় প্রশমনমূলক পরিস্থিতি হলো অভিযুক্তের বয়স।এটি স্বতঃসিদ্ধ বিষয় যে,অপরাধের প্রকৃতি,পরিধি নৃশংশতা অনুযায়ী অপরাধীর বয়স Mitigating Circumstance হিসেবে বিবেচিত হতে পারে ,আবার, নাও হতে পারে। এই মামলায় অভিযুক্ত একবার তার বয়স ১৭ দাবী করেছেন, আবার, ১৬৪ ধারার বক্তব্যে তার বয়স ২২ বছর মর্মে উল্লেখ করেছেন।আদালত নিঃসন্দেহ ছিলেন যে, অভিযুক্ত শিশু নন। কিন্তু, একই ভাবে আদালত বিবেচনা করেন যে, অভিযুক্ত অনেক বেশি তরুণ। সাধারণতঃ একজন অপরাধীর বয়স যত কম হয় তার সংশোধনের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ছাড়া একজন তরুণ অপরাধীর উপর মৃত্যুদণ্ড আরোপ সমীচিন নয়।একজন তরুণের অপরাধ এবং একজন মধ্য বয়সী ব্যক্তির অপরাধ একই নয়। একজন তরুণ অনেক সময় তার বয়সের কারণে ভুল করতে করতে পারেন,অপরাধে জড়াতে পারেন।কিন্তু, একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তি বা পরিণত বয়সী ব্যক্তি তার বয়সের কারণে অনেক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যান। এ কারণে একজন মধ্য বয়সী বা পরিণত ব্যক্তি অপরাধ করলে আদালত সেটিকে গুরুতরভাবে দেখেন।প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হলো, এই ধরণের অপরাধীর অপরাধের কারণে তাকে সমাজ থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ জরুরী নাকি তাকে চিরতরে অপসারণ জরুরী নাকি তাকে সংশোধন করে সমাজে ফিরিয়ে দেওয়া জরুরী? সেক্ষেত্রে সমাজ তাকে গ্রহণ করবে কিনা-সেটিও বিবেচনার বিষয়। একই ভাবে, তার অপরাধের প্রেক্ষিত এবং তার অনুতপ্ত অবস্থাও আদালত বিবেচনা করতে পারেন। আদালত যদি মনে করেন অপরাধীকে চিরতরে অপসারণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন জরুরী, তবে,মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে পারেন। যদি চিরতরে অপসারণ জরুরী না হয়,তবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে তাকে সংশোধনের সুযোগ দিতে পারেন। সে সংশোধিত হলে বা সমাজে ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত হলে কারা কর্তৃপক্ষ তার বিষয়টি বিবেচনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করতে পারেন। অপরাধী সমাজ বা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি না হলে শাস্তি প্রদানকারী আদালতের মতামত গ্রহণ করে (ভারতে এটা বাধ্যতামূলক) নির্বাহী বিভাগ তাকে মুক্তি দিতে পারেন। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পরিমাণ কারাবাস মুক্তির বিষয় বিবেচনার জন্য যথেষ্ট নয়।

সুতরাং,আদালত যথার্থ ভাবেই অভিযুক্তের বয়সের বিষয়টি বিবেচনা করেছেন। একজন তরুণ তার প্রথমবারের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির পরিবর্তে আদালতের অনুকম্পা চাইতে পারেন এবং এই মামলায় আদালত সেটিই বিবেচনা করেছেন।

আদালতের মতে এই মামলায় তৃতীয় প্রশমনমূলক পরিস্থিতি হলো অভিযুক্তের পুনরায় অপরাধ না করার সম্ভাবনা। আদালত বলেছেন- (c)Record reveals that the condemned-prisoner would not be likely to commit acts of violence if released. আদালত ঠিক কি কি বিষয় বিবেচনায় অভিযুক্ত মুক্তি পেলে পুনরায় অপরাধ করবেন না মর্মে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন এবং এই বিষয়টিকে Mitigating Circumstance হিসেবে বিবেচনা করেছেন-তা স্পষ্ট নয়।আদালত কোন কর্তৃপক্ষ থেকে প্রতিবেদন তলব করেননি। সম্ভবতঃ অভিযুক্ত সম্পূর্ণ সময় কারাগারে থাকায় আদালত এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। ভারতে এই বিষয়ে প্রবেশন অফিসার এবং কারাগার থেকে প্রতিবেদন তলব করা হয়। প্রবেশন অফিসার বা কারাগারের প্রতিবেদনে এই বিষয়ে উল্লেখ থাকে। কারাগারে থাকাকালীন অভিযুক্ত কারাবিধি ভঙ্গ করলে সেটিকে Aggravating Circumstance এবং কারাবিধি ভঙ্গ না করলে সেটিকে Mitigating Circumstance হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সুতরাং,পুনরায় অপরাধ না করার সম্ভাবনা বিষয়ে প্রতিবেদন তলবের অবকাশ রয়েছে। তথাপি, অভিযুক্তের ক্ষেত্রে এই বিষয় বিবেচনা করে আদালত একটি নতুন যুক্তি বা কারণের উদ্ভব করেছেন; যা অবশ্যই অনুসরণযোগ্য।

আদালতের মতে এই মামলায় চতুর্থ প্রশমনমূলক পরিস্থিতি হলো অভিযুক্তের ৭ বছরের উপরে কনডেম সেলে মৃত্যুযন্ত্রণায় থাকা। অধঃস্তন আদালত মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত একজন অভিযুক্ত সাধারণ বন্দীদের সাথেই থাকেন। কিন্তু, মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হলে তাকে সাধারণ সেল থেকে কারাবিধি অনুযায়ী কনডেম সেলে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযুক্তকে সেখানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সেখানে প্রতিটি মুহুর্ত মৃত্যুর আশঙ্কায় কাটাতে হয়। সর্বক্ষণ অনুভব করতে হয় ঘাঁড়ের চারপাশে ফাঁসির দড়ির অস্তিত্ব। এই অনুভূতির মধ্য দিয়ে যিনি গমন করেননি তার পক্ষে কখনোই এই অনুভূতি বা কষ্ট অনুধাবন করা সম্ভব নয়। কনডেম সেলে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাটানো ৭ বছরকে এই মামলায় Mitigating Circumstance হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে এবং এটি একটি মানদণ্ড হয়ে গিয়েছে।শুধুমাত্র এই একটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে শাস্তি পরিবর্তন করা যায় না।বরং,এই উপাদানের সাথে যখন অন্য কয়েকটি Mitigating Circum- stance যুক্ত হয়, তখনই এই উপাদানকে ব্যবহার করা যায়। এই মামলার নজীর হতে পরবর্তী অসংখ্য মামলায় ৭ বছর কনডেম সেলে কাটানোকে অভিযুক্তের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তরের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

উপরোক্ত কয়েকটি বিষয় ছাড়াও এই মামলায় আরো কিছু বিষয় Mitigating Circumstance হিসেবে বিবেচনার সুযোগ ছিলো। এই মামলায় অভিযুক্ত ১৬৪ ধারায় অপরাধ স্বীকার করেছিলেন। অভিযুক্তের ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তি প্রদান পরিস্থিতি সাপেক্ষে Mitigating Circumstance হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে, এই মামলায় অভিযুক্ত অপরাধের জন্য অনুতপ্ত ছিলেন কিনা সেটি স্পষ্ট নয়। শুধুমাত্র ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তি নয়, বরং, এর সাথে অভিযুক্তের অনুতপ্ত অবস্থা যুক্ত হলে সেটি Mitigating Circumstance হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কারণ, অপরাধী তার অপরাধের জন্য অনুতপ্ত না হলে,তার দ্বারা পুনরায় অপরাধ করার সম্ভাবনা থেকে যায়। যেমন- জ়েএমবি কর্তৃক দুই বিচারক হত্যা মামলা। উক্ত মামলায় অভিযুক্তরা অপরাধ স্বীকার করেছিলেন।কিন্তু, উক্ত স্বীকারোক্তি ছিলো আরো নির্মমতা এবং দাম্ভিকতা প্রদর্শনের জন্য। তারা অপরাধ করে বরং, উল্লশিত ছিলেন এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের অপরাধ হতে নিবৃত হওয়ার কোন সম্ভাবনা ছিলো না। অর্থাৎ, তারা অপরাধের পুনরাবৃত্তি যেমন করবেন তেমনি তারা সংশোধনেরও অযোগ্য ছিলেন। এই মামলায় অভিযুক্তের আইনজীবি তার বক্তব্যে ১৬৪ ধারার বক্তব্যকে স্বেচ্ছায় প্রদত্ত এবং সত্য নয় মর্মে দাবী করেছিলেন। ভিন্ন কোন বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ না থাকায় তিনি সম্ভবতঃ আইনগত ভাবেই এই বক্তব্য রেখেছিলেন।একই সঙ্গে, অভযুক্তের বয়স বিবেচনায় শাস্তি কমানোর আবেদন করেছিলেন।সম্ভবতঃ এই কারণে আদালত বিষয়টি বিবেচনা করেননি। তবে, ১৬৪ ধারার বক্তব্য দৃষ্টে আদালতের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, অভিযুক্ত অনুতপ্ত ,তবে, আদালত অবশ্যই সেটিকে Mitigating Circumstance হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন।

এই মামলায় হত্যার কোন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য (Direct Evidence) ছিলো না।কিন্তু, একজন সাক্ষী ভিকটিমকে অভিযুক্ত কর্তৃক ডেকে নিয়ে যেতে দেখেছিলেন। এরপর ভিকটিমের লাশ পাওয়া গিয়েছিলো।পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য (Circumstantial Evidence) বিষয়ে Sree Rabindar Nath Roy Vs The State,1 ALR (AD)189 মামলায় বিচারপতি এস কে সিনহা Spencer,C.J. এর Sogaimuthu Padayachi Vs Emperor, AIR 1926 Madras 638 মামলায় উল্লেখ করা নীতি উল্লেখ করেছেন। আদালত বলেছেন-

“I think the answer must be that if there is other evidence to connect the accused with the death of the murdered man, a jury, or in this country a judge, may find upon circumstantial evidence that he is a murderer. But when the unexplained possession of the stolen property is the only circumstance apeearing in the evidence against an accused acharged with murder and theft, the accused can not be convicted of murder unless the Court is satisfied that possession of the property could not have been transferred from the deceased to the accused except by the former being murdered”

সুতরাং, এই মতামত অনুযায়ী হত্যার স্বপক্ষে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অন্যান্য প্রমাণ থাকা সাপেক্ষে একজন বিচারক বা জুরি পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করে হত্যাকারী সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু, হত্যা এবং চুরির দায়ে অভিযুক্ত একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে যখন শুধুমাত্র অব্যাখ্যাত চোরাই বস্তু দখলের প্রমাণ থাকে, তখন ঐ ব্যক্তিকে হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না, যদি না আদালত এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, ভিকটিমকে হত্যা করা ব্যতীত কোনভাবেই ঐ বস্তুর দখল অভিযুক্তের নিকট যেতে পারতো না। অর্থাৎ, ভিকটিমকে হত্যা করেই অভিযুক্ত ঐ বস্তুর দখল লাভ করেছেন।

উপরোক্ত মতামতের সাথে পরবর্তীতে Kallam Narayana V. Emperor, AIR 1933 Madras 233 মামলায় Reily, J. কিছুটা দ্বিমতপোষণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন-

“… there is one general rule which must never be forgetten, namely, that in making presumption of fact or in drawing inference of fact from evidence, a Judge or a Jury must always have regard to all the known facts of the case. And that they must do because they are required to decide on all questions of fact as reasonable men. When it is the duty of Judge or Jury to draw from evidence a reasonable inference, it is not their duty to find that there was no conceivable possibility other than the conclusion which they reach. It is not possible for reasonable men to conduct the afairs of life or to make judicial decisions on questions of fact with mathematical certainty.

অর্থাৎ,একটি সাধারণ নীতি আমাদের অবশ্যই ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে,যখন কোন বিচারক বা জুরি সাক্ষ্য,প্রমাণ থেকে মামলার কোন “তথ্যগত বিষয়ে” অনুমান করবেন বা সাক্ষ্যে উপস্থাপিত কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, তখন তা হতে হবে অবশ্যই উক্ত মামলায় উপস্থাপিত জ্ঞাত বিষয় সমূহ সম্পর্কে। তাদেরকে অবশ্যই এটি করতে হবে,কারণ,মামলার তথ্যগত প্রশ্নে তারা একজন সাধারণ জ্ঞান,বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।যখন উপস্থাপিত সাক্ষ্য,প্রমাণ হতে বিচারক বা জুরির দায়িত্ব হলো একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া, তখন কোনক্রমেই এটি তাদের দায়িত্ব নয় যে, এরকম কোন খুঁজে বের করা যেটিতে তারাই উপনীত হতে চেয়েছেন। একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে জীবনের স্বাভাবিক আচরণগুলো বা তথ্যগত প্রশ্নের বিষয়ে বিচারিক সিদ্ধান্তগুলো অংকের মতো নির্ভুলতায় উপনীত হওয়া সম্ভব নয়। মূল কথা হলো, উপস্থাপিত সাক্ষ্য, প্রমাণ হতে বিচারক নিজেই কোন তৃতীয় তথ্য বা মামলার (Third Case or Fact) বের করে নিবেন না বা এরকম কিছুর দিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাবেন না, যার দিকে একজন সাধারণ জ্ঞান, বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেনা। একজন সাধারণ মানুষ অংকের মতো নির্ভুলতায় জীবন যাপন করেন না বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন না। সুতরাং,একজন বিচারককেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় মামলায় জ্ঞাত তথ্য, প্রমাণগুলোর উপর নির্ভর করতে হবে। তিনি পূর্ব থেকেই কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে সেদিকে ধাবিত হবেন না বা নিজ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য একজন সাধারণ মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রজ্ঞার অতিরিক্ত কোন কিছু করবেন না।

