কারাদণ্ডের বদলে ৬ মাস বিনা বেতনে গান শেখানোর 'সাজা'
আদালত (প্রতীকী ছবি)

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার শর্তে দুই শিক্ষকের প্রবেশন

এবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত এক মামলায় ব্যতিক্রমী রায় দিয়েছে রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনাল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে কেকের বদলে পাউরুটি কাটার মামলায় দোষী সাব্যস্ত দুই মাদ্রাসা শিক্ষককে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের ইতিহাস সম্পর্কে পড়াশোনাসহ পাঁচ শর্তে প্রবেশন দিয়েছেন আদালত। তবে শর্ত লঙ্ঘন করলে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

আজ মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে মামলার ১১ আসামির মধ্যে ৯ জন বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। আসামিদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া বৌরতলা দাখিল মাদরাসার সুপার আব্দুস সালাম (৫৫) ও সহকারী শিক্ষক গোলাম কবির (৪৮) দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।

প্রবেশনের শর্তগুলো নিম্নরূপ

  • প্রবেশনকালীন আসামিরা কোনো প্রকার অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবে না বা একই ধরনের অপরাধ করবেন না ও আদালত এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তলব করলে যথাসময়ে উপস্থিত হবেন।
  • একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের ইতিহাস সম্পর্কে নিজেরা পড়বেন এবং সহকর্মী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জানাবেন।
  • প্রবেশনকালীন জাতির পিতার নিজ হাতে লেখা তিনটি বই ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’ পড়বেন।
  • এছাড়া জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলো’ এবং রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা ‘একাত্তরের চিঠি’ বইগুলো পড়বেন।
  • দুই আসামি প্রবেশনে থাকার সময় ১০টি করে ফলজ ও বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ করবেন।

রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা জানান রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা অভিযুক্ত দুই আসামির প্রবেশনের শর্ত মানার বিষয়টি তদারকি করবেন। এ দুই শিক্ষকের ক্ষেত্রে তিন মাস পর পর তাদের শর্ত প্রতিপালন ও অগ্রগতি সম্পর্কে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য প্রবেশন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আরও জানান, আসামিদের প্রবেশনের সময় সন্তোষজনক হলে তাদের এই দণ্ড চাকরিসহ ভবিষ্যৎ জীবনে কোনোরূপ অযোগ্যতা বলে গণ্য হবে না বলে আদালত উল্লেখ করেছেন।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে বোয়ালিয়া বৌরতলা দাখিল মাদরাসায় কেকের পরিবর্তে পাউরুটি কাটা হয়। অনুষ্ঠানটি ফেসবুকে লাইভ প্রচার করেন শিক্ষক গোলাম কবির। ব্যঙ্গাত্মক এই আয়োজন ফেসবুকে দেখে স্থানীয়রা গোমস্তাপুর থানায় খবর দেন।

খবর পেয়ে পুলিশ দুই মাদরাসার সুপার আব্দুস সালাম ও শিক্ষক গোলাম কবিরকে আটক করে। পরে রাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলী। আজ আলোচিত এ মামলারই রায় ঘোষণা করলেন আদালত।