ছবিতে শিশুরা স্কুলে যাচ্ছে ছবিটি তোলা হয়েছে বান্দরবানের থানচি থেকে

আবাসিক সুবিধাসহ তিন পার্বত্য জেলায় ১১ মডেল হাইস্কুল হবে

পার্বত্য তিন জেলার দুর্গম এলাকায় ১১টি আবাসিক মডেল হাইস্কুল নির্মাণ করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে ‘তিন পার্বত্য জেলায় নতুন আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপন ও বিদ্যমান বিদ্যালয়ে আবাসিক ভবন নির্মাণ’ নামে একটি প্রকল্প তৈরি করছে। সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে এসব স্কুল নির্মাণ করতে মন্ত্রণালয় একাধিকবার সভা করেছে। গত বছরের ৮ আগস্ট প্রকল্প যাচাই কমিটির সভার সিন্ধান্ত অনুযায়ী, স্কুল স্থাপনের স্থান পরিদর্শন করতে একাধিকবার সভা করা হয়েছে। সভায় তিন জেলার ১০টি স্থানের সুপারিশ করা হয়।

স্থানগুলো হচ্ছে- বান্দরবান সদর উপজেলার হ্লাপাইমুখ, আলীকদম উপজেলার নয়াপাড়া ইউনিয়ন, রুমা উপজেলার রেমাক্রী পাংসা, রোয়াংছড়ি উপজেলার বেতছড়া (তারছা)। রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়ন, বরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়ন।

খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার লামকুপাড়া, লক্ষীছড়ি উপজেলার হাজাছড়ি মাস্টারপাড়া, মাটিরাঙা উপজেলার ধলিয়া।

এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশ অনুযায়ী থানচি উপজেলার রোমাক্রীতে একটি বিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তিন জেলায় বর্তমানে ১৯টি সরকারি ও ১০টি বেসরকারি স্কুল এবং নির্মাণ হতে যাওয়া ১১ স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ৭৪টি হোস্টেল নির্মাণ করা হবে।

এর মধ্যে ৩৬টি ছাত্রবাস ও ৩৮টি ছাত্রীনিবাস। প্রকল্পটি চূড়ান্ত করতে গত ২৩ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় অংশ নেয়া কর্মকর্তারা জানান, হোস্টেল ও আসন সংখ্যার চাহিদা যাচাই করতে ব্যানবেইসকে সমীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি চলতি মাসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পাহাড়ি পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নান্দনিক ভবন নির্মাণ করা হবে। পরিবেশের যেন কোনো ক্ষতি না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। হোস্টেলের সঙ্গে শিক্ষকদের জন্য ডরমেটরি আকারে আবাসন সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি ফ্লোর রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) চৌধুরী মুফাদ আহমেদ বলেন, প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে ওই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, জনসংখ্যার ঘনত্ব, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি উপযোগী শিক্ষার্থীর সংখ্যা, বর্তমানে যেসব স্কুল আছে সেগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অবকাঠামো, আবাসিক সুবিধাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

কেন না পার্বত্য এলাকার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আয় দিয়ে হোস্টেলে রেখে পড়াশোনা করানোর সামর্থ্য আছে কি-না তাও বিবেচনা করতে হবে। এসব সমীক্ষা করতে ব্যানবেইসকে (বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো) এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত ডিপিপিতে দেখা যায়, প্রকল্প এলাকার মাত্র ২৯টি বিদ্যালয়ের তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে আটটি বিদ্যালয়ে একটি করে হোস্টেল রয়েছে। যার আসন সংখ্যা ২৯৪টি। কিন্তু শিক্ষার্থী থাকে ১৫২ জন। অন্য ২১টি স্কুলে হোস্টেল নির্মাণের যৌক্তিকতা ডিপিপিতে উল্লেখ নেই।

মাউশির পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দুর্গম পার্বত্য এলাকার শিক্ষার্থীদের উন্নতমানের আবাসিক সুবিধাসহ ১১টি সরকারি হাইস্কুল নির্মাণের উদোগ নেয়া হয়েছে। গত বছর থেকে এ নিয়ে কয়েক দফায় সভা করেছি। সরেজমিনে পরিদর্শন করে ডিপিপি তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্প এলকার প্রকৃত চাহিদা যাছাই করতে শেষ দফায় একটি সমীক্ষা চালানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সমীক্ষার প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনে ডিপিপি সংশোধন করে দ্রুত একনেকের সভায় পাঠানো হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে তিন পার্বত্য এলাকায় আবাসিক স্কুল নির্মাণের নির্দেশ দেন। এরপর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও মন্ত্রণালয় প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে পারেনি।

 

নগর প্রতিনিধি/লইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম