ওটিটি নীতিমালার খসড়ায় ওপর ব্লাস্টের একগুচ্ছ মতামত ও সুপারিশ

বাংলাদেশ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কর্তৃক প্রণীত “ওভার দ্যা টপ (ওটিটি) কনটেন্টভিত্তিক পরিষেবা প্রদান এবং পরিচালনা এবং বিজ্ঞাপন প্রদর্শন নীতিমালা ২০২১ (খসড়া)” এর উপর মতামত দিয়েছে আইনি সহায়তা প্রদানকারী মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।

এই মতামত গুলো “ওভার দ্যা টপ (ওটিটি) কনটেন্টভিত্তিক পরিষেবা প্রদান এবং পরিচালনা এবং বিজ্ঞাপন প্রদর্শন নীতিমালা ২০২১ (খসড়া) ” এর উপর ব্লাস্টের হিসেবে তৈরি করা হয়েছে, যা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক উল্লেখিত খসড়া নীতিমালার উপর সংশ্লিষ্ট অংশীজন এবং সাধারণ জনসাধারণের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। ব্লাস্ট মনে এই ধরণের নীতিমালা বাক স্বাধীনতা ও টেকসই উন্নয়নের উপর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিধায় এই খসড়া নীতিমালার উপর মতামত প্রদান করছে।

খসড়া নীতিমালার উপর ব্লাস্ট অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে এবং আইন, মিডিয়া ও ডিজিটাল অধিকার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ একটি অনলাইন বিশেষজ্ঞ পরামর্শ সভার আয়োজন করে। সভায় ডিজিটাল এবং সোশ্যাল এবং ওভার দ্য টপ (ওটিটি) মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং এদের অন্তর্ভুক্ত পরিষেবাগুলিতে এ ধরনের একটি নীতিমালার নিয়ন্ত্রণের প্রভাব এবং চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করতে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

খসড়া নীতিমালার পর্যালোচনা এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি সংবেদনশীল বিষয়ের উপর ব্লাস্ট আলোকপাত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে খসড়া নীতিমালার পরিধি, প্রযোজ্যতা, পরিভাষা সংক্রান্ত স্পষ্টতার অভাব, নিবন্ধণ বিধান, প্রকাশিত বিষয়বস্তু অপসারণের ভিত্তি এবং বাক স্বাধীনতার উপর স্বেচ্ছাচারী বিধিনিষেধ আরোপকারী বিধান প্রভৃতি।

ব্লাস্টের মতামতসমূহ নিম্নরূপ-

বাংলাদেশ সংবিধানে আইনের সুরক্ষার অধিকার (অনুচ্ছেদ ৩১), চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতার অধিকার (অনুচ্ছেদ ৩৯) এবং ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারনে বৈষম্য থেকে মুক্ত থাকা (অনুচ্ছেদ ২৮) বিষয়ক মৌলিক অধিকারসমূহের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। মৌলিক অধিকারের বিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার কারণে নীতিমালাটি বাতিলের সম্ভাবনা থেকে যায় (অনুচ্ছেদ ২৬)।

আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক সনদ (ICCPR) এর ১৯ নং অনুচ্ছেদে যুক্তিসঙ্গত সীমাবদ্ধতাকে বৈধতা দেয়া হয়েছে, কিন্তু এটি একটি ৩ ধাপসম্পন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে বৈধ হতে হবে, যা হচ্ছে সমানুপাতিকতা (proportionality), আইনি বৈধতা (legality) ও ন্যায্যতা (legitimacy)। এ পরীক্ষার বিষয়টি নীতিমালা প্রণয়নের সময় অনুসরণ করা সমীচীন।

নীতিমালা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে বিধৃত রয়েছে যে, “সৃজনশীল শিল্পকর্ম তৈরীতে সহযোগিতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতাসহ বাক স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা এবং নির্মাতা ও শিল্পীদের সৃজনশীল কাজের স্বাধীনতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা”। কিন্তু এই নীতিমালা অনেক ক্ষেত্রেই সৃজনশীল শিল্পকর্ম এবং স্বাধীন মত প্রকাশের বাধা হয়ে দাঁড়াবে। যেমন: এ নীতিমালার অনুচ্ছেদ ১৪ তে উল্লেখ আছে যে, নিবন্ধণ কর্তৃপক্ষ চাইলে যেকোন নিষিদ্ধ কনটেন্ট অপসারণে ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে বাধ্য করতে পারবে যা আর্ন্তজাতিক মানদন্ডের পরিপন্থী। সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা এবং চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতাসহ বাক স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সকল বিধান পুনঃমূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করা করা। সংবিধান যে সকল মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে তার সাথে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও International Best Practice এর সামঞ্জস্যতা রেখে এ নীতিমালা প্রণয়ন করা আবশ্যক।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ইন্টারনেট ও এর মাধ্যমে তথ্য প্রচারের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় চিন্তা, বিবেক ও বাক-স্বাধীনতা বিরোধী এ নীতিমালা কার্যকর হলে তা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সাথে সাংঘর্ষিক হবে এবং তা অর্জন ব্যাহত হবে।

ব্লাস্ট সারাদেশে আইন, ন্যায়বিচার প্রাপ্তি ও মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের অডিও ভিজ্যুয়াল ও সাংস্কৃতিক কাযক্রম পরিচালনা করে। তাছাড়া বিভিন্ন বেসরকারী মানবাধিকার সংগঠন এই ধরনের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে, এ নীতিমালা প্রণয়নের মধ্যে দিয়ে এসকল কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন “ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ২০২১” বিষয়ক খসড়া প্রবিধান তৈরি করে কমিশনের ওয়েবসাইটে ৫ মার্চ ২০২২ তারিখ পর্যন্ত সর্বসাধারণের পর্যবেক্ষণ, মতামত ও সুপারিশ এর জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। উক্ত খসড়া প্রবিধানটির পরিধি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত খসড়া নীতিমালার পরিধির সাথে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে যা প্রায়োগিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করবে। এছাড়াও খসড়া নীতিমালাটি তথ্য অধিকার আইন ২০০৯, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩৮ ধারা এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন ২০১১ এর সাথে সাংঘর্ষিক। ফলে বাণিজ্যিক প্রয়োগ, অনলাইন আইনী সেবা, আইনী সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং অনলাইন কোর্স ইত্যাদি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে চিন্তা, বিবেক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকারগুলোর উপর প্রভাবকে বিবেচনায় নিয়ে এই খসড়া নীতিমালা সংশোধন করতে হবে।

এই নীতিমালায় ব্যবহৃত অনেকেগুলো শব্দ ও বাক্যাংশকে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি বিধায় তা যেমন অপপ্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করবে পাশাপাশি অস্পষ্টতার সুযোগ রয়ে যাবে। যেমন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সৃষ্টিকারী উপকরণ, সাম্প্রদায়িকতা, দেশীয় সংস্কৃতি, সামাজিক মূল্যবোধ – এগুলো সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল শব্দ ও বাক্যাংশের সুষ্পষ্ট সংজ্ঞা থাকা প্রয়োজন। তাছাড়া সংজ্ঞায়নের ক্ষেত্রে ‘ব্যতিক্রম’ রাখা হয়নি। ফলে এই নীতিমালায় ব্যবহৃত শব্দগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। সংজ্ঞায়নের ক্ষেত্রে ‘ব্যতিক্রম’ এর অনুবিধি উল্লেখ করে সৃজনশীল শিল্পকর্ম, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতাসহ নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। যেসব ক্ষেত্রে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয় সেসবের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা অথবা উদাহরণ দ্বারা সহজগম্য করা যেতে পারে।

এ নীতিমালায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতার কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

নীতিমালার ২.৯ অনুচ্ছেদে মধ্যস্থতাকারী/ইন্টারমিডিয়ারী প্ল্যাটফর্মের সংজ্ঞায় বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি স্বতন্ত্র/একক ব্যক্তিদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে; যা কোনোভবেই যৌক্তিক নয়।

প্রস্তাবিত ডাটা নিরাপত্তা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও খসড়া ওটিটি নীতিমালায় ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক এর হাতে বিপুল ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। তিনটি আইনের অধীনে একজন ব্যক্তিকে এরূপ ক্ষমতাপ্রদান আধুনিক তথ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আশঙ্কাজনক। ফলে তথ্য ব্যবস্থাপনায় ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা, অপব্যবহার রোধ এবং কর্মপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এই ধরনের ক্ষমতা প্রদান পূর্নবিবেচনা করতে হবে।

ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর নিবন্ধণ না করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তালিকাভুক্তির বিধান রাখা উচিত। কারণ নিবন্ধন ওটিটি প্ল্যাটফরমগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে এবং এই নিয়ন্ত্রণ যদি সঠিকভাবে করা না হয় তাহলে অনেকের তথ্য জানা যাবে না বা অনেকে তথ্য থেকে বঞ্চিত হবে।

নিষিদ্ধ তথ্য উপকরণ বিষয়ে অবগত না হয়ে ইন্টারমিডিয়ারী/মধ্যস্বত্বভোগী কোন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিষিদ্ধ তথ্য উপকরণ সম্প্রচার করলে এবং পরবর্তীতে এ বিষয়ে অবগত হয়ে প্রচারিত নিষিদ্ধ তথ্য উপকরণ অপসারণে ব্যর্থ হলে- এর প্রকৃত দায়ভার কার উপর বর্তাবে- সে বিষয়ে নীতিমালায় সুস্পষ্ট বিধান থাকা প্রয়োজন।

নীতিমালা কার্যকর হওয়ার পর একটি বাফার জোন বা নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া উচিত- যেন ওই সময়সীমার মাঝে বিদ্যমান প্ল্যাটফর্মগুলো নিবন্ধিত হওয়ার সুযোগ পায়। অন্যথায় এই নীতিমালা কার্যকর হওয়ার পরপরই বিদ্যমান সব প্ল্যাটফর্মগুলোতে জনগণ প্রবেশ করতে পারবে না এবং এগুলো বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না।

