ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তকে সাময়িক বরখাস্ত কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট

প্রতিবেদক : ল'ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ
প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল, ২০২২ ৫:৩৪ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: জয়দীপ্তা দেব চৌধুরী

ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারীর গ্রেফতার বা হাজতবাসে কারণে সাময়িক বরখাস্তের বিধান কেন অসাংবিধানিক নয়, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য বিবাদীদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ (৬ এপ্রিল) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব, তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার মো. মাজেদুল কাদের।

এর আগে ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানার চর চাঁদপুর নব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ আজিজ খান উক্ত রিট আবেদন দাখিল করেন।

আবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের সদরপুর থানার একটি ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হয়ে প্রায় তিন মাস হাজতবাসের পর জামিনে মুক্ত হন শিক্ষক এম.এ.আজিজ খান। উক্ত মামলায় হাজতবাসের কারণে ২০১৩ সালে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় এবং নিয়মানুযায়ী তিনি খোরপোষ ভাতা পেয়ে আসছিলেন। বাংলাদেশ সরকারি চাকুরি বিধি ১৯৭৩ এর পার্ট ১,বিধি ৭৩ এর নোট ১ অনুযায়ী তাকে চাকুরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দীর্ঘদিন যাবৎ উক্ত ফৌজদারি মামলা চলমান থাকায় তাহার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ চলমান রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে সরকারি চাকুরি বিধি ১৯৭৩, পার্ট ১, বিধি ৭৩ এর নোট ২, সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এবং আবেদনকারীর মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী দাবী করে রিট আবেদনটি দাখিল করা হয়। একই সাথে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না মর্মে রিট আবেদনে প্রার্থনা করা হয়।

রিটে শিক্ষা সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ডেপুটি পরিচালক (ঢাকা বিভাগ), জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফরিদপুর, উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, সদরপুর এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার সদরপুরকে বিবাদী করা হয়েছে।

আদালতে শুনানিতে আইনজীবী বলেন, কোনো উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অপরাধী প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যক্তিকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করা আইন বিজ্ঞানের মূলনীতির সাথে সাংঘর্ষিক এবং সংবিধানের ৪০ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত চাকুরির অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক। এছাড়াও বিভাগীয় কোনো কার্য ধারা গ্রহণ ব্যতীত অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আবেদনকারীকে সাময়িক বরখাস্তের অধীন রাখা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১ এবং ৩২ এর পরিপন্থী। একইসাথে এই বিধানটি নিপিড়নমূলক এবং ন্যায় বিচারের পরিপন্থী।

এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সরকারি চাকুরি বিধি ১৯৭৩, পার্ট ১, বিধি ৭৩ এর নোট ২, কেন সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এবং বাতিল ঘোষণা করা হবেনা এবং আবেদনকারীর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।