জুরাইনের ঘটনায় এক আইনজীবীর জামিন

ঢাকার জুরাইনে মোটরসাইকেল আরোহী এক দম্পতিকে আটকানোর পর কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় হওয়া মামলায় আইনজীবী ইয়াসিন আরাফাত ভূঁইয়াকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার (১৪ জুন) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন এই আদেশ দেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান মানিক, অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান, অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মামুন ও অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান খান রচিসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন।
শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট আজমেরী মোশাররফ সুমী। আদেশের বিষয়টি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে নিশ্চিত করে তিনি বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেখা করা শর্তে ৫ হাজার টাকা বন্ডে জামিন মঞ্জুর করেছেন।
এর আগে গত বুধবার (৮ জুন) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত দুই আইনজীবীসহ ৫ জনের তিন দিনের রিমান্ড আদেশ দেন।
রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- শিক্ষানবিশ আইনজীবী সোহাকুল ইসলাম রনি ও তার শ্যালক আইনজীবী ইয়াসিন আরাফাত, স্থানীয় বাসিন্দা মো. শরীফ, মো. নাহিদ এবং মো. রাসেল।
অন্যদিকে, মামলার একমাত্র নারী আসামি আইনজীবী ইয়াসিন জাহান ভূঁইয়া নিশানের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। তবে আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে রিমান্ড স্থগিত করা হয়।
জানা গেছে, গত ৭ জুন সকালে স্ত্রীকে মোটরসাইকেলে নিয়ে বের হন সোহাকুল। উল্টো পথে আসা এবং তাঁর স্ত্রীর মাথায় হেলমেট না থাকায় জুরাইন সিগন্যালে তাঁদের আটকান ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা।
দুই পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে ইয়াছিন জাহান পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর গায়ে হাত তোলার অভিযোগ করেন। এরপর স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে একজন ট্রাফিক সার্জেন্টসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হন।
এ ঘটনায় সোহাকুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী ইয়াছিন জাহানসহ তিনজনের নাম উল্লেখপূর্বক ৪শ জনকে আসামি করে শ্যামপুর থানায় মামলা করে পুলিশ। সেদিনই ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর পরদিন ৮ জুন আসামিদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন রিমান্ডের আবেদন করেন শ্যামপুর থানার পরিদর্শক খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহমুদ।
অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) তোফাজ্জল হোসেন উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে পাঁচজনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আর ইয়াছিন জাহানের জামিন মঞ্জুর করেন।
আসামিদের রিমান্ডে পাঠানোর প্রতিবাদ জানিয়ে বেলা সাড়ে তিনটা থেকেই আদালত এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেন শতাধিক আইনজীবী। বিকেল সাড়ে পাঁচটার সময়ও ঢাকার সিএমএম আদালতের সামনে অবস্থান নিয়ে গ্রেপ্তার আইনজীবীদের মুক্তির দাবিতে তাঁদের স্লোগান দিতে দেখা গেছে। তাঁরা বলেন, মামলায় আইনজীবীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সঠিক নয়।
দুই আইনজীবীকে রিমান্ডে নেওয়ায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী সৈয়দ ফজলে ইলাহীর পক্ষে আইনজীবী এবিএম শিবলী সাদেকীন।
রিটের শুনানি নিয়ে গত ৯ জুন এ মামলার নথি তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রিমান্ড কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছিলেন আদালত।
গত ১২ জুন রাজধানীর জুরাইনে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় দুই আইনজীবীর রিমান্ড মঞ্জুরের পর ওই মামলার নথি তলব করে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। সেই সাথে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য প্রেরণ করেন।
আজ মঙ্গলবার (১৪ জুন) এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।
শুনানিতে আপিল বিভাগ রিটের পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা বিচারিক আদালতে দুই আইনজীবীর জামিন আবেদন করুন। তারা জামিন না দিলে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করুন। হাইকোর্টে জামিন না দিলে তারপর আমরা দেখব।
আদালতে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, পুলিশ যদি অপরাধ করে তার বিচার হবে আর আইনজীবী অপরাধ করলে তারও বিচার হবে।
পরে আদালত আগামী রোববারের মধ্যে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে নির্দেশ দেন এবং শুনানি মুলতবি করেন।