দেশের সব অঞ্চলের উন্নয়ন নিশ্চিত হলেই কেবল জাতীয় অর্থনীতির শক্তিশালী ও ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন হতে পারে। এ কারণে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে দেশের প্রতিটি অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বিভাগভিত্তিক বরাদ্দ রাখার চিন্তা করছে সরকার।
এ ক্ষেত্রে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়কে না দিয়ে সরাসরি বিভাগে বরাদ্দ দিবে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে আগামী বাজেট প্রণয়ন বিষয়ে বাজেট সমন্বয় কমিটির একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব নাম না প্রকাশ করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, এতদিন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের (এলজিআরডি) মাধ্যমে প্রতিটি বিভাগ, জেলা-উপজেলার উন্নয়নে বরাদ্দ দেয়া হত।
কিন্তু সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে বেশকিছু সংখ্যক পৌরসভার মেয়র অভিযোগ করেছেন, পৌরসভার উন্নয়নে তারা ঠিকমতো বরাদ্দ পাচ্ছেন না। তাই তারা সড়কের সংস্কার, পানি নিষ্কাশনসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা দিতে পারছেন না। মেয়ররা আরও উল্লেখ করেন, এলজিআরডি অনেক ক্ষেত্রে অগ্রসর পৌরসভাগুলোতে বরাদ্দ না দিয়ে অনাগ্রসর পৌরসভাগুলোতে বরাদ্দ বেশি দেয়। তাই অগ্রসর পৌরসভাগুলো সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পায় না। এতে তারা নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারে না। ফলে সুষম উন্নয়নের জন্য প্রতিটি পৌরসভায় পৃথক বরাদ্দ দাবি করেন মেয়ররা।
এর প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, তাহলে আগামী বাজেট থেকে উন্নয়ন বরাদ্দ বিভাগভিত্তিক করা যেতে পারে। বিভিন্ন বিভাগের বরাদ্দ অর্থ মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করে তা বিতরণ করবে। এছাড়া কর্মকর্তাদের বেতন ভাতার বিষয়টি বিভাগ বা জেলাভিত্তিক করা যেতে পারে বলে মত দেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পৌরসভার উন্নয়ন সরকারের সার্বিক উন্নয়নকে ফোকাস করে। তাই সরকারের বরাদ্দের পাশাপাশি বিভিন্ন দাতা সংস্থাগুলোর অর্থে পরিচালিত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতেও আরও গতি আনতে হবে। একই সঙ্গে সব অঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। এছাড়া আরও তৃণমূল পর্যায়ের উন্নয়নের জন্য বন্যা ও খরা সহায়ক কর্মসূচিগুলো আরও জোরদার করার আহ্বান জানান অর্থমন্ত্রী।
এদিকে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের প্রাথমিক প্রাক্কলন করে ফেলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর আকার চার লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। এ বিষয়ে সম্প্রতি সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেট হবে সাদামাটা বাজেট। এটি কোনো উচ্চাভিলাষী বাজেট হবে না।
মুহিত বলেন, আমাদের অর্থনীতির অবস্থা অনুসারে আমি গত আট-নয় বছরে বাজেটের যে আকার বাড়াতে চেয়েছি, তা আগামী বাজেটেও প্রতিফলিত হবে। এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে। তিনি বলেন, আগামী বাজেটের আকার চার লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাবনা আনা হয়েছে। এটি প্রাথমিক প্রাক্কলন। পরবর্তীতে এটি ঠিক করা হবে। তবে এর কাছাকাছি কিছু হবে। এ আকারের ওপর ভিত্তি করে মন্ত্রণালয়গুলোর জন্য বরাদ্দেরও আমরা একটি প্রাক্কলন করেছি। ফেব্রুয়ারি-মার্চের দিকে আমরা সব ঠিক করব।
এডিপির পারফরম্যান্স ভালো উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের কথা থাকলেও চার মাসের রিভিউ করেছি। এখানে দেখা গেছে, এবারের পারফরম্যান্স গতবারের থেকে কিছুটা ভালো। আর সেটা সম্ভব হয়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ভালো পারফরম্যান্সের জন্য। এডিপি বাস্তবায়ন ভালো হওয়াতেই আমাদের অবস্থা ভালো হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘গতবার এডিপি বাস্তবায়নের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তাই এটি অর্থনীতির জন্য খুব ভালো। তার মানে অর্থনীতি ইজ গ্রোয়িং ওয়েল। এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমাদের তো আগামী বছরের জন্য বাজেট করে যেতে হবে। আমরা দায়সারা বাজেট করব না। আমরা তো মনে করছি, আগামী নির্বাচনে আমরাই জিতব। তাই কোনো দায়সারা বাজেট দেব না।
আগামী বাজেট কি নির্বাচনী বাজেট হবে? এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, না। নির্বাচনী বাজেট কি? নির্বাচনী বাজেট বলে কিছু নেই। আমার কথা হলো, এটা শেষ বাজেট। তাই এখানে ইনোভেটিভ কিছু থাকবে না, যা করছি সেটা কন্টিনিউ করা হবে। আর যেহেতু আমরা আশা করি যে, আমরা নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবার ক্ষমতায় আসব, তাই আমরা চাই, যা আমরা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছি, সে ধরনের বাজেটই দেয়া হবে।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, প্রত্যেক বাজেটেই আমরা চাই, প্রতিবার মন্ত্রণালয়গুলো যে বরাদ্দ পায় তার কম যেন না পায়। অনাহূত কোনো কিছু না হলে আমরা পরিবর্তন করি না। কোনো মন্ত্রণালয়ের যদি অনুদানের প্রয়োজন হয় তাহলে আলাদা কথা। যেমন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জন্য স্পেশাল অনুদান দেয়া হয়, সেটা আলাদা কথা। তাদের বাজেট হয়তো আগামীবার একই থাকবে না।
নিজস্ব প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম