জঙ্গিদের জামিনে সতর্ক হওয়ার প্রত্যয় বিচারকদের স্মরণ সভা

জঙ্গিদের জামিনে সতর্ক হওয়ার প্রত্যয় বিচারকদের

জঙ্গিদের প্রতি কোনো অনুকম্পা দেখানো হবে না এবং তাদের জামিন দেয়ার ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিচারকরা।

জঙ্গি হামলায় নিহত বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহমেদের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভায় গতকাল মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের জগন্নাথ সোহেল স্মৃতি মিলনায়তনে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে এই স্মরণসভায় ঢাকা জেলা জজ আদালত, মহানগর দায়রা জজ আদালত, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকসহ অন্যান্য জুডিশিয়াল সার্ভিসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এতে বক্তব্য দেন জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান, মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা, আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) ও অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বিকাশ কুমার সাহা, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার গোলাম রাব্বানী, মহাপরিদর্শক (নিবন্ধন) আব্দুল মান্নান খান, যুগ্ম সচিব মাহবুবার রহমান সরকার, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আরা বেগম, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট শেখ হাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জাহিদুল কবির, আইন মন্ত্রনালয়ের উপসচিব মহসিনুল হক প্রমুখ। এছাড়া জগন্নাথ পাঁড়ের বড় ভাই বিশ্বনাথ পাঁড়েও সভায় বক্তব্য দেন।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা ও দায়রা জজ এসএম কুদ্দুস জামান বলেন, ‘ইসলাম ধর্মে কোনো শ্রেণি বিভাগ নেই। পরধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতা ইসলামের শিক্ষা। কিন্তু জঙ্গিবাদের কাজ হলো অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো। ধার্মিকরা কখনো হিংস্র হতে পারে না। তাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে তারা মারা গেলেই বেহেশতে চলে যাবে। এদের প্রতিহত করতে হবে।’

মহানগর দায়রা জজ কামাল হোসেন মোল্লা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিই সেদিন বিচারকদের ওপর হামলা করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়ভাবে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করে চলেছেন।’

ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বিকাশ কুমার সাহা বলেন, ‘জঙ্গিবাদ শুরুই হয়েছিল বিচার বিভাগকে আঘাত করার মাধ্যমে। যারা জঙ্গিবাদকে উসকে দেয়, জঙ্গিবাদকে ধারণ ও লালন করেন তাদের প্রতিহত করতে হবে। জঙ্গিদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। তাদের কোনো জামিনের ব্যাপারে কোনো অনুকম্পা দেখানো যাবে না। আমরা বিচার বিভাগ অনুকম্পা না দেখিয়েই জঙ্গিবাদ রুখতে ভূমিকা পালন করতে পারি।’

স্মরণসভা শেষে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া পরিচালনার করা হয।

২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে ঝালকাঠিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবির) বোমা হামলায় জগন্নাথ ও সোহেল নিহত হন।

২০০৬ সালের ২৯ মে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৭ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন। উচ্চ আদালতে এ রায় বহাল থাকলে ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ পলাতক আসামি আসাদুল ইসলাম আরিফ ব্যতীত দেশের বিভিন্ন আদালতে শীর্ষ ৬ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল এ মামলার পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট হায়দার হুসাইনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

১৮ তম বিসিএস ক্যাডারে ১৯৯৮ সালের ২৪ জুন জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহমেদ সহকারী জজ হিসেবে যোগ দেন। জগন্নাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও সোহেল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।

 

নিজস্ব প্রতিনিধি/লইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম