পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে সংসদে ক্ষোভ; শিক্ষামন্ত্রীর বিবৃতি দাবি

পাবলিক পরীক্ষা প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে জাতীয় সংসদে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দাবি করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাংসদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।

সর্বস্তরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে জিয়াউদ্দিন আহমেদ প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের বিষয়ে এ বিবৃতি দাবি করেন।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বের পর পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে জাতীয় পার্টির সাংসদ জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। এর থেকে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না।

প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে জাপার এই সাংসদ বলেন, ‘পত্রিকায় এসেছে প্রশ্ন ফাঁসের বাজার বাংলাদেশ। শিক্ষার সর্বস্তরে পরীক্ষা ফাঁস। শিক্ষা বাণিজ্যে পরিণত হওয়ার জন্যই প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। কোচিং চলছে, প্রাইভেট টিউশনি চলছে। আগামী প্রজন্মের এই ভবিষ্যৎ যদি সুশিক্ষিত না হয়, তারা যদি নিজেরা নিজেকে তৈরি না করে, তাহলে তাদের কাছে আমরা কী প্রত্যাশা করতে পারি! একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র যদি নকল শেখে, তার গার্ডিয়ানরা যদি প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তার হাতে তুলে দেয়, তাহলে তার কাছ থেকে আমরা কী আশা করতে পারি!’

প্রাথমিক স্তরের সমাপনী পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষাবিদের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে জাতীয় পার্টির সাংসদ বাবলু বলেন, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, পরীক্ষার প্রয়োজন নেই প্রাথমিক পর্যায়ে। ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন পরীক্ষার আধিক্যই এই প্রশ্ন ফাঁসের উৎস। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, ‘ফাঁস প্রশ্নের ডাক্তারের রোগী মরণাপন্ন—এই হচ্ছে দেশের অবস্থা। আমরা এর থেকে মুক্তি চাই, পরিত্রাণ চাই।’ তিনি বলেন, ‘অন্য জায়গায় দুর্নীতি হলে কিন্তু সমাজে এফেক্ট করবে না। কিন্তু শিক্ষিত জাতি যদি আমরা নির্মাণ করতে না পারি, তাহলে সমাজের স্তম্ভ ভেঙে পড়বে। স্বাধীনতায় চেতনায় ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারব না।’

প্রযুক্তির ব্যবহার করে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে উল্লেখ করে সাবেক মন্ত্রী বাবলু বলেন, ‘একদিকে প্রযুক্তি আমাদের সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রযুক্তি আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। পরীক্ষার এক ঘণ্টা আগে শিক্ষকেরা প্রশ্নের ছবি তুলে তা বাইরে পাঠিয়ে দেন। সেখান থেকে আবার উত্তর চলে আসে ওই প্রযুক্তির মাধ্যমে। ছোট বাচ্চারা প্রযুক্তির এই খারাপ জিনিসটা শিখছে। যারা এই প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে, তাদের কাছে আমরা কী আসা করতে পারি। এর সুরাহা না করলে আগামী দিনে আমাদেরই পস্তাতে হবে।’

পয়েন্ট অব অর্ডারে জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা মাসের ১৫ দিন জেলা সদরে থাকেন। প্রশিক্ষণ ও বার্ষিক সভাসহ নানা কর্মসূচির কথা বলে তাঁরা এভাবে কর্মস্থল ছেড়ে জেলা সদরে থাকেন। এর ফলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ছে।