১১ বছরে বিনা খরচে আইনি সেবা পেয়েছেন লক্ষাধিক কারাবন্দি
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা

বিনা খরচে হতদরিদ্র নুরু মিয়া ফিরে পেলেন অবৈধ দখল হওয়া সম্পত্তি

নিজের সম্পত্তি অন্যের দখলে। পরিবার নিয়ে নুরু মিয়াকে বছরের পর বছর থাকতে হয়েছে বস্তিতে! দীর্ঘ ১৪ বছর আইনি লড়াই শেষে আদালতের হস্তক্ষেপে সম্পত্তির দখল বুঝে পেয়েছেন চাঁদপুরের হতদরিদ্র নুরু মিয়া।

তবে এই দীর্ঘ সময় মামলা লড়তে নুরু মিয়াকে খরচ করতে হয়নি একটি পয়সাও। এই মামলার সম্পূর্ণ খরচ বহন করেছে সরকার। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে বিনা পয়সায় নুরু মিয়াকে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

জানা গেছে, নুরু মিয়ার ১ একর ৭৭ শতাংশ সম্পত্তি অন্যের দখলে চলে যায়। অবৈধ ভাবে দখল করে রাখেন চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ওয়ারুক রাড়া গ্রামের এ এইচ এম মহিউদ্দিন গং। অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি।

কিন্তু হতদরিদ্র নুরু মিয়ার কাছে মামলা পরিচালনার জন্য ছিলনা পর্যাপ্ত অর্থ। পরে লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে নুরু মিয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এই মামলা পরিচালনার জন্য অ্যাডভোকেট আবুল কাশেমকে নিযুক্ত করেন। ২০০৮ সাল থেকে বিনা পয়সায় এই মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী আবুল কাশেম।

এই মামলায় প্রাথমিক ডিক্রি যায় নুরু মিয়ার পক্ষে। কিন্তু বিবাদী পক্ষের রায়ের বিরুদ্ধে ডিগ্রি রদের মামলা দায়েরের প্রেক্ষিতে দীর্ঘায়িত হয় মামলার নিষ্পত্তি। এক পর্যায়ে বিবাদী পক্ষের আবেদন আদালতে খারিজ হয়। এরপর নুরু মিয়ার আইনজীবী আবুল কাশেম আদালতে সার্ভে কমিশনার নিয়োগের আবেদন করেন।

সার্ভে কমিশনার সরেজমিনে ভূমি পরিমাপ করে নকশাসহ সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পন্ন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিন করেন। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত নুরু মিয়ার পক্ষে চূড়ান্ত ডিক্রি প্রচার করেন। এরপর অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়া কিংবা বিবাদী পক্ষ থেকে বাধা প্রদানের সম্ভাবনা থাকায় সরেজমিনে ভূমির দখল বুঝিয়ে দেয়ার আবেদন করেন আদালতে।

আদালত ওই আবেদন মঞ্জুর করেন। আদালতের নির্দেশে চলতি সপ্তাহে জেলা জজ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট গাফ্ফার খান নাদিম ঘটনাস্থলে গিয়ে আইনজীবী আবুল কাশেম, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও এলাকাবাসীর উপস্থিততে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে বর্ণিত সম্পত্তি নুরু মিয়াকে বুঝিয়ে দেন।

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম জানান, সরকার গরীব অসহাদের আইনি সহায়তার জন্য লিগ্যাল এইডের ব্যবস্থা করেছেন, তাতে কোনো টাকা পয়সা ছাড়াই সেবা দেয়া হয়। দীর্ঘ ১৪ বছর আদালতের নির্দেশ মোতাবেক কোনো টাকা-পয়সা ছাড়াই এই মামলায় লড়েছি এবং সফল হয়েছি।

দখল বুঝিয়ে দিতে আসা জেলা জজ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট গাফ্ফার খান নাদিম জানান, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক কাগজপত্র দেখে ন্যায্য মালিককে সম্পত্তি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

দীর্ঘ বছর লড়াইয়ের পর নিজের সম্পত্তি বুঝে পেয়ে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে সম্পত্তি বুঝে নেন নুরু মিয়া। আর নয় বস্তিতে, এবার নুরু মিয়া বসতি গড়ে সপরিবারে থাকতে পারবেন নিজের ১ একর ৭৭ শতাংশ সম্পত্তির উপর।

এদিকে মামলার বিবাদী পক্ষের একজন অভিযোগ করে বলেন, কোন নোটিশ পাইনি। হঠাৎ করে তাদের দেয়াল ভেঙ্গে নুরু মিয়াকে দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।