গণমুখী পুলিশিসেবা নিশ্চিত করতে এরইমধ্যে বেশ কিছু ই-সেবা চালু করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বড় সেবাটি চালু হবে ‘৯৯৯’ সার্ভিস সেন্টার উদ্বোধনের মাধ্যমে। সফটওয়্যারের কাজ শেষ হয়েছে ‘সার্ভিস ফ্রেন্ডলি ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’-এর। এটিও বাস্তবায়নের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গত মাসেই চালু করা হয়েছে ‘আইজিপি কমপ্লেইন সেল’। এসব ই-সেবা বা ডিজিটাল সার্ভিস প্রকাশ্য হলেও গোয়েন্দা পুলিশের রয়েছে আরও কিছু ডিজিটাল ব্যবস্থা। সেসব ব্যবস্থা জঙ্গি ও সন্ত্রাসীসহ সন্দেহভাজনদের গতিবিধি নজরদারিতে কাজে ব্যবহার করেন গোয়েন্দারা।
পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ শাখার এআইজি সহেলী ফেরদৌস গণমাধ্যমকে জানান, ‘‘এ টু আই প্রকল্পের সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ডের (সিফ) সহযোগিতায় গত ১৫ জানুয়ারি (২০১৭ সাল) ‘অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালু করা হয়। যার মাধ্যমে কোনও রকম ভোগান্তি ছাড়াই গড়ে ১১ কার্যদিবসের মধ্যে সাধারণ মানুষ ঘরে বসে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারছেন। এই সার্টিফিকেটে থাকছে কিউআর কোড। যা স্ক্যান করে সরাসরি পুলিশের ওয়েবসাইট থেকে ইস্যু হওয়া সার্টিফিকেটের ডিজিটাল কপি দেখা যাবে। যার ফলে বিদেশি মিশনগুলো অনলাইনে খুব সহজেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট যাচাই করতে পারছে।’’
গত ১৩ নভেম্বর থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য চালু করা হয় ‘আইজিপি কমপ্লেইন সেল’। পুলিশ সদস্যের যেকোনও অপেশাদার ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সরাসরি, কুরিয়ার সার্ভিস, ডাকযোগে, মোবাইল ফোনে অভিযোগ করতে পারবেন। সেটাতেও যদি সম্ভব না হয় তাহলে ই-মেইলে complain@police.gov.bd অভিযোগ করতে পারবেন। আগে এ সেলে শুধু অফিস চলাকালীন সময়ে অভিযোগ করা যেত। পুলিশ সদর দফতরের একজন অতিরিক্ত ডিআইজির তত্ত্বাবধানে এ সেলটি পরিচালিত হচ্ছে।
ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশান অ্যান্ড ফাইন পেমেন্ট সিস্টেমটির ডেভেলেপমেন্ট শেষ হয়েছে এরইমধ্যে। বর্তমানে ডিএমপিতে এ সিস্টেমের কার্যক্রম চালু রয়েছে। সিএমপি, ঢাকা ও কুমিল্লা জেলায় পাইলট টেস্টিং চলছে। শিগগিরই সেসব স্থানেও চালু করা হবে। পয়েন্ট অব সার্ভিস (পস)-এর মাধ্যমে অনলাইনে মোটরযান সংক্রান্ত মামলা রুজু ও জরিমানা আদায়ের ফলে পুলিশের কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, গতিশীলতা ও সেবার মান বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এছাড়া গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স যাচাই-বাছাইকরণের জন্য ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড পুলিশের সকল মেট্রোপলিটন, হাইওয়ে ও জেলা পুলিশকে দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের (২০১৬ সাল) ১৩ অক্টোবর চালু করা হয় মোবাইল অ্যাপস ‘বিডি পুলিশ হেল্প লাইন’। এই অ্যাপস-এর মাধ্যমে যে কেউ লগইন করে অপরাধ ও অপরাধী সম্পর্কে তথ্য দেওয়া ও যেকোনও ধরনের পুলিশি সেবা চাইতে পারেন। এর মাধ্যমে ওসি থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন যেকোনও পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য, কথোপকথন, ছবি ও ভিডিও পাঠাতে পারেন জনসাধারণ। পুলিশ কর্মকর্তারা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে বার্তাদাতাকে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত করতে পারেন।
সার্ভিস ফ্রেন্ডলি ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এসএফটিএমএস) বাস্তবায়নের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এরইমধ্যে সফটওয়্যারটির সব ধরনের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। মোবাইল অ্যাপস, এসএমএস ও ওয়েব ইন্টারফেসের মাধ্যমে জনগণ ট্রাফিক সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য, বিকল্প রুট, ইমার্জেন্সি সাপোর্ট নিতে পারবেন।
রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের ফেসবুক পেজ। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটেরও আলাদা ফেসবুক পেজ রয়েছে। জনমনে পুলিশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা দিতেই এসব ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে।
‘বাংলাদেশ পুলিশ ইউটিউব চ্যানেল’ নামে রয়েছে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল। এ চ্যানেলে পুলিশের ইতিবাচক ও উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের ভিডিও নিয়মিত আপলোড করা হচ্ছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সেবার মান উন্নয়নে সহায়ক বাংলাদেশ পুলিশের জন্য উন্নত ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। এই ওয়েবসাইটে পুলিশের সিটিজেন চার্টার, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, এক্সপাট্রিয়েট হেল্প সেল, মিসিং ভেহিক্যাল, কমপ্লেইন্ট বাটনের মাধ্যমে যেকোনও বিষয়ে সেবা, অভিমত ও অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের নিয়োগ ও টেন্ডার সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়।
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগ থেকে জাতীয় জরুরি সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ‘ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস সেল সেন্টার-৯৯৯’ বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলমান। এ সেবায় পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি মেডিক্যাল সেবা পাওয়া যাবে। দেশের যেকোনও প্রান্ত থেকে ল্যান্ড ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ৯৯৯-এ ডায়াল করা যাবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এটি চালু করা হবে।
বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের তথ্যাদি যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য ‘সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ (সিআইএমএস) চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে অতি সহজেই অপরাধীকে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।
ভিডিও কনফারেন্স সিস্টেমও চালু রয়েছে পুলিশ সদর দফতরে। প্রায়ই রেঞ্জ ও মেট্রোসহ মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধ দমনসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পরামর্শ ও নির্দেশনা দেন আইজিপি।
পুলিশের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের সুষ্ঠু বিপণন ও ব্যবস্থাপনার নিমিত্তে ‘অর্গানাইজেশনাল রিসোর্স প্লানিং’ (ওআরপি)-এর জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
পুলিশের সব বিভাগের সফটওয়্যার, অ্যাপ্লিকেশনগুলো অত্যন্ত দ্রুত যেন নিরাপদে জনগণ ব্যবহার করতে পারেন, সেজন্য পুলিশ সদর দফতরে ‘টায়ার থ্রি’ মানের ডাটা সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (সিডিএমএস) সংরক্ষিত তথ্যের সঙ্গে ডাটা সেন্টারে রক্ষিত ফিঙ্গার প্রিন্টের সমন্বয়ের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তবে পুলিশের একটি ডিজিটাল সেবা অনেক আগে চালু হলেও অনলাইন জিডি সার্ভিসটি আপাতত বন্ধ রয়েছে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ এখনও অ্যানালগ রয়ে গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ শাখার এআইজি সহেলী ফেরদৌস বলেন, ‘সেবা দাতা ও সেবা গ্রহীতা উভয়পক্ষই অনলাইনে সেবা নেওয়ার বিষয়ে জানতে হবে। শুধু একটি পক্ষ থেকে ডিজিটাল সেবা দেওয়া যায় না। তবে এ বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করার কাজও এগিয়ে চলছে।’
-বাংলা ট্রিবিউন