আইনজীবী পরিবারের কষ্ট লাঘবে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ব্যাংক চাই
অ্যাডভোকেট কাজী ওয়ালী উদ্দীন ফয়সল

আইনজীবী পরিবারের কষ্ট লাঘবে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ব্যাংক চাই

কাজী ওয়ালী উদ্দীন ফয়সল। পেশায় একজন আইনজীবী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক উপ কমিটির এই সদস্য দায়িত্বপালন করছেন অরাজনৈতিক আইনজীবী সংগঠন ল’ইয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (LAB)–এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আইনজীবীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট মানবিক এই সংগঠনটির সভাপতির সাথে সম্প্রতি কথা হয় ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম এর। আলাপচারিতায় উঠে আসে সংগঠনটির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কাজের ক্ষেত্রেগুলো। পাঠকদের জন্য আলাপচারিতার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হল।

ইয়ার্স ক্লাব : আইনজীবী সংগঠন ল’ইয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ল্যাব)–এর সভাপতি আপনি, আইনজীবীদের কল্যাণে বার কাউন্সিলসহ জেলায় জেলায় আইনজীবী সমিতি এবং দলীয় পর্যায়ে সংগঠন থাকার পরও এমন একটি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা কেন অনুভব করলেন?

কাজি ফয়সল : বার কাউন্সিল বা জেলা বার আছে তা ঠিক বলেছেন, কিন্তু তারা তাদের রুটিন কাজ করে যাচ্ছেন। হঠাৎ দুর্ঘটনা, কঠিন অসুস্থতায় বা মৃত্যুতে তারা ইচ্ছে করলেও তাৎক্ষণিক কোন সহযোগিতা করতে পারেনা। কারণ অনেক বিধিমালা মেনে তবেই তাদের এসব আইনজীবী হিতৈষী কাজ করতে হয়। ফলে একজন মুমূর্ষু রোগীর জন্য আইনজীবী সমিতিতে দৌঁড়ানো বা টাকা সংগ্রহ করা একেবারেই অসম্ভব। আমরা এসব বাস্তব সমস্যা দেখেই আইনজীবীদের জন্য এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা হিসেবে প্রথম দিকে কয়েকজনকে নিয়ে ল্যাব (LAB) প্রতিষ্ঠা করি।

ইয়ার্স ক্লাব : যতটুকু জানতে পেরেছি, ল্যাব অরাজনৈতিক সংগঠন, ল্যাবের মূল কাজগুলো আসলে কি?

কাজি ফয়সল : হ্যাঁ, ল্যাব (LAB) একটি অরাজনৈতিক সংগঠন, তবে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের কাউকে নিয়ে নয়। এর কাজ মূলত অসুস্থ আইনজীবীদের আর্থিক সহযোগিতা করা, মৃত আইনজীবীর পরিবারকে সহযোগিতা করা এবং তাদের সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাধ্যমত সহযোগিতার চেষ্টা করা।

ইয়ার্স ক্লাব : ইতোমধ্যে ল্যাব এর ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে, গত এক দশকে ল্যাবের উল্লেখযোগ্য কাজগুলো সম্পর্কে কিছু বলুন…

কাজি ফয়সল : আমরা গত বছরের ৪ ডিসেম্বর ল্যাব (LAB)-এর ১০তম বর্ষ অনুষ্ঠান উদযাপন করেছি। এখন ১১ বছর চলছে। গত ১০ বছর ল্যাব (LAB) থেকে  যারা সহযোগিতা পেয়েছেন তারা বিষয়টি জানেন এবং ল্যাব (LAB) সংশ্লিষ্ট সবাই অবগত আছেন। তাছাড়া প্রচার করে জানান দেয়া আমাদের কাজ না। সমস্যাক্রান্ত সদস্যদের পাশে দাঁড়ানোটাই এর মূখ্য উদ্দেশ্য। এরই মধ্যে পাশে দাঁড়ানো অনেক সদস্য আইনজীবী মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রয়াত আইনজীবীগণের পরিবারের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে ল্যাব (LAB) আছে এবং সবমময় তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছে।

ইয়ার্স ক্লাব : ল্যাবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি, ১০ বছর পর কোথায় দেখতে চান এই সংগঠনকে?

কাজি ফয়সল : দেখুন, ল্যাব (LAB) কিন্তু বিশেষ করে সদস্য আইনজীবীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট একটি মানবিক প্রতিষ্ঠান। এখানে সকল সদস্যকে রোটারি ও লায়ন্স ক্লাবের মত নিজ পকেট থেকে টাকা দিয়ে সেবা করতে আসার মনোভাব নিয়ে আসতে হয়। তবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা না বলে বলতে পারি কয়েকটি মৌলিক উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছি। বিশ্বায়নের যুগে তাল মিলিয়ে সাধ্যের মধ্যে সদস্যদের প্রয়োজন মেটাতে কাজ করবে ল্যাব (LAB)।

এর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্যগুলো হচ্ছে- একজন আইনজীবীও যেন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়। প্রয়াত আইনজীবীগণের পরিবারের সন্তান যেন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাবার অভাব বোধ করতে না হয়।

সদস্য আইনজীবীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট  বিষয়ে ল্যাব (LAB)-এর সন্মানিত উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট কাজী মো. নজিবুল্লাহ হিরু ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সাঈদ আহম্মদ রাজার পরামর্শে  বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেছি।

ইয়ার্স ক্লাব : এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি, সম্প্রতি ল্যাব আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আপনি আইনজীবীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল ও ব্যাংক প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে, কেন?

কাজি ফয়সল : যখন দেখি আমার প্রিয়  কোনো আইনজীবী বা তার পরিবারের সদস্য অসুস্থ হয়ে অসহায়ের মতো কাঁতরায়, অথচ হাসপাতালে গিয়ে অর্থ বা সশরীরে সহযোগী হয়ে কেউ পাশে থাকেন না তখন আমরা মনে মনে পীড়িত হই। তবে ল্যাব (LAB) নিয়ে মানবিক কাজে করতে গিয়ে আমরা হাতেগোনা  মাত্র ক’জন আইনজীবীকে সঙ্গে পেয়েছি! বাকি একটা অংশ ব্যস্ততার অযুহাতে মানবিক ও সামাজিক কাজ থেকে দূরে থাকছেন। আরেকটা বৃহৎ অংশকে মন হলো তারা অনেকটা নির্বাচনমুখী মানবিক। ল্যাব (LAB) নিয়ে আমরা শুধুমাত্র সেবাটিকেই মনে-প্রাণে চাইছি।

দেখুন,  প্রায় ৭০ হাজার আইনজীবী ও শিক্ষানবিশ এবং আইনছাত্র মিলে প্রায় লক্ষাধিক ব্যক্তি এই পেশায় জড়িত। এখন কাজ করতে গিয়ে আইনজীবীদের জন্য একটা বিশেষায়িত হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। অনেকটা সেনাবাহিনীর সিএমএইচ অথবা পুলিশবাহিনীর সিপিএইচ এর মতো। সিপিএইচ  রাজধানীর রাজারবাগে অবস্থিত একটি বিশেষ হাসপাতাল। ওই হাসপাতালে বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যরা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পান। ১৯৫৪ সালে হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। প্রথমে ৭০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। পরে এটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।

ল্যাব (LAB) সদস্যদেরও স্বপ্ন বলুন, আর যুক্তি, আমরা মনে করছি এমন একটা হাসপাতাল হোক যেখানে আইনজীবীরাও বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন। তাই আমি এই দাবি করে আসছি এবং এই স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।

আর  ব্যাংক করার দাবি কেন সে কথা বলছেন- তাহলে শুনুন,  অন্য কোনো পেশায় প্রতিদিন আয়ের সুযোগ কম, আইন পেশার সবাই কমবেশি প্রতিদিন আয় করেন । এ পেশার জন্য একটা ব্যাংক হলে ব্যাংকটি অবশ্যই লাভজনক হবে এবং এই লভ্যাংশটি দেশের সকল নিবন্ধিত আইনজীবীরা পাবেন, তাদের মৃত্যুর পর পরিবারটি আজীবন ভালভাবে বাঁচতে পারবেন। পরিবারের সারা জীবনের কষ্ট লাঘবের জন্য দরকার দেশের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা একটি ব্যাংকের।