একই আদেশের বিরুদ্ধে দুই আবেদন, আইনজীবীকে তলব
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার: নির্দেশনা স্থগিত করেননি আপিল বিভাগ

বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারসংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা ও রিমান্ড-সংক্রান্ত ১৬৭ ধারা নিয়ে আদালতের নির্দেশনা স্থগিত করেননি আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে নির্দেশনার বিষয়ে আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চে বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রিভিউ আবেদনটির শুনানি হয়। শুনানিতে সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ আবেদনের বিষয়ে অধিকতর শুনানি হবে।

আদালতে রিভিউ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। অন্যদিকে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও ব্যারিস্টার অনিক আর হক।

পরে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘সবকিছু দেখে আদালত আমাদের লিভ (আপিলের অনুমতি) দিয়েছেন। স্থগিতাদেশ আগেও ছিল না, এখনো দেয়নি। রায় হওয়ার পর যেভাবে ছিল সেভাবেই আছে।’

আইনজীবী অনিক আর হক বলেন, ‘রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের ছয় দফা নির্দেশনা বাতিল চেয়েছে। সে বিষয়ে শুনানি হয়েছে। আদালত অধিকতর শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন। তবে নির্দেশনাগুলো স্থগিত করেননি।’

গত ৫ জানুয়ারি বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা ও রিমান্ড সংক্রান্ত ১৬৭ ধারা সংশোধনের নির্দেশনার বিষয়ে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।

এর আগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা ও রিমান্ড সংক্রান্ত ১৬৭ ধারা সংশোধনের নির্দেশনার বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল ২০১৬ সালের ২৪ মে কিছু নির্দেশনা দিয়ে খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।

প্রেক্ষাপট

১৯৯৮ সালে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে বেসরকারি ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বছরের ২৩ জুলাই মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে মারা যান রুবেল। এরপর রুবেলের মৃত্যুর তদন্তের জন্য বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের সমন্বয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে তৎকালীন সরকার।

তদন্ত শেষে ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের পক্ষে কয়েকটি সুপারিশ করে কমিটি। এ সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ার প্রেক্ষাপটে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। ওই রিট মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল এ ব্যাপারে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট।

রায়ে ছয় মাসের মধ্যে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রচলিত বিধান সংশোধন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ওই ধারাগুলো সংশোধনের আগে সরকারকে কয়েক দফা নির্দেশনা মেনে চলার জন্য বলা হয়। এর বিরুদ্ধে আপিলে যান রাষ্ট্রপক্ষ।

আরও পড়ুনবিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার-রিমান্ড : আইন ও রায়ের তুলনামূলক প্রতিবেদন দাখিল করল রাষ্ট্রপক্ষ

আপিল আবেদনে বলা হয়, এ দুটি ধারা সংশ্লিষ্ট যে আইনে রয়েছে, তা যথেষ্ট ও সঠিক। এজন্য আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের কোনো প্রয়োজন নেই। ২০০৪ সালে সরকারের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। তবে হাইকোর্টের ওই নির্দেশনাগুলো স্থগিত করেননি। দীর্ঘদিন পর ২০১৬ সালের ১৭ মে আপিল শুনানি শেষে ২৪ মে রায় ঘোষণা করা হয়।