Reily, J. উপরোক্ত মামলায় আরো বলেছেন-

“.. An accused person was in possession of stolen property soon after it was stolen is most commonly of use in theft cases. But the possession by itself is never sufficient evidence that the possessor was the thief. There may be many conceivable explanations when the accused person was in possession of stolen property. He might have been induced by the real thief innocently to take care of the stolen things; he might have been induced by the real thief innocently to take care of the stolen things; he might have been compelled to do so under a threat of violence; he might have been the real thief drop them or he might have found them lying on the ground, and in either case he might have intended to misappropriate them or merely to keep them until he as curtained who was their owner; he might have himself stolen that from the original thief or have robbed or murdered the original thief in order to get possession of them. There may be a hundred possible explanations other than that he himself was the original thief. But it is not for the Judge or Jury to invent or imagine such explanations. It is for the accused person to give his explanation, if he has one. If he gives no explanation, then it is for the Judge or Jury as reasonable men to draw an inference from the proved facts after considering all the circumstances”.

অর্থাৎ, চুরির পরপর কোন অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছে চোরাই বস্তু পাওয়ার বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রে চুরির মামলায় ব্যবহৃত হয়। কিন্তু, শুধুমাত্র চোরাই বস্তু দখলে থাকা তাকে চোর হিসেবে সাব্যস্ত করে না। এই বিষয়ে অসংখ্য গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা থাকতে পারে।তাকে প্রকৃত চোরেরা অবগত না করেই চোরাই বস্তুটি দখলে রাখতে, তাকে হুমকি দিয়ে বাধ্য করা হতে পারে, তার কাছে প্রকৃত চোরেরা জিনিসটি ফেলে যেতে পারে, তিনি জিনিসটি পড়ে থাকা অবস্থায় পেতে পারেন, তিনি বস্তুটি অপরাধজনক আত্মসাৎ এর উদ্দেশ্যে অথবা প্রকৃত মালিককে ফেরত দেওয়ার জন্য নিজ দখলে রাখতে পারেন, তিনি নিজেই মূল চোর থেকে জিনিসটি চুরি করতে পারেন বা মূল চোরকে রাহাজানি বা হত্যার মাধ্যমে জিনিসটি নিজ দখলে নিতে পারেন।নিজেই চোর হওয়া ব্যতীত সেখানে শতটি ব্যাখ্যা থাকতে পারে। কিন্তু, এই সম্ভাবনাগুলো কল্পনা করা বা আবিষ্কার করা বিচারক বা জুরির কাজ নয়। এই ব্যাখ্যার গুলোর কোনটি যদি থাকে,তবে,সেটা অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রদান করবেন। যদি তিনি কোন ব্যাখ্যা প্রদান করতে ব্যর্থ হন, তবে, একজন সাধারণ যুক্তি,বুদ্ধি, জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ হিসেবে বিচারক বা জুরি প্রমাণিত সকল বিষয় ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

Sree Rabindar Nath Roy Vs The State,1 ALR(AD)189 মামলায় বিচারপতি এস কে সিনহা উপরোক্ত সিদ্ধান্তসমূহ বিশ্লেষণ করে বলেছেন-

  1. By judicial pronouncements it is now settled that if the circumstantial evidence are far from satisfactory and suffered from a number of infirmity, the court is left with no option other than to acquit the accused. Circumstantial evidence must be consistent with the guilt of the accused and if the evidence is inconsistent with any other rational explanation, then there is an element of doubt of which the accused must be given benefit of doubt. The prosecution must have to prove several circumstances relied by the prosecution beyond doubt that the incriminating facts are such as to be incompatible with the innocence of the accused and incapable of explanation on any reasonable hypothesis other than that of the accused’s guilt. The chain of evidence furnished by those circumstance must be complete and leave no reasonable ground for a conclusion consistent with accused’s innocence.

অর্থাৎ,আদালতের সিদ্ধান্তসমূহ হতে এটি এখন স্বতঃসিদ্ধ বিষয় যে,যদি পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য সন্তোষজনক এবং নিখুঁত না হয়,তবে,অভিযুক্তকে খালাস প্রদান করা ছাড়া আদালতের নিকট অন্য কোন উপায় থাকবে না। পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যকে অবশ্যই অভিযুক্তের দোষীতার সাথে মানানসই হতে হবে এবং অন্য কোন যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলে সন্দেহের উদ্ভব হবে,যার সুবিধা অবশ্যই অভিযুক্তকে দিতে হবে।প্রসিকিউশনকে অবশ্যই নির্ভর করা দোষারোপমূলক পরিস্থিতিসমূহকে সন্দেহের উর্ধে এমনভাবে প্রমাণ করতে হবে যাতে প্রতীয়মান হবে যে, উক্ত পরিস্থিতিসমূহ অভিযুক্তের নির্দোষীতার দাবীর সাথে বেমানান এবং একমাত্র অভিযুক্তের দোষীতার দিকে নির্দেশ করবে। উক্ত পরিস্থিতির মাধ্যমে সৃষ্ট সাক্ষ্য সমূহ অবশ্যই সম্পূর্ণ প্রকৃতির হবে এবং অভিযুক্তের নির্দোষীতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন সিদ্ধান্তের অবকাশ রাখবে না। আদালত আরো বলেছেন-

  1. It should be remembered that in case of circumstantial evidence, the circumstances must be conclusive nature. If two inferences are possible from the circumstantial evidence, one pointing the guilt of the accused and the other also plausible, that the commission of the crime was the act of some one else, the circumstantial evidence would not warrant for conviction of the accused. Reference in this connection is Khasaba Maruti Sholke Vs The State of Maharastra, AIR 1973 SC 2474. The substance of the above arguments is that the circumstances must show that within all reasonable possibility the act must have been done by the accused. Every evidentiary circumstance is a probative link, strong or weak, must be made out with certainty. Link after link forged frimly by credible testimony may from a strong chain of sure guilt binding the accused. Each link taken separately may just suggest but when hooked on to the next and on again may manacle the accused inescapable.

অর্থাৎ,অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সমূহ চূড়ান্ত প্রকৃতির হতে হবে।পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য হতে যদি দুইটি সিদ্ধান্তের দিকে পৌঁছানোর অবকাশ থাকে,যার একদিকে অভিযুক্তের দোষীতা এবং অন্যদিকে অপরাধটি অভিযুক্ত ব্যতীত ভিন্ন কোন ব্যক্তি কর্তৃক সংঘটনের সম্ভাবনা, তবে,এক্ষেত্রে অবশ্যই পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের প্রেক্ষিতে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না। উপরোক্ত যুক্তিতর্কসমূহের সারাংশ হলো যে,পরিস্থিতিসমূহ সকল সম্ভাবনা অনুযায়ী অপরাধটি অভিযুক্ত সংঘটন করেছেন মর্মে অবশ্যই প্রদর্শন করবে। সকল সবল বা দুর্বল সাক্ষ্যগত পরিস্থিতি অবশ্যই নির্দিষ্টতার সাথে প্রমাণ করতে হবে।সাক্ষ্য প্রমাণের একের পর এক ক্রম একটি শক্তিশালী সাক্ষ্যক্রম তৈরি করবে যা অবশ্যই অভিযুক্তের দোষীতাকে প্রমাণ করবে। প্রত্যেকটি আলাদা ক্রম একটি নির্দিষ্ট বিষয়কে ইঙ্গিত করবে,কিন্তু, যখন উক্ত ক্রম পরবর্তী ক্রমের সাথে যুক্ত হবে তখন অবশ্যম্ভাবীরূপে অভিযুক্তের অপরাধ প্রমাণ করবে।

নালুর মামলাটি ছিলো Last Seen Case বা “ভিকটিমকে শেষবারের মত জীবিত দেখার মামলা”। কিন্তু, এই বিষয়ের অতিরিক্ত অভিযুক্তের দখল থেকে ভিকটিমের সোনার চেইন উদ্ধার করা হয়েছিলো।চোরাই সোনার চেইন উদ্ধার হওয়ায় অভিযুক্ত হয় ছিলেন চোর ও হত্যাকারী, নতুবা ঘটনার শিকার। রাষ্ট্র পক্ষ অভিযুক্তের দখল থেকে ভিকটিমের সোনার চেইন উদ্ধার প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ায় অভিযুক্ত আইনগত উক্ত দখল সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে বাধ্য ছিলেন। কিন্তু, অভিযুক্ত কোন ব্যাখ্যা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছেন। উপরন্তু, তিনি অপরাধ স্বীকার করে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য প্রদান করেছেন,যাতে উল্লেখ করেছেন সোনার চেইনের লোভে তিনি ভিকটিমকে ডেকে নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছিলেন এবং সোনার চেইনটি নিয়ে নিয়েছিলেন। ফলে, অভিযুক্ত কোন যুক্তি সঙ্গত ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারেননি। অভিযুক্ত ভিকটিমকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর ,ভিকটিমের লাশ পাওয়া গিয়েছিলো। অভিযুক্তের দখল থেকে ভিকটিমের চেইন উদ্ধার হওয়ায় অভিযুক্ত হয় ছিলেন হত্যাকারী;নতুবা Sree Rabindar Nath Roy Vs The State,1ALR (AD)189 মামলার আলোচনার পরিস্থিতি সমূহের শিকার। এই পরিস্থিতিগুলো আদালত তখনই বিবেচনা করতে পারতেন যখন অভিযুক্ত নিজে কোন ব্যাখ্যা প্রদান করতেন। কিন্তু, তিনি কোন ব্যাখ্যা প্রদান করেননি।পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ক্রম অনুযায়ী প্রমাণিত হয়েছিলো- অভিযুক্তই ভিকটিমকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং হত্যা করে চেইনটি নিয়ে নিয়েছিলেন। ফলে, এই মামলায় পারপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ক্রম সম্পূর্ণ এবং চূড়ান্ত প্রকৃতির ছিলো যার একমাত্র ফলাফল ছিলো সোনার চেইনের জন্য অভিযুক্ত কর্তৃক ভিকটিমের মৃত্যু সংঘটন।

Last Seen Case-এর ক্ষেত্রে অভিযুক্তের সাথে ভিকটিমকে শেষ দেখা গিয়েছিলো। অভিযুক্ত ডেকে নিয়ে যাওয়ার পরে ভিকটিমকে আর জীবিত দেখা যায়নি। সুতরাং, আইন এখানে অভিযুক্তের উপর একটি ব্যাখ্যা করার দায় চাপায়।অভিযুক্তকে ব্যাখ্যা করতে হবে ভিকটিম কিভাবে মৃত্যু বরণ করেছেন। তবে, তার পূর্বে রাষ্ট্রকে ভিকটিমের মৃত্যু, অভিযুক্তের সাথে শেষ দেখা যাওয়া, এরপর,লাশ পাওয়া প্রভৃতি প্রমাণ করতে হয়।এসব ক্ষেত্রে, ভিকটিমের শেষ দেখা যাওয়া, মৃত্যু বা লাশ পাওয়ার সময়গুলো এমন হবে যেন অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক অপরাধ করার সম্ভাবনা না থাকে। অর্থাৎ,অভিযুক্তই ভিকটিমকে হত্যা করেছেন এটি একটি সাক্ষ্য সংক্রান্ত ক্রমের মতো (Chain of Evidence) যাতে কোন একটি বিষয় অপ্রমাণিত থাকা যাবে না। কোন বিষয়ে সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হলে বা সন্দেহের তৈরি হলে তার সুবিধা অভিযুক্ত পক্ষ পাবেন। এই মামলায় উপরোক্ত বিষয় সমূহের অতিরিক্ত অভিযুক্তের দখলে ভিকটিমের চেইন পাওয়ার বিষয়ও প্রমাণ করতে হতো।অর্থাৎ, সাক্ষ্য বা প্রমাণের ক্রমটি কোনক্রমেই ছেঁড়া যাবে না। অটুট থাকতে হবে। অদৃশ্য বা অস্পষ্ট হবে না।এই মামলায় উপরোক্ত বিষয়গুলো প্রমাণিত হয়েছিলো। ফলে, ভিকটিমের মৃত্যু সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযুক্তকে ব্যাখ্যা প্রদান করতে হতো।অভিযুক্ত দোষ স্বীকার করেছিলেন এবং কোন ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারেননি। ফলে, তিনিই ভিকটিমকে হত্যা করেছিলেন মর্মে আদালতে প্রমাণিত হয়েছিলো। কিন্তু,অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়া মৃত্যুদণ্ড প্রদানের জন্য যথেষ্ট নয়। সরাসরি সাক্ষ্য না থাকায় এই মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রদানের সুযোগ ছিলো না।পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের উপরে যখন কোন মামলা প্রমাণিত হয়, তখন সাধারণ নিয়ম হলো মৃত্যুদণ্ড প্রদান না করা। ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র বা মামলার পরিস্থিতি অনুযায়ী এটি পরিবর্তনযোগ্য এবং মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা যায়।

এই মামলার অপরাধটি অভিযুক্ত তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে সংঘটন করেছিলেন। অভিযুক্তের টাকার প্রয়োজন ছিলো যা তিনি ভিকটিমের চেইন দিয়ে মেটাতে চেয়েছিলেন এবং ভিকটিমকে হত্যা করেছিলেন। পরিকল্পিত অপরাধ অবশ্যই একটি Aggravating Circumstance. পরিকল্পিত অপরাধ প্রমাণিত হলে অবশ্যই আদালত সেটিকে গুরুতর ভাবে বিবেচনা করে থাকেন। কিন্তু, বর্তমান অপরাধটি পরিকল্পনাহীন হওয়ায় এটি অবশ্যই একটি Mitigating Circumstance হিসেবে অভিযুক্তের পক্ষে বিবেচিত হতে পারে।সুতরাং, উপরোক্ত বিষয়সমূহ বিবেচনায় স্পষ্টতঃ প্রতীয়মান হয়,অভিযুক্তের পক্ষে একাধিক প্রশমনমূলক পরিস্থিতি (Mitigating Circumstance) বিদ্যমান ছিলো।সুতরাং,এই মামলায় Criminal Test (Mitigating Circumstance) ০% ছিলো না।

Rarest of the Rare Test (R-R Test): ভারতে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের জন্য Rarest of the Rare Test (R-R Test) করা হয়। Crime Test 100%, Crimainal Test 0% এবং Rarest of the Rare Test (R-R Test) 100% হলে ভারতে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। নালুর মামলায় আদালত অনেকগুলো Mitigating Circumstance উল্লেখ করেছেন। মামলাটির Crime Test ১০০% হলেও Mitigating Circumstance এর কারণে এটির Criminal Test ০% নয়।প্রতিটি মৃত্যু বা হত্যাকাণ্ড বেদনাদায়ক।কিন্তু, বর্তমান মামলার ঘটনা বিরল নয়।ফলে, আদালতের বিবেচনা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড প্রদান সমীচিন ছিলো না।মৃত্যুদণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে ভারত বিচারক কেন্দ্রিক ভাবনার পরিবর্তে সমাজ,রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে অপরাধ এবং অপরাধীকে দেখার প্রয়াস শুরু করেছে।সেক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হলো সমাজের নাগরিকরা অপরাধীকে কিভাবে নিচ্ছে, তাকে সমাজে গ্রহণ করবে কিনা বা অপরাধটি সমাজে কি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে প্রভৃতি ভাবনা।এই মামলার Rarest of the Rare Test (R-R Test) অনুযায়ী অপরাধটি বিরলতর নয়।অপরাধীর পূর্ব অপরাধের বা দোষী সাব্যস্ত হওয়ার রেকর্ড না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই নির্দিষ্ট সময় পরে হয়তো অপরাধীকে সমাজে ফেরত দেওয়া যাবে। অপরাধী সংশোধিত হয়েছে কিনা বা তার সাজা মওকুফ করে সমাজে ফেরত দেয়া হবে কিনা সে সম্পর্কে নির্বাহী বিভাগ শাস্তি প্রদানকারী আদালতের মতামত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা বা বিবেচনার বাইরে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা রয়েছে যা নির্বাহী বিভাগের ক্ষ্মতা হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন।তবে, উভয় ক্ষেত্রেই আদালত প্রত্যাশা করে বিচারিক আদালতের রায়ের মৃত্যুদণ্ড প্রদান না করার বিবেচনা সমূহ নির্বাহী বিভাগ বা মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিবেচনা করবেন;যদিও আমাদের আইনে কোন বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়নি। আতাউর মৃধার রিভিউ এর রায়ে এই সংক্রান্তে মাননীয় বিচারপতি ইমান আলী আলোকপাত করেছেন। অপরাধী যে অপরাধ করেছেন তা অবশ্যই সমাজের মানুষ ঘৃণা করবে। সামান্য কারণে অভিযুক্ত একজনের জীবন কেড়ে নিয়েছেন এটি অবশ্যই ঘৃণার যোগ্য। কিন্তু, অভিযুক্তের বয়স খুবই কম হওয়ায় তার সংশোধনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।Criminal Test অনুযায়ী এই মামলায় অনেকগুলো Mitigating Circumstance রয়েছে। ফলে, এই মামলায় Rarest of the Rare Test (R-R Test) কোনভাবেই ১০০% নয়।

Comparative Proportionality Test: Ataur Mridha alias Ataur Petitioner Vs The State,CRIMINAL REVIEW PETITION NO.82 OF 2017 মামলায় আদালত Crime Test, Criminal Test এর সাথে Comparative Proportionality Test করতে হবে মর্মে উল্লেখ করেছেন। আদালতের মতে Crime Test, Criminal Test এর উপর নির্ভর করে যথাযথ শাস্তি সম্পর্কে আদালত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় আদালত অপরাধের প্রকৃতি,অপরাধীর চরিত্র, সমাজ বা রাষ্ট্রকে আঘাত করা হয়েছে নাকি ব্যক্তিকে আঘাত করা হয়েছে,অপরাধী অভ্যাসগত, প্রফেশনাল বা সিজনাল অপরাধী কিনা,অপরাধীর উপর শাস্তির প্রভাব,বিচারে বিলম্ব এবং এর ফলে অভিযুক্তের মানসিক কষ্ট এবং এর সাথে অভিযুক্ত সংশোধনের এবং পুনর্বাসনের যোগ্য কিনা-তা আদালত বিবেচনা করবেন।এই বিষয়গুলোর অতিরিক্ত অপরাধের কারণে ভিকটিমের অবস্থা আদালত বিবেচনা করবেন।শাস্তি নির্ধারণ সম্পর্কে উপরোক্ত মামলায় আদালত বলেছেন-“ One of the prime objectives of the criminal law is imposition of an appropriate, adequate, just and proportionate sentence commensurate with the nature and gravity of the crime and the manner in which the crime is done.” সুতরাং, শাস্তি নির্ধারণের সময় অপরাধের প্রকৃতি ও গভীরতা এবং সংঘটনের প্রক্রিয়া প্রভৃতি বিবেচনা করতে হবে।

যথাযথ শাস্তি (Appropriate/ Proportionate Punishment) কেমন হবে এবং কি কি বিষয় বিবেচনা করতে হবে সে সম্পর্কে Gopal Singh V. State of Uttarakhand, (2013) 7 SCC 545; AIR 2013 SC 3048; 2013 AIR SCW 4455 মামলায় ভারতের সুপ্রীম কোর্ট বলেছেন-

  1. Just punishment is the collective cry of the society. While the collective cry has to be kept uppermost in the mind, simultaneously the principle of proportionality between the crime and punishment cannot be totally brushed aside. The principle of just punishment is the bedrock of sentencing in respect of a criminal offence. A punishment should not be disproportionately excessive. The concept of proportionality allows a significant discretion to the Judge but the same has to be guided by certain principles. In certain cases, the nature of culpability, the antecedents of the accused, the factum of age, the potentiality of the convict to become a criminal in future, capability of his reformation and to lead an acceptable life in the prevalent milieu, the effect propensity to become a social threat or nuisance, and sometimes lapse of time in the commission of the crime and his conduct in the interregnum bearing in mind the nature of the offence, the relationship between the parties and attractability of the doctrine of bringing the convict to the value-based social mainstream may be the guiding factors. Needless to emphasize, these are certain illustrative aspects put forth in a condensed manner. We may hasten to add that there can neither be a strait-jacket formula nor a solvable theory in mathematical exactitude. It would be dependant on the facts of the case and rationalized judicial discretion. Neither the personal perception of a Judge nor self-adhered moralistic vision nor hypothetical apprehensions should be allowed to have any play. For every offence, a drastic measure cannot be thought of. Similarly, an offender cannot be allowed to be treated with leniency solely on the ground of discretion vested in a Court. The real requisite is to weigh the circumstances in which the crime has been committed and other concomitant factors which we have indicated hereinbefore and also have been stated in a number of pronouncements by this Court. On such touchstone, the sentences are to be imposed. The discretion should not be in the realm of fancy. It should be embedded in the conceptual essence of just punishment.

একই মামলায় আদালতের করণীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে-

  1. A Court, while imposing sentence, has to keep in view the various complex matters in mind. To structure a methodology relating to sentencing is difficult to conceive of. The legislature in its wisdom has conferred discretion on the Judge who is guided by certain rational parameters, regard been had to the factual scenario of the case. In certain spheres the legislature has not conferred that discretion and in such circumstances, the discretion is conditional. In respect of certain offences, sentence can be reduced by giving adequate special reasons. The special reasons have to rest on real special circumstances. Hence, the duty of Court in such situations becomes a complex one. The same has to be performed with due reverence for Rule of Law, the collective conscience on one hand and the doctrine of proportionality, principle of reformation and other concomitant factors on the other. The task may be onerous but the same has to be done with total empirical rationality sans any kind of personal philosophy or individual experience or any a-priori notion.

সুতরাং, এই মামলায় Comparative Proportionality Test অনুযায়ী আমরা দেখতে পাচ্ছি, অপরাধীর অপরাধ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু, দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি কোন অভ্যাসগত বা কুখ্যাত অপরাধী ছিলেন না। অপরাধী ছিলেন একজন খুবই তরুণ এবং তার পূর্ব অপরাধের বা দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কোন রেকর্ড ছিলো না।অভিযুক্ত পরিকল্পনাহীন ভাবে অপরাধ করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের সরাসরি সাক্ষ্য ছিলো না।সুতরাং, মুহুর্তের ভুলে অপরাধ করা ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা অপরাধের গভীরতা, নির্মমতা, প্রেক্ষিত বিবেচনায় আদালতের নিকট যথাযথ শাস্তি মর্মে প্রতীয়মান হয়নি। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় আদালত অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

যাবতীয় Aggravating এবং Mitigating Circumstance বিবেচনায় আদালতের সিদ্ধান্ত হলো উপরোক্ত- “Mitigating Circumstances outweigh the aggravating circumstances.”

অভিযুক্তের আইনজীবি শাস্তির ক্ষেত্রে আদালতের অনুকম্পা প্রার্থনা করেন। আদালত বলেন-

“ ..There is no scope of mercy in a court of law. But it is not out of place to quote a few lines from ‘The Nature of Judicial Process by Benjamin Cardozo’ as under:

“ There is an old legend that on one occasion God prayed, and his prayer was ‘Be it my will that my justice be ruled by my mercy.”

উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোকে অনেকগুলো মামলায় Mitigating Circumstance হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, আবার,অনেকগুলো মামলায় করা হয়নি। কিন্তু, নিঃসন্দেহে এই মামলাটি অন্ততঃ ৪টি Mitigating Circumstance সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে এবং একই সাথে পরবর্তী অসংখ্য মামলার ক্ষেত্রে নজীর তৈরি করেছে।

লেখক : অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, কক্সবাজার।