ভুয়া নিয়োগপত্র: রিট করে ফাঁসলেন ৩৪ আবেদনকারী
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী

পিএইচডি জালিয়াতি রোধে নীতিমালা তৈরিতে ৭ সদস্যের কমিটি

পিএইচডি গবেষণা জালিয়াতি রোধে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। কমিটিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে পিএইচডি গবেষণা জালিয়াতি রোধে নীতিমালা তৈরি করে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

আজ রোববার (১৪ আগস্ট) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

সাত সদস্যের কমিটিতে রয়েছেন – শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক ভিসি ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঢাবির কম্পিউটার বিজ্ঞানের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফুদ্দিন মো. তারেক, ঢাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাকিব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসির) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাজনীন ও একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আকবর।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান লিংকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

রিটকারী আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম‘কে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ আদালতে এ বিষয়ে শুনানি চলছে। সে অনুযায়ী চলতি বছরের ২৯ মে পিএইচডি জালিয়াতি রোধে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ৪ সপ্তাহের মধ্যে এ সংক্রান্ত আইন চূড়ান্ত করে দাখিল করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।

তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩১ জুলাই ফের বিষয়টি আদালতে শুনানির জন্য ওঠে, কিন্তু ওই নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্টদের অগ্রগতি না হওয়ায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন আদালত।

একইসঙ্গে পিএইচডি অভিসন্দর্ভ নকল বা কপি করা বন্ধে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে যাচাই-বাছাই করতে যে আবেদন করা হয়েছিল সে বিষয়ে একটি কমিটি গঠনের পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেন আদালত। ৭ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জানাতে বলা হয়। এরপর আজ বিষয়টি শুনানির জন্য উঠলে বিজ্ঞ আদালত সাত সদস্যের এই কমিটি গঠন করেন এবং তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন বলেও জানান রিটকারী আইনজীবী।

এর আগে এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ও সমমানের ডিগ্রি কীভাবে অনুমোদন করা হয়, সেগুলো যথাযথ আইন মেনে হয়েছে কি না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে ‘ঢাবির শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮ শতাংশ নকলের’ বিষয়টি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

এছাড়াও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান চূড়ান্ত হওয়ার আগে জালিয়াতির ঘটনা রোধে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে যাচাই-বাছাই কেন করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়। জালিয়াতি রোধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে।

শিক্ষাসচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিবাদীদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি এ কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত, ‘ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮% নকল’ শিরোনামে ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপর দিন (২২ জানুয়ারি) এ বিষয়ে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯৮ শতাংশ হুবহু নকল পিএইচডি গবেষণার (থিসিস) মাধ্যমে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম লুৎফুল কবীর।

২০১৪ সালের দিকে ‘টিউবার কিউলোসিস অ্যান্ড এইচআইভি কো-রিলেশন অ্যান্ড কো-ইনফেকশন ইন বাংলাদেশ: অ্যান এক্সপ্লোরেশন অব দেয়ার ইমপ্যাক্টস অন পাবলিক হেলথ’ শীর্ষক ওই নিবন্ধের কাজ শুরু করেন আবুল কালাম লুৎফুল কবীর। তার এই গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আবু সারা শামসুর রউফ আর সহতত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাজ শুরুর এক থেকে দেড় বছরের মাথায় ২০১৫ সালে অভিসন্দর্ভের (গবেষণা) কাজ শেষ করে ফেলেন লুৎফুল কবীর। একটি পিএইচডি অভিসন্দর্ভের কাজ শেষ করার জন্য সাধারণত তিন থেকে সাড়ে তিন বছর লাগে। কিন্তু দ্রুত কাজ শেষ করে প্রথমে সহতত্ত্বাবধায়কের স্বাক্ষর ছাড়াই ডিগ্রির জন্য অভিসন্দর্ভটি জমা দেন লুৎফুল কবীর।

সহতত্ত্বাবধায়কের স্বাক্ষর না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন থেকে তা ফিরিয়ে দেয়া হয়। পরে লুৎফুল কবীর গবেষণার সহতত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ফারুককে ‘অনেক অনুনয়-বিনয়’ করে তার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে এলে ২০১৫ সালেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে তা অনুমোদিত হয়।

গবেষণায় ৯৮ শতাংশ হুবহু নকলের বিষয়টি নজরে আসার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে একজন গবেষক ঢাবি উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের কাছে বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া লুৎফুল কবীরের অভিসন্দর্ভে নিজের একটি গবেষণা থেকে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ ও তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে একটি চিঠি দিয়েছেন সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোনাস নিলসন।

পরে গত ২৮ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম লুৎফুল কবীরকে প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।