পুরুষকে ঘরজামাই হতে চাপ দেওয়া নিষ্ঠুরতা: দিল্লি হাইকোর্ট
দিল্লি হাইকোর্ট

বৈবাহিক ধর্ষণ কি অপরাধ? দ্বিধাবিভক্ত দিল্লি হাইকোর্ট

স্ত্রীর অমতে তাঁর সঙ্গে স্বামীর শারীরিক সম্পর্ক অপরাধ হিসেব গণ্য করা হবে কি না, সে ব্যাপার স্পষ্ট কোনও রায় দিতে পারল না ভারতের দিল্লি হাইকোর্ট। বৈবাহিক ধর্ষণ অপরাধমূলক কাজ কি না সেই প্রসঙ্গে আদালত কার্যত দ্বিধাবিভক্ত রায় ঘোষণা করল। ফলে মামলাটি এখন দেশটির সুপ্রিম কোর্টে যাবে।

এ সংক্রান্ত এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রায় ঘোষণাকালে আজ বুধবার (১১ মে) দিল্লি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি ভিন্ন মত পোষণ করেন।

এক বিচারপতির মতে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা অসাংবিধানিক, কারণ এটি সংবিধান প্রদত্ত নারীর অধিকার খর্ব করছে। তবে বেঞ্চের অপর বিচারপতি তাতে সহমত পোষণ করতে অস্বীকার করেন।

বিচারপতি রাজীব শাকদের বলেন, ‘এটা প্রবলভাবে স্বীকার করে নেওয়া যেতে পারে, বিষয়টি উদ্বেগের। স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা ভারতীয় সংবিধানের ১৪, ১৯ এবং ২১ নম্বর ধারাকে লঙ্ঘন করছে।’

অপর বিচারপতি হরিশঙ্কর জানান, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা সংবিধান লঙ্ঘন করছে না। কারণ স্ত্রীর আপত্তির পরে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন বোধগম্য মতপার্থক্যের মধ্যে পড়ে। ফলে স্ত্রীর অসম্মতিতে তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক কোনোভাবেই সমানাধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার এবং জীবন ধারণের অধিকারকে খর্ব করে না।

তবে দুই বিচারপতি একটি বিষয়ে সহমত হয়েছেন। ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, চূড়ান্ত রায় ঘোষণার আগে ভারতীয় সংবিধান প্রদত্ত অধিকার, যেমন মৌলিক অধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার – এই সব বিষয়গুলি আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। এই রায়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দুটি জীবন। তাই চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য মামলা সুপ্রিম কোর্টে পাঠানোর সুপারিশ করা হল।

প্রসঙ্গত, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা অর্থাৎ ধর্ষণ বিষয়ক আইনি বিধানে এখনো বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ বলে ধরা হয়না। শুধুমাত্র স্ত্রী নাবালিকা হলে তার সঙ্গে যৌন সংসর্গকে ধর্ষণ বলে ধরা হয়।

ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনের এই ব্যতিক্রমী ধারাকে চ্যালেঞ্জ করেই ২০১৫ সালে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয় দিল্লি হাইকোর্টে। আবেদনকারীদের দাবী, বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও জোর করে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করাকে অপরাধ বলে গণ্য করতে হবে।

দিল্লি হাইকোর্টের দুই বিচারপতি দ্বিধাবিভক্ত রায় দিলেও চলতি বছরেই কর্ণাটক হাইকোর্ট বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে বেশ শক্ত মন্তব্যই করেছিল। ওই আদালত বলেছিল, কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে যৌন দাসী করে রাখতে পারে না। স্ত্রীর অসম্মতিতে তার সঙ্গে যৌন সংসর্গ করা ধর্ষণ ছাড়া অন্য কিছু নয়। আইন প্রণেতারা যাতে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ বিবেচনা করে, তারও পরামর্শ দিয়েছিল কর্ণাটকের উচ্চ আদালত।