পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য বরদাস্ত করা যায় না : হাইকোর্ট

প্রতিবেদক : ল'ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ
প্রকাশিত: ২৮ মার্চ, ২০১৯ ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ
উচ্চ আদালত

প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি, সড়কে লাইসেন্সহীন গাড়ি এবং ড্রাইভারদের নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে আদালত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ সময় পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য বরদাস্ত করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি আদালত বলেছেন, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বরদাস্ত করা হবে না।

ঢাকাসহ সারাদেশে ফিটনেসবিহীন ও নিবন্ধনবিহীন যানবাহন এবং লাইসেন্সহীন চালকের তথ্য-সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট এসব কথা বলেন বলে সাংবাদিকদের জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব।

আদালতের বরাত দিয়ে তিনি জানান, আদালত বিআরটিএ এবং রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ির ড্রাইভারদের নৈরাজ্য নিয়ে বলেছেন কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। সবাইকেই আইন মেনে চলতে হবে। আদালত আরও বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে কোনো দেশ উন্নতি লাভ করতে পারে না।

তিনি জানান, আমরা আদালতের নজরে যে পত্রিকাটি তুলে ধরেছি ২৩ মার্চ সেই পত্রিকায় সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের গাড়িতে ধাক্কা দিয়েছিল একটি বাস এবং একই দিনে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ও তরুণ ছাত্রকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় পিষে মেরে ফেলা হয়- এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়। রাজধানীসহ সারাদেশে চলা পরিবহন সেক্টরের এসব নৈরাজ্য আদালতে তুলে ধরেছি। তখন আদালত পরিবহন সেক্টর ও বিআরটিএর নৈরাজ্য খুবই গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন।

আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব আরও বলেন, ‘আমি আদালতে বলেছি, এক বছরে বাংলাদেশের সড়কে ৪ হাজার ৫ শতাধিক মানুষ দুর্ঘটনার স্বীকার হয়ে মারা গেছে অথচ কাশ্মির বা ফিলিস্তিনির গাজার যুদ্ধেও এত লোক মারা যায় না।’

তিনি বলেন, ১০ বছরে হাজার হাজার গাড়ির লাইসেন্স রিনিউ করা হয়নি। দেশের একটি কর্তৃপক্ষ এবং ড্রাইভারসহ সংশ্লিষ্টরা স্বপ্নের সংবিধানের রুল মানছে না। এজন্য আমরা সবাই দায়ী।

আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন, ঢাকাসহ সারাদেশে ফিটনেসবিহীন ও নিবন্ধনহীন কত হাজার বা কত লাখ যানবাহন এবং লাইসেন্সহীন কত হাজার চালক রয়েছে তার তথ্য জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

এছাড়া পরিবহন সেক্টরের বিষয়ে বিআরটিএর বাধ্যবাধকতা থাকায় ওই সেক্টরের (সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের) পরিচালক মাহবুব-ই-রব্বানীকে আগামী ৩০ এপ্রিল সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। পরিচালক ছাড়াও বিআরটিএর চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শক, ঢাকার ট্রাফিক পুলিশের উত্তর ও দক্ষিণের ডিসিকে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এ বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। কতগুলো গাড়ির নিবন্ধন ও চালকের লাইসেন্স নবায়নের জন্য জমা আছে, কেন যথাসময়ে নবায়ন করা হচ্ছে না- সে বিষয়েও তথ্য জানাতে বলা হয়েছে তাদের।

ফিটনেসবিহীন ও নিবন্ধনহীন যান চলাচল এবং লাইসেন্স ছাড়া যান চালানো রোধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে রুলও জারি করেছেন আদালত।

একইসঙ্গে অপর এক রুলে বেঁচে থাকার অধিকার-সম্বলিত সংবিধানের ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদের চেতনা বাস্তবায়নে মোটরযান অধ্যাদেশ-১৯৮৩ সহ সংশ্লিষ্ট সকল আইন কঠোরভাবে মেনে চলতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, বিআরটিএ চেয়ারম্যানসহ সাতজনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

৭১ হাজার ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ে গত ২৩ মার্চ একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বুধবার (২৭ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।

বুধবার ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব। এ সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিনউদ্দিনের বক্তব্য জানতে চান আদালত।

আদেশের আগে আদালত বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। সকলকেই আইন মেনে চলতে হবে। আদালত বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে কোনো দেশ উন্নতি লাভ করতে পারে না। আদালত আরও বলেন, আপনারা সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের দিকে তাকিয়ে দেখুন। বাংলাদেশের পরিবহনের মতো এতে নৈরাজ্য আর কোথাও নেই।