অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি প্রকাশের পর সাবেক জেলা জজ ও বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ মামলার বাদী মাসদার হোসেন বলেছেন, আমি মনে করি, আইন মন্ত্রণালয় যে বিধিমালা করেছে, সেটি ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী হয়নি। ’৭২-র সংবিধানে ফিরে গেলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিচার বিভাগ পুরোপুরি স্বাধীন হতে হলে একক শাসন লাগবে। তিনি বলেন, দ্বৈত শাসনের ফলে বিচারকরা দ্বিগুণ সুরক্ষা পাবেন।
‘বিধিতে যা বলা হয়েছে, তাতে আপত্তি করার কিছু নেই। দ্বৈত শাসন থাকার ফলে বিচারকরা কোনো ক্ষতির মুখে পড়বেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, দ্বৈত শাসনের ফলে বিচারকরা দ্বিগুণ সুরক্ষা পাবেন। আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত নিন্ম আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির বিষয়ে মঙ্গলবার যুগান্তরের কাছে এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