উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে সুপ্রিম কোর্টের ৫ দফা অভিমত
বিচারপতি (প্রতীকী ছবি)

বিচারক সংকটে আপীল বিভাগ

বিচারক সংকটে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ। বর্তমানে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে বিচারপতি রয়েছেন চার জন। স্বল্প সংখ্যক বিচারপতির মধ্যে একজন বিচারক ছুটিতে আছেন। ফলে বিচার কাজ পরিচালনায় রয়েছেন তিনজন বিচারক।

গত ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ১৫ ডিসেম্বর তাকে বিদায় সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সেদিন আপিল বিভাগে বিচারকের সংখ্যা ছিল পাঁচ জন। এ প্রেক্ষিতে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এরপরই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ছুটিতে যান আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মুহাম্মদ ইমান আলী। আর ২২তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সম্প্রতি অবসরে যাওয়ায় আপিল বিভাগের কর্মরত বিচারকের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে তিন জনে।

সংবিধানের ৯৪(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,

“প্রধান বিচারপতি (যিনি ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ নামে অভিহিত হইবেন) এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যেরূপ সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজনবোধ করিবেন, সেইরূপ সংখ্যক অন্যান্য বিচারক লইয়া সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হইবে।”

৯৫(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,

“প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকগণ রাষ্ট্রপতি কতৃ‌র্ক নিযুক্ত হইবেন।”

৯৬(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,

“এই অনুচ্ছেদের অন্যান্য বিধানাবলী সাপেক্ষে, কোন বিচারক [সাতষট্টি] বত্সর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন।”

অর্থাৎ ৬৭ বছর পূর্ণ হলেই সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি অবসরে যান।

স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারক সংখ্যার ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১৯৭২ সালের পর এবারই প্রথম এতো কম সংখ্যক বিচারপতি লক্ষণীয়। সে সময় প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে বিচারকের সংখ্যা ছিল তিন জন। পর্যায়ক্রমে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৯ সালে গিয়ে দাঁড়ায় ১১ জনে। পরে এই সংখ্যা কমে গিয়ে ২০২০ সালে দাঁড়ায় ৯ জনে। গত এক বছরে আপিল বিভাগের পাঁচজন বিচারপতি অবসরে গিয়েছেন। এই অবসরজনিত কারণে বিচারক সংখ্যা কমে গিয়ে চারজনে দাড়িয়েছে।

বিচারক সংকট প্রকট হওয়ায় এখন আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চে বিচার কাজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। করোনা সংক্রমণের পূর্বেও আপিল বিভাগের দুটি বেঞ্চে বিচার কাজ অনুষ্ঠিত হত। কিন্তু করোনা সংক্রমণের পর আপিল বিভাগের বিচার কাজ ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। তবে ২০১৭ সালের পূর্বেও আপিল বিভাগের তিনটি বেঞ্চে বিচার কাজ চলেছে।

সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান হতে দেখা যায়, ২০২০ সালে আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৫ হাজার ৩৫০টি মামলা। ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১৫ হাজার ২২৫টি। ৪৯ বছর পূর্বে ১৯৭২ সালে আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিলো ৪০৫৬ টি। ওই বছর নিষ্পত্তি হয় ১১টি মামলা।

বিচারকের সংখ্যা বেশি হলে স্বভাবতই মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তিতে প্রধান বিচারপতির হাতে একাধিক বেঞ্চ গঠন করার সুযোগ থাকে। যাতে মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়ানো সম্ভব হয়। এজন্য দ্রুতই দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ দেওয়া উচিত বলে মত বিচারাঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের।