সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার দুর্নীতি কী তা জনগণের জানার অধিকার আছে বলে দাবি উঠেছে সুশীল সমাজের বক্তাদের কাছ থেকে।
মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) উদ্যোগে ‘আইনের শাসন : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা বলেন।
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন-এর নির্বাহী সদস্য বিচারপতি আব্দুল মতিন। গোলটেবিল বৈঠকে আলোচক হিসেবে সিনিয়র আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, ব্যারিস্টার আমির- উল ইসলাম, ড. তোফায়েল আহমেদ, সৈয়দ আবুল মকসুদ, ড. আসিফ নজরুল, ড. বদিউল আলম মজুমদার, স্থপতি মোবাশ্বার হাসান, গোলাম মর্তুজা, এএসএম আকরাম, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা উপস্থিত ছিলেন।
মূল প্রবন্ধে বিচারপতি আব্দুল মতিন বলেন, আইনের শাসন বা রুল অব ল’ প্রতিষ্ঠা সংবিধানের প্রস্তাবনায় জাতির জন্য অন্যতম অঙ্গীকার। যেমন, অঙ্গীকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার। জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে সংবিধানই হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন। তারই প্রস্তাবনায় আমাদের অঙ্গীকার এই যে, রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হবে সব নাগরিকের জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
ড. কামাল হোসেন বলেন, মানুষ জীবনবাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছে। আমরা সংবিধানে সেটা স্বীকার করেছি। ৪৭ বছর পরেও সংবিধান বহাল আছে। এ দেশের মালিক জনগণ-এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সাতজন বিচারপতি বাতিল করেছেন। আমরা সবাই বলেছি যে, এটা অসাংবিধানিক। তাই আমার মনে হয় না যে, রিভিউর মাধ্যমে এটা বাতিল করা যাবে। এ সংশোধনী বাতিলের ক্ষেত্রে বিচারকদের ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না। স্বাধীন দেশের বিচারককে প্রকাশ্যে তুই তুকারি করা দেশের প্রতিটি মানুষকে অপমান করার শামিল। তিনি আরও বলেন, একটি স্বাধীন দেশে একজন প্রধান বিচারপতিকে যেভাবে সরানো হয়েছে তাতে আমি উদ্বিগ্ন। এটা তারা করতে পারেন না। সংবিধান কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী এ কাজের বিরোধিতা হওয়া উচিত ছিল। আমি মনে করি এটা নিয়ে একটা ক্যাম্পেইন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম বলেন, আইনের শাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জনগণের সামনে আমরা কি উত্থাপন করছি সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যম দ্বারা অনুমোদিত কি-না তাও গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধান অনুধাবন করার মতো উপযুক্ত নাগরিক আমরা তৈরি করতে পারছি কি-না তাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বিচারক নিয়োগে আইন করার জন্য আমরা স্বাধীনতার প্রারম্ভে পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। কিন্তু ৪৭ বছর পরও তা করতে পারিনি। ষোড়শ সংশোধনী মামলায়ও আমি এ বিষয়ে জোর দিয়েছিলাম। বর্তমানে দেশে প্রশাসন ও বিচার বিভাগসহ অনেক ক্ষেত্রেই নিয়োগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড নেই।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, চাকরিতে কোটা সংবিধান সম্মত। কিন্তু সবার জন্য এ কোটা প্রযোজ্য হবে না, কোটা হলো অনগ্রসর শ্রেণির জন্য। বর্তমানে যারা কোটার সুযোগ নিচ্ছেন তাদের সবাই কোটার যোগ্য নয়। বর্তমানে আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইন নয় বরং অর্ডারের অধীনে রয়েছি। তিনি বলেন, একজন বিচারপতি তিনিও মানুষ। তিনি দুর্নীতি করতেই পারেন। কিন্তু তার দুর্নীতিটা কী সেটা জনগণের জানার অধিকার আছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমি মনে করি, মানুষের ভোটের অধিকার না থাকলে আইনের শাসন নিশ্চিত করা যায় না। একজন প্রধান বিচারপতি হঠাৎ করে দুর্নীতিবাজ হয়ে গেলেন। কিন্তু তার বিচার হলো না কেন? তিনি যে দুর্নীতি করেছেন তার সঙ্গে কারা যুক্ত ছিলেন তাও আমরা জানতে চাই। আদালতের প্রতি আমরা আস্থা হারাতে চাই না।