পিএইচডি জালিয়াতি রোধে হাইকোর্টে ঢাবির খসড়া প্রবিধান, আপত্তি রিটকারীর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভ (থিসিস) কী প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা হয় এবং এজন্য কোনো সফটওয়্যার আছে কি-না তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই নির্দেশনার আলোকে পিএইচডি অভিসন্দর্ভের (থিসিস) জালিয়াতি রোধে পদক্ষেপ নিতে একটি খসড়া প্রবিধান (রেজ্যুলেশন) হাইকোর্টে জমা দিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।
আজ রোববার (৩০ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ সক্রান্ত একটি রিটের শুনানিতে এ প্রবিধান জমা দেওয়া হয়।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মনিরুজ্জামান লিংকন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কালিপদ মৃধা।
শুনানিতে ঢাবি কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়, পিএইচডি গবেষণায় অভিসন্দর্ভ (থিসিস) জালিয়াতি রোধে কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি থিসিস কী প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংবলিত একটি খসড়া প্রবিধান (রেজ্যুলেশন) জমা দেওয়া হয়েছে।
খসড়া প্রবিধান অনুযায়ী পিএইচডি গবেষণার থিসিসের প্ল্যাগারিজম প্রতিরোধে কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে নকলের অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আদালতকে অবহিত করা হয়।
তবে রিটকারীর দাবি ছিল পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভ (থিসিস) নকল করা বন্ধে তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ (আইসিটি এক্সপার্ট) কিংবা কোন সফটওয়্যারের মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের পদ্ধতি অবলম্বন করা। কিন্তু ঢাবি কর্তৃপক্ষের খসড়া প্রবিধানে বিষয়টি না থাকায় রিটকারি আইনজীবী প্রবিধানটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আপত্তি তোলেন।
এপ্রেক্ষিতে আবেদনকারী আইনজীবীকে পিএইচডি গবেষণার থিসিস সংরক্ষণ ও প্ল্যাগারিজম প্রতিরোধে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার সংক্রান্ত পরামর্শ ও প্রস্তাব আদালতকে অবহিত করতে বলেছেন হাইকোর্ট। সেই সাথে এ মামলার শুনানি দুই সপ্তাহের জন্য মুলতবি করছেন।
রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মনিরুজ্জামান লিংকন এসব তথ্য ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী জানান, পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভ (থিসিস) সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় আদালতে আবেদনের অন্যতম বিষয় ছিল এগুলো যেন আইসিটি এক্সপার্ট বা কোন মানসম্পন্ন সফটওয়্যার দিয়ে যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ রাখা হয়। কিন্তু ঢাবি কর্তৃপক্ষের এ সংক্রান্ত খসড়া প্রবিধানে সেটি অনুপস্থিত।
অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বলেন, প্রচলিত বা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে যদি থিসিস সংরক্ষণ করা হয় তবে আগের মতোই ত্রুটি-বিচ্যুতিসহ নকল করার শঙ্কা থেকেই যায়। এজন্য আদালতে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেছি। আদালত এ বিষয়ে পরামর্শ ও প্রস্তাব উপস্থাপন করতে বলেছেন।
পেছনের কথা
এর আগে, গত বছরের ২১ জানুয়ারি দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ও সমমানের ডিগ্রি কীভাবে অনুমোদন করা হয়, সেগুলো যথাযথ আইন মেনে হয়েছে কি-না তা জানতে চেয়ে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনার আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও ঢাবির অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
ওই প্রতিবেদন দেখে আদালত ঢাবি কর্তৃপক্ষকে আরেকটি নির্দেশ দেন। নির্দেশনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভ (থিসিস) কী প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা হয় এবং এ জন্য কোনো সফটওয়্যার আছে কি-না তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। দুই মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলেছিলেন আদালত।
রিটের প্রেক্ষাপট
২০২০ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮% নকল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯৮ শতাংশ হুবহু নকল পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভের (থিসিস) মাধ্যমে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম লুৎফুল কবীর।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে একই বছরের ২২ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন।
হাইকোর্টের রুল
ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে পিএইচডি ও সমমানের ডিগ্রী প্রদানের ক্ষেত্রে জালিয়াতি বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
পাশপাশি পিএইচডি ডিগ্রী প্রদানের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র (এনওসি) নেওয়ার বিধান করার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তাও রুলে জানতে চেয়েছেন আদালত।
২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি এ কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
তিন মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া জালিয়াতি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের বিষয়ে ঢাবি ভিসির (উপাচার্য) ব্যাখ্যা তলব করেন হাইকোর্ট।