নীতিমালার ৬.১ ও ৬.২ অনুচ্ছেদে সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের বরাবর নিবন্ধনের আবেদনের ঠিক কতদিনের মধ্যে মন্ত্রণালয় নিবন্ধণ প্রদান করবে- সে বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট সময়সীমার উল্লেখ নেই।

খসড়া নীতিমালার ১৩.৩ অনুচ্ছেদ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর ধারা ২৮ এর অনুরূপ (কোনও ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক আকারে যে কোনো তথ্য প্রকাশ/সম্প্রচার, যা ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধে আঘাত করে)। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর ২৮ ধারা অনেক ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে এবং এই বিষয়ে অনেক উদ্বেগ উৎকন্ঠা রয়েছে। ফলে এই বিধানের অপব্যবহারের ঝুঁকি থেকে যায়, যা ইতোমধ্যে বিভিন্ন ঘটনায় প্রকাশ পেয়েছে।উদাহরণ স্বরূপ, ঝুমন দাস, এবং দীপ্তি রানী দাস ওরফে অধরা দীপ্তি, ১৭ বছর বয়সী একজন কলেজ ছাত্রী, যাদেরকে ‘অনলাইন কন্টেন্ট শেয়ার করার মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ করার অভিযোগে পৃথক ঘটনায় ডিএসএ এর অধীনে গ্রেপ্তার করা হয়। উভয়ের জামিনই নাকচ করা হয় এবং কয়েক মাসের জন্য কারাদন্ড প্রদান করা হয় (দীপ্তি, একজন শিশু, জামিন পাওয়ার পূর্বে পনের মাস কারারুদ্ধ অবস্থায় ছিল)। এধরণের বিষয়গুলো আইনের দৃষ্টিতে সমানভাবে এবং বৈষম্যহীনভাবে কাজ করা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এ খসড়া নীতি, ডিএসএ-এর মত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যেভাবে এটিকে ব্যবহার করা হয়েছে, এরূপ সাদৃশ্যপূর্ণ বিধান বলে, একইভাবে আবারো অপব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।

নীতিমালার ১৩. ৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংজ্ঞায়িত কনটেন্ট ব্যতীত কোন ধরণের সংবাদ বা টকশো সম্প্রচার করা যাবে না।এ নীতিমালায় “সংজ্ঞায়িত কনটেন্ট” বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন ধারণা প্রদান করা হয়নি। মূলত এধরণের অস্পষ্টতা মানুষের চিন্তা, বিবেক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করবে।

নীতিমালার ১৪ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে নিবন্ধিত প্ল্যাটফর্মকোনো নিষিদ্ধ কন্টেন্ট সম্প্রচার করলে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ ওই নিষিদ্ধ কন্টেন্ট অপসারণের জন্য ওটিটি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা অপসারণে বাধ্য থাকবে। এক্ষেত্রে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবে। এক্ষেত্রে কারণ দর্শানো/ব্যাখ্যা/স্বপক্ষে যুক্তি প্রদান/শুনানীর কোন সুযোগ রাখা হয়নি এবং বিতর্কিত কনটেন্ট নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মজুদ রাখার ব্যাপারেও বলা হয়নি। কারণ দর্শানোর নোটিশ এর বিধান না রাখায় তা প্রাকৃতিক ন্যায়বিচার এর পরিপন্থী।

অনুচ্ছেদ ১৬.৮ এর অধীনে উল্লেখ রয়েছে- কনটেন্ট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ ও ব্যবহারকারী নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কোন সিদ্ধান্ত বা আদেশের বিরুদ্ধে সরকারের নিকট আপীল করতে পারবে। কিন্তু সরকারের সুস্পষ্ট ঠিক কোন কর্তৃপক্ষের বরাবর আপীল দায়ের করতে হবে এবং ঠিক কতদিনের মধ্যে উক্ত আপীল আবেদনটি নিষ্পত্তি করতে হবে- সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কিান বিধান নেই।

নীতিমালার অনুচ্ছেদ ১৭.৪ এ বলা হয়েছে, ফৌজদারি অপরাধ বা নৈতিক স্খলনজনিত কারণে দন্ডিত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একক বা যৌথভাবে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মালিক হওয়ার অযোগ্য হবে। মালিকানার অযোগ্যতার ক্ষেত্রে ‘ফৌজদারি অপরাধ’ এর কথা উল্লেখ থাকলেও অপরাধের ধরন উল্লেখ করা হয়নি। ঠিক কি পরিমাণ দন্ডে দন্ডিত হলে/ অপরাধের মাত্রা ঠিক কি হলে সে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একক বা যৌথভাবে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মালিক হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে তার সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই।

উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় ব্লাস্টের সুপারিশ

এই নীতিমালার পরিধি, কার্যকারিতা, প্রয়োগযোগ্যতা ইত্যাদি বিষয়ে নারী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং ওটিটি ব্যবহারকারীসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা ও পরামর্শ সভা আয়োজন করা; এই ধরনের পরামর্শ সভার জন্য মতামত প্রদানের সময়সীমা বৃদ্ধি করা; এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্যের স্বাধীনতা খর্ব করা এই নীতিমালা গ্রহণে পুনুরায় কোন কার্যক্রম যাতে গ্রহণ না করা হয় তা নিশ্চিত করা।