অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম
অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম

বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের জন্মদিন আজ

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের স্বনামধন্য আইনজীবী ও বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের জন্মদিন আজ।

বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় কিংবা বিনা বিচারে আটক অথবা মিথ্যা মামলায় অসহায় কারাবন্দীদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদানে নিস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংস্থা ‘লিগ্যাল এসিসটেন্স টু হেল্পলেস প্রিজনার্স অ্যান্ড পার্সনস (এলএএইচপি)’ -এর মাধ্যমে সহস্রাধিক নিরপরাধ বন্দি মুক্ত করা হয়েছে। মানবাধিকার বিষয়ে তাঁর এই অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতি ও উৎসাহ প্রণোদনা হিসেবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা এলএএইচপি’কে ‘সেরা দেশীয় বেসরকারী সংস্থা-২০১৯’ মনোনীত করে।

জন্মদিনের এই শুভক্ষণে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম পাঠকদের জন্য মহীয়সী এই নারীর সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হল-

জন্ম ও পরিচয়

তৌফিকা করিম কুমিল্লার একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম এম এ করিম কুমিল্লার একজন শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী ছিলেন। মা বেগম দিলদার করিম প্রয়াত হওয়ার আগ পর্যন্ত কুমিল্লার সুপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এথনিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ –এর প্রতিষ্ঠাকালীন উপদেষ্টা ছিলেন। তৌফিকা করিমের নানাও একজন শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী ছিলেন এবং যুক্তফ্রন্টের সময় তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। দাদা ছিলেন ত্রিপুরা ডিসট্রিক্টের প্রথম মুসলিম ডাক্তার।

পড়াশোনা

তৌফিকা করিম কুমিল্লার ফয়জুন্নেসা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সাফল্যের সাথে ম্যাট্রিক (এস.এস.সি) এবং মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও জাপান থেকে ‘The Executive Program on Corporate Management’ –এ ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবন

তৌফিকা করিম বর্তমানে আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন। প্রায় তিন দশকের ক্যারিয়ারে আইনজীবী হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশের বিচার ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। বর্তমানে সিরাজুল হক’স এসোসিয়েট –এর সিনিয়র পার্টনার হিসেবে কাজ করছেন।

তিনি জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলা ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়াও অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা সফল সমাধান করেছেন।

মানবাধিকার রক্ষায় অনবদ্য অবদান

দীর্ঘ দিনের আইন পেশার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি অনুধাবন করেন, বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় কিংবা বিনা বিচারে আটক অথবা মিথ্যা মামলায় ফেঁসে গিয়ে অনেক নিরপরাধ কারাভোগ করছেন। কেবলমাত্র তদবিরকার না থাকার কারণে তাদের জামিন করানোর মতো কেউ নেই অর্থাৎ এই সব কারাবন্দীরা প্রকৃতপক্ষে অসহায়। নিজ উদ্যোগে ও খরচে একের পর এক অসহায় কারাবন্দীদের জামিন করানোর মাধ্যমে অসহায় কারাবন্দীদের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন সুপ্রিম কোর্টের স্বনামধন্য আইনজীবী তৌফিকা করিম।

একপর্যায়ে অসহায় কারাবন্দীদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংস্থা ‘লিগ্যাল এসিসটেন্স টু হেল্পলেস প্রিজনার্স অ্যান্ড পার্সনস (এলএএইচপি)। এনজিও বিষয়ক ব্যুরো নিবন্ধিত এই মানব কল্যাণ ও সেবামূলক সংস্থা এলএএইচপি’র চেয়ারম্যান হিসেবে দেশের বাইশটি জেলায় শতাধিক প্যানেল আইনজীবী নিয়োগের মাধ্যমে পরিচালনা করছেন বিনামূল্যে আইন সহায়তা কার্যক্রম।

অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের তুখোড় নেতৃত্বে করোনা মহামারীর আগ পর্যন্ত এক হাজারের কাছাকাছি অসহায় কারাবন্দীকে জামিনে মুক্ত করেছে এলএএইচপি। জামিনের পাশাপাশি অনেক কারাবন্দীকে উপযুক্ত কাউন্সেলিং এবং কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি।

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

সরকারের পাশাপাশি বিনামূল্যে আইনি সেবা দেশব্যাপী বিস্তৃত করার লক্ষ্যে উৎসাহ প্রণোদনা হিসেবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা এলএএইচপি’কে ‘সেরা দেশীয় বেসরকারী সংস্থা-২০১৯’ মনোনীত করে।

২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান দিবস- উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে ‘সেরা দেশীয় বেসরকারী সংস্থা’র সম্মাননা গ্রহণ করেন এলএএইচপি’র চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম।

মানবাধিকার কমিশনের সদস্য

সুনামের সাথে আইন পেশার চর্চা, অসহায় কারাবন্দী তথা নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতি একনিষ্ঠতা এবং ব্যক্তি জীবনে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির অধিকারী হওয়ার কারণে ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন- এর সম্মানিত সদস্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ।

আরও যেসব পদ অলকঙ্কৃত করে আছেন তিনি

কুমিল্লার সুপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান Ethnica School and College এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত আছেন আইনজীবী তৌফিকা করিম। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে তিনি এ পদে দায়িত্বপালন করছেন।

এছাড়া প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি আন্তর্জাতিক মানের অফিস ইকুইপমেন্টস এবং ইনফরম্যাশন টেকনোলজি (আই.টি) সরবরাহকারী মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান International Office Equipment (IOE) Bangladesh Ltd. এর ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োজিত আছেন।

এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ সভায় প্রস্তাবিত এবং অনুমোদিত নতুন ব্যাংক Citizens Bank (Proposed) –এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। খুব শীঘ্রই ব্যাংকটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে।

সমাজসেবা

ব্যক্তি ও পেশাজীবনের শত ব্যস্ততার মাঝেও সময় বের করেছেন ক্লাব এক্টিভিটিস তথা সোশ্যাল ওয়ার্কের জন্য। কাজ করেছেন অতি সুপরিচিত আন্তর্জাতিক ওমেন্স ভলেন্টারি অর্গানাইজেশন Inner Wheel -এ। Inner Wheel Club of Dhaka North -এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দক্ষতার সাথে ক্লাবের কার্যপরিধি ও সুনাম বৃদ্ধিতে রেখেছেন অসামান্য অবদান।

পরিবার

পেশায় চাটার্ড একাউনটেন্ট, আফতাব-উল ইসলামের সহধর্মিনী অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম। আফতাব-উল ইসলাম International Office Equipment (IOE) Bangladesh Ltd. এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং Asia Pacific General Insurance Co Ltd. এর সম্মানিত চেয়ারম্যান। তিনি সুদীর্ঘকাল American Chamber of Commerce in Bangladesh (AmCham) –এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) এর সভাপতি’র পদও অলঙ্কৃত করেছেন। এছাড়াও বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক এর পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত আছেন।