আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সংসদ অনন্য ভূমিকা পালন করছে : প্রধানমন্ত্রী
সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)

‘খুচরা জিনিস নিয়ে কোর্ট সময় কাটায় কেন?’ – প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার বৈধতা নিয়ে সংসদে উত্থাপিত প্রশ্নে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, ‘লাখ লাখ মামলা পড়ে আছে কোর্টে, তার কোনো খবর নাই। বাচ্চারা পরীক্ষা দেবে কি দেবে না সেটা নিয়ে মামলা করে বসে থাকে। সেটা নিয়েও রিট করে। সেটা নিয়েই কোর্ট সময় কাটায় অথচ অনেক জরুরি মামলা, এতগুলো সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয়েছে। জেএমবি গ্রেফতার হয়েছে। অনেকের ফাঁসির শুনানি বাকি সেগুলোর শুনানির সময় নেই। এই সমস্ত খুচরা জিনিস নিয়ে কোর্ট সময় কাটায় কেন?’

সংসদ অধিবেশনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের পয়েন্ট অব অর্ডারে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষার সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তার জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) রাতে এসব কথা বলেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে একই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য, পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষার বৈধতা নিয়ে আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ হাইকোর্টে রীট করলে গত বছরের ৩১ আগস্ট আদালত এই পরীক্ষা পদ্ধতিকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- এই মর্মে রুল জারি করে। এ রীটের কথা উল্লেখ করেই জাতীয় পার্টির কাজ ফিরোজ রশীদ বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি ওই পরীক্ষা পদ্ধতির সমালোচনাও করেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ছেলে-মেয়েদের কল্যাণের জন্য এটা করছি।

আমরা উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দিচ্ছি। হয়তো দেখা যাবে কোনো একদিন কেউ রিট করে বসে থাকবে যে, কেন আমরা শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিচ্ছি। বাংলাদেশে কিছু লোক যেন আছেনই অনবরত রিট করা আর এটার উপরে আলোচনা করা। এই ব্যাখ্যা বহুবার দিয়েছি। তারপরেও যখন প্রশ্ন তুললেন কেন পরীক্ষা হবে আমি অবাক হয়ে গেলাম। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, আমি প্রশ্নকর্তাকে জিজ্ঞাসা করি-ছেলেমেয়েরা কি মনোযোগী হচ্ছে না? কোচিং আলাদা জিনিস। যখন কয়েকটা ছেলে-মেয়ে বেছে নিয়ে পড়ানো হয়, সেটাও এক ধরনের কোচিং। শিক্ষকরা আলাদা করে পড়াচ্ছন সেটা কি কোচিং না? আমি জানি না আদালত কি রায় দেবে। পড়াশোনা বন্ধ করার যদি রায় দেয় এর থেকে দু:খের আর কিছু থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা পদ্ধতি আমিই চালু করেছি। দায় যদি কিছু হয় সেটা আমার। আগে ৫ম ও ৮ম শ্রেণীতে বৃত্তি পরীক্ষার জন্য হাতে গোনা কয়েকটি ছেলে-মেয়েদের বাছাই করে তাদেরকে আলাদাভাবে শিক্ষকরা পড়াতো। শিক্ষকরাই ঠিক করে দিত কোনো ছেলে-মেয়ে বৃত্তি পরীক্ষা দেবে। অন্য শিক্ষার্থীদের দিকে শিক্ষকরা নজর দিত না। কেন তারা বঞ্চিত হবে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব দিক বিবেচনা করেই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ৫ম ও ৮ম শ্রেণীতে সবাই পরীক্ষা দেবে। মেধাবী ও গরিব ছাত্র-ছাত্রীরা বৃত্তি পাবে। পরীক্ষা শেষে তারা একটি সার্টিফিকেট পাবে, এতে এসব ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। তিনি বলেন, আগে ছাত্র-ছাত্রীদের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সময় তাদের ভয়ভীতি থাকতো। কিন্তু এই পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা ব্যবস্থা থাকায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠা শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সময় ভয়-ভীতি থাকে না। এতে পরীক্ষার ফলাফল প্রতিবছরই ভালো হচ্ছে।

প্রশ্নকর্তা জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করায় ছাত্র-ছাত্রীরা কী পড়াশুনায় মনোযোগী হচ্ছে না? পাসের হার কী বাড়ছে না? কোচিং বিষয়টি অন্য। এক্ষেত্রেও আমার প্রশ্ন, আগের নিয়মে যখন ৫ম ও ৮ম শ্রেণীতে বৃত্তি পরীক্ষার সময় শিক্ষকরা হাতে গোনা কিছু ছাত্র-ছাত্রীকে বাছাই করে আদালা পড়াশুনা করায়, সেটিও তো এক ধরনের কোচিং। শিক্ষকরা বৃত্তির নামে ১০-১২ ছেলে- মেয়েকে পড়াবে কেন? সবাইকে পড়াবে। আর এই পরীক্ষা পদ্ধতি যুক্তরাজ্যসহ অনেক উন্নত দেশেই রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরাও সেই ধরনের পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করেছি। একজন ছাত্র পঞ্চম ও ৮ম শ্রেণীতে পরীক্ষা দিয়ে সার্টিফিকেট হাতে নেওয়ার পর তাদের মুখের কত হাসি, কত আনন্দ, এটাও কি তাদের চোখে পড়ে না?

 

সংসদ প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম