রাজধানীর কাফরুলের আলোচিত কলেজছাত্র মো. কামরুল ইসলাম মোমিন হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি শেষে
আজ বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
এর আগে গতকাল বুধবার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায়ের দিন রেখেছিলেন আদালত।
এক যুগ আগে করা ওই হত্যা মামলায় ২০১১ সালের ২০ জুলাই বিচারিক আদালতের রায়ে ওসি রফিকসহ তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং পুলিশের তালিকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী হাবিবুর রহমান তাজসহ ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কারাবন্দী থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর ওসি রফিক মারা যান। মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা অপর দুই আসামি হলেন সাখাওয়াত হোসেন জুয়েল ও তারেক ওরফে জিয়া। এই দুজন পলাতক। বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ছয় আসামি হলেন হাবিবুর রহমান তাজ, ঠোঁট উঁচা বাবু, জাফর আহমেদ, মনির হাওলাদার, হাসিবুল হক জনি ও শরিফ উদ্দিন। এই ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। ছয়জনের মধ্যে প্রথম দুজন ছাড়া অপর চার আসামি পলাতক।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ ও সৈয়দা শবনম মুসতারী। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, শেখ বাহারুল ইসলাম ও তৌহিদুর রহমান। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক দুই আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত হিসেবে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী শফিকুর রহমান।
পরে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় হাইকোর্ট বিচারিক আদালতে নয় আসামিকে দেওয়া দণ্ডাদেশ বহাল রেখে রায় দিয়েছেন। ওসি রফিক মারা যাওয়ায় তাঁর সাজা কার্যকর হবে না।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর কাফরুলে কমার্স কলেজের ছাত্র মোমিনকে খুন করা হয়। এই ঘটনায় ওই দিন মোমিনের বাবা আবদুর রাজ্জাক বাদী হয়ে মতিঝিল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম রফিকুল ইসলামসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন ওসি রফিক, যিনি কারাবন্দী থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর মারা যান। ২০০৮ সালের ১১ নভেম্বর নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০০৯ সালের ৫ অক্টোবর এই মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি ওসি রফিকের বিরুদ্ধে নতুন ধারা যুক্ত করে অভিযোগ গঠন করা হয়। এই মামলায় ২০১১ সালের ২০ জুলাই ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ রায় দেন। রায়ে তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও হাবিবুর রহমান তাজসহ ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতের রায়ের পর ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আসে। কারাগারে থাকা দুই আসামি আপিল ও জেল আপিল করেন। এসবের ওপর ১২ নভেম্বর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়।
সুপ্রিমকোর্ট প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম