লিগ্যাল এইডের টোল ফ্রি ‘১৬৪৩০’ নম্বর

বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাচ্ছে শিশুরাও

মাগুরায় ৩০ বছর বয়সী রাসেলের (ছদ্ম নাম) সঙ্গে বিয়ে হয় ১৩ বছর বয়সী শিশু সুমাইয়ার (ছদ্ম নাম)। বিয়ের পর থেকেই সাংসারিক বিভিন্ন মত পার্থক্য নিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে শিশু সুমাইয়া। কিন্তু নির্যাতনের মাত্রা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে নিরুপায় হয়ে পড়ে সুমাইয়া। কার কাছে যাবে, নিজের কথাগুলো কাকে শোনাবে, কীভাবে সমস্যার সমাধান করবে- তা নিয়েই চিন্তায় পড়ে মাত্র ১৩ বছর বয়সে গর্ভবতী হওয়া শিশু সুমাইয়া। ঠিক সে সময়েই সুমাইয়ার হাতে আসে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা নেওয়ার ‘১৬৪৩০’ নম্বরটি।

জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কল সেন্টার থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গর্ভবতী থাকাবস্থায় স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সুমাইয়া লিগ্যাল এইডের টোল ফ্রি ‘১৬৪৩০’ নম্বরটিতে ফোন করে। ফোন করে সে তার অবস্থা ব্যাখ্যা করে আইনি সহায়তা চায়। জবাবে কল সেন্টার থেকে সুমাইয়াকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ (পারিবারিক মামলা) বা দুজনের মধ্যে মধ্যস্থতা (মেডিয়েশন) করানো সংক্রান্ত আইনগত পদ্ধতিগুলো তুলে ধরা হয়। এর মধ্য থেকে সুমাইয়া তার স্বামীর সঙ্গে সংসার করার ইচ্ছা পোষণ করে এবং মধ্যস্থতার পদ্ধতি বেছে নেয়।

জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কল সেন্টার থেকে এরপর সুমাইয়ার আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য মাগুরার স্থানীয় লিগ্যাল এইড অফিসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে সুমাইয়াকেও তার বাসা সংলগ্ন লিগ্যাল এইডের কর্মকর্তাদের নম্বর ও ঠিকানা সরবরাহ করা হয়। এভাবে সুমাইয়ার মতো আরও শত শত শিশু বিনামূল্যে আইনি সহায়তা ও পরামর্শ নিতে প্রতিদিন ফোন করছে টোল ফ্রি ‘১৬৪৩০’ নম্বরে।

দেশের সকল শ্রেণির মানুষকে ‘আইনি সেবা’ দিতে টোল ফ্রি ‘১৬৪৩০’ নম্বরটি ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘সরকারি আইনি সেবার মানোন্নয়নে সহায়তা প্রদান’ প্রকল্পের অধীনে নম্বরটি সরকারি আইনি সহায়তায় জাতীয় হেল্পলাইন হিসেবে কাজ করছে। শুরুর দিকে শিশুদের আইনি সহায়তা প্রদানের ভাবনা না থাকলেও বাস্তবতা ভিন্নরুপ নেওয়ায় গত ১ নভেম্বর প্রাপ্তবয়স্ক ছাড়াও শিশুদের আলাদাভাবে সহায়তা দিয়ে আসছে সংস্থাটি। সংস্থাটির তথ্য অনুসারে, শিশুদের জন্য আলাদা সেবা চালুর পর থেকেই এই মাসেই এখন পর্যন্ত সারাদেশের ২৫৩জন শিশু ফোন করে আইনি সহায়তা নিয়েছে। মেয়েদের তুলনায় ছেলে শিশুরাই বেশি কল করে আইনি সহায়তা নিচ্ছে বলেও সংস্থাটি জানায়।

জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক মো. জাফরোল হাছান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের সেবা মাধ্যমে নারী ও শিশুদের আগে প্রধান্য দেওয়া হয়। শিশুদের মধ্যে যারা আমাদের লিগ্যাল এইড সুবিধা নিচ্ছে তাদেরকে আরও কিছু সুবিধা ও সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়ে চিন্তা রয়েছে’।

আইনি পরামর্শ-সহযোগিতা নিতে আসা শিশুদের জন্য লিগ্যাল এইডের কর্মকর্তাদের বিশেষ কোনও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে সংস্থাটির পরিচালক বলেন, ‘আমরা উদ্যোগ নেবো, কিন্তু শুরু করিনি। তবে এরই অংশ হিসেবে দেশের সকল লিগ্যাল এইড অফিসকে আমরা গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আমাদের সেবা সম্পর্কে আলোচনা করতে বলেছি। যা এখন পর্যন্ত চলমান রয়েছে’। বাংলা ট্রিবিউন