মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো সিন্ডিকেটের অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ

প্রতিবেদক : ল'ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ
প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর, ২০১৮ ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ
উচ্চ আদালত

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো নিয়ন্ত্রণকারী ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট, সিন্ডিকেটের অনিয়ম তদন্তে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৬ মাসের মধ্যে এই তদন্ত করে এর প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে, শুধু ১০টি এজেন্সির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালেশিয়ায় লোক পাঠানো নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থা নিতে সরকারের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে রুল জারি করেছেন আদালত। ওই ১০টি এজেন্সির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (২৯ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আখতার ইমাম ও ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।

মালেশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি উপেক্ষা করে ১০টি এজেন্সির মাধ্যমে লোক নেয়ার ঘটনার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বঞ্চিত অপর ১০টি এজেন্সি গত সপ্তাহে হাইকোর্টে রিট করেন। ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

জানা যায়, বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির অন্যতম বাজার মালয়েশিয়া ২০০৯ সালে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দেয়। ২০১২ সালে সরকারিভাবে কর্মী পাঠাতে দুই দেশ চুক্তি করে। এরপর আড়াই বছরে ৮ হাজার কর্মী যান। তবে সাগরপথে অবৈধভাবে বিপুলসংখ্যক লোক মালয়েশিয়ায় যান। ২০১৫ সালের মে মাসে থাইল্যান্ডে এবং পরে মালয়েশিয়ায় গণকবর পাওয়ার পর বিশ্বজুড়ে হইচই হলে আবারও বাংলাদেশ থেকে বেসরকারিভাবে কর্মী নেয়ার প্রস্তাব দেয় মালয়েশিয়া।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের মধ্যে জি টু জি প্লাস (সরকারি-বেসরকারি) সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মালয়েশিয়া বলে, এই মুহূর্তে তারা আর কর্মী নেবে না। এতে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া ঝুলে যায়। এরপর ২০১৬ সালের নভেম্বরে মালয়েশিয়ার মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসে। ওই বৈঠকে আবার কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের এক বছর পর ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানো শুরু হয়।

জি টু জি প্লাস চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী, কর্মী নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া হয় অনলাইনে। এ কাজের জন্য সিনারফ্ল্যাক্স নামে একটি কোম্পানিকে নিয়োগ দেয় দেশটির সরকার। মালয়েশিয়ান কোম্পানি সিনারফ্ল্যাক্সের সঙ্গে বর্তমানে কর্মী পাঠানো ১০টি এজেন্সি সিন্ডিকেট করে। তাদের দাবি, সিন্ডিকেটের ফলে একদিকে অন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কর্মী পাঠানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগে শ্রমিকদের কাছ থেকে বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে।

সিন্ডিকেটের ১০টি এজেন্সি হলো- ক্যারিয়ার ওভারসিজ, এইচএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স, সানজারি ইন্টারন্যাশনাল, রাব্বী ইন্টারন্যাশনাল, প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটস, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড, আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম ও আল ইসলাম ওভারসিজ।