এই টাই পরায় বিপত্তিতে পড়েছিলেন মো. সালেহ আহমেদ, শেষ অবধি থানায় গিয়ে মুচলেকা দিতে হয় তাঁকে। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশের টাইয়ের সঙ্গে মিল থাকায় আইনজীবীকে যেতে হলো থানায়

পুলিশ কর্মকর্তাদের সার্ভিস টাইয়ের সঙ্গে মিলে যায়, এমন টাই পরায় থানায় যেতে হয়েছে সুনামগঞ্জের এক আইনজীবীকে। ওই আইনজীবী জানিয়েছেন টাইটি লন্ডনে বসবাসকারী এক আত্মীয় তাঁকে উপহার দিয়েছেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) এ ঘটনার সূত্রপাত। এদিন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রতিবাদ সমাবেশ চলছিল। সেখানে আর সব বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মতো যোগ দেন আইনজীবী সালেহ আহমেদ। তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক।

সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের বেশির ভাগের পরনে আইনজীবীদের পোশাক থাকলেও কোনো কোনো আইনজীবী সাধারণ পোশাক পরে আসেন। আইনজীবী সালেহ আহমেদও পরেছিলেন সাধারণ পোশাক।

মঙ্গলবার দুপুর দুইটার দিকে সমাবেশ শুরুর কিছুক্ষণ পর সালেহ আহমেদ তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে প্রেসক্লাবের টেনিস কোর্টের মধ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমন সময় সেখানে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ কর্মকর্তা ডিএমপির রমনা জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. বায়েজীদুর রহমান তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর টাইটি কোথায় পেয়েছেন, জানতে চায় পুলিশ।

উত্তরে সালেহ আহমেদ জানান, টাইটি লন্ডনে বসবাসকারী এক আত্মীয় তাঁকে উপহার দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা এই আইনজীবীকে বলেন, এ ধরনের টাই পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁদের ঘরোয়া অনুষ্ঠানে ব্যবহার করেন।

এরপর বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না বলে জানান আইনজীবী সালেহ আহমেদ। পাশে থাকা আইনজীবীরা বলার পর তিনি টাইটি খুলেও ফেলেন। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে থানায় যেতে বলেন।

এর মধ্যে সেখানে সমাবেশে আসা আইনজীবীদের ভিড় তৈরি হয়ে যায়। উপস্থিত হাইকোর্টের আইনজীবীরা সালেহ আহমেদকে থানায় না নিতে পুলিশ কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেন। কিন্তু থানায় তাঁকে নিয়ে যেতে অনড় পুলিশ কর্মকর্তা।
পরে সালেহ আহমেদকে পুলিশের গাড়িতে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। এ সময় হাইকোর্টের দুই আইনজীবী মাহদীন চৌধুরী ও আহমদ ওবায়দুর রহমানও তাঁর সঙ্গে থানায় যান।

পুলিশ কর্মকর্তারা কী রঙের টাই পরেন, তা জানা ছিল না এবং একই রকম টাই আর কখনো পরবেন না বলে লিখিত দেওয়ার পর যোগাযোগের ঠিকানা রেখে সালেহ আহমেদকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

ঘটনায় বিব্রত সালেহ আহমেদ পরে বলেন, ‘আমার শ্বশুরবাড়ির সবাই লন্ডনে থাকেন। সেখান থেকেই টাইটি উপহার হিসেবে পেয়েছিলাম। আসলে পুলিশের টাইয়ের সঙ্গে মিল থাকার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। কী বলা উচিত বুঝছি না।’

হাইকোর্টের আইনজীবী মাহদীন চৌধুরী বলেন, থানায় গিয়ে লিখিত দেওয়ার পর সালেহ আহমেদকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। একই সঙ্গে টাইটি তারা রেখে দিয়েছে। পুলিশের এমন টাই আছে, তা তাঁরও জানা ছিল না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা মো. বায়েজীদুর রহমান বলেন, ‘আইনজীবী সালেহ আহমেদকে আমরা থানায় আসতে বলেছি। তিনি এসেছেন। তাঁকে আমরা বলেছি, এটা পুলিশ কর্মকর্তাদের সার্ভিস টাই, এটা তাঁর পরার কথা নয়। পরে একটি মুচলেকা দিয়ে তিনি চলে গেছেন।’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম আবদুল হক। তিনি বলেন, যেহেতু সালেহ আহমেদ বিষয়টি জানতেন না বলে স্বীকারও করেছেন পুলিশ তাঁকে থানায় না নিলেও পারত।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনসের) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘অফিশিয়াল’ অনুষ্ঠানে পুলিশ কর্মকর্তারা একই রকমের টাই পরে থাকেন। কেউ না জেনে একই রকম টাই পরে থাকলে সেটা ভিন্ন বিষয়। তবে কেউ যদি এই টাই পরে নিজেকে পুলিশ পরিচয় দেন, তাহলে তা হবে প্রতারণার দায়ে দণ্ডিত হওয়ার মতো অপরাধ।

সূত্র: প্রথম আলো