ফেসবুকে আদালত নিয়ে বিরূপ মন্তব্যকারীদের সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়েছেন হাইকোর্ট

নরসিংদীর রেলস্টেশনে হেনস্থার শিকার তরুণীর জামিন শুনানিকালে পোশাক নিয়ে হাইকোর্টের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে আদালত নিয়ে বিরূপ মন্তব্যকারীদের সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়েছেন হাইকোর্ট।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরূপ মন্তব্যের ঘটনা উচ্চ আদালতের নজরে আনা হলে বুধবার (১৭ আগস্ট) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ তথ্য চান।
বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. কামাল হোসেন। তিনি আদালতকে বলেন, শামীম আশরাফ নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশকে হাইকোর্টের কাঠমোল্লাদের হাতে দিয়ে আমি দেশ ছেড়ে কোথাও যাব না’। এটা লিখে ওই ব্যক্তি হাইকোর্টকে আন্ডারমাইন করেছেন। আদালতকে অবজ্ঞা করেছেন।
এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আবুল হাশেমও আদালত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা ফেসবুকের একটি স্ক্রিনশর্ট উপস্থাপন করেন। তিনি এসব মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেন।
তখন আদালত বলেন, আমরা পোশাক নিয়ে কোনো মন্তব্য করিনি। আদেশে কিছু লিখিনি। শুধু ভিডিও দেখে প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছি একেবারে গ্রাম্য এলাকায় এ ধরণের পোশাক পড়ে যাওয়া সমীচীন কি-না?
পরে আদালত আইনজীবীদের উদ্দেশ করে বলেন, ফেসবুকে কারা আদালত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছে, সুনির্দিষ্ট করে তাদের তথ্য দিন। আমরা বিষয়টি দেখব।
পরে আইনজীবী মো. কামাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, হাইকোর্ট শুনানিকালে যেসব প্রশ্ন করেছেন, মন্তব্য করেছেন, সেটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় আদালত সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আদালত অবমাননা করেছেন। তাদের বিষয়ে তদন্ত করে পুলিশ আইনি পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে আদালতের নজরে এনেছিলাম। আদালত আরও সুনির্দিষ্ট করে তথ্য নিয়ে যেতে বলেছেন।
এর আগে নরসিংদী রেলস্টেশনে পোশাকের জন্য তরুণীকে হেনস্তার প্রসঙ্গ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) হাইকোর্ট প্রশ্ন রেখেছেন, সভ্য দেশে এমন পোশাক পরে রেলস্টেশনে যাওয়া যায় কি না। আদালত বলেছেন, ‘(ওই তরুণী) প্ল্যাটফর্মে আপত্তিকর অবস্থায় ছিল, সিডিতে দেখা যায়। এটি আপনার অধিকার? পোশাকের অধিকার?’
পোশকের জন্য নরসিংদী রেলস্টেশনে তরুণীকে হেনস্তার অভিযোগে করা মামলায় এক আসামির জামিন আবেদনের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে হাইকোর্ট এ প্রশ্ন রাখেন। বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে মঙ্গলবার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানি নিয়ে আদালত মার্জিয়া আক্তার ওরফে শিলাকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন।
এদিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ঘটনাটির সূত্রপাত করেছিলেন শিলা। তিনি বলেছিলেন, এ রকম পোশাক পরেছ? এরপর লোকজন ডাকেন শিলা। পোশাক নিয়ে অশালীন মন্তব্যসহ তরুণী ও তাঁর বন্ধুদের শার্টের কলার ধরে টানাহেঁচড়া করে মাফ চাইতে বলেন শিলা।
শুনানির একপর্যায়ে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দা জাহিদা সুলতানা বলেন, কী পোশাক পরবে, সে বিষয়ে ব্যক্তির অধিকার আছে। তাই বলে এ জন্য অপমান ও হেনস্তা করতে পারে না।
তখন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ করার অধিকার আছে কি না? পোশাক সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে না? যে সমাজে যাবেন, সে সমাজের আর্থসামাজিক অবস্থাও একটি বিষয়। ঢাকায় এক ধরনের, গ্রামে অন্য ধরনের।’ তখন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল।
শিলার আইনজীবী মো. কামাল হোসেন শুনানিতে বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ মামলা করেননি। মামলার আঞ্চলিক এখতিয়ার ঢাকায় হলেও গ্রেপ্তারের পর শিলাকে নরসিংদীর আদালতে হাজির করা হয়, যা বেআইনি।
উল্লেখ্য, ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী গত ১৮ মে ভোরে নরসিংদী রেলস্টেশনে পোশাকের কারণে গালিগালাজ ও মারধরের শিকার হন। তাঁর সঙ্গে থাকা দুই বন্ধুও মারধরের শিকার হন। এক ব্যক্তি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে পুরো দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট করেন। পোশাকের জন্য তরুণীকে হেনস্তার এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে।
এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনা হয়। এরপর নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পক্ষ থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ভৈরব রেলওয়ে থানায় মামলা করা হয়। গত ৩০ মে শিলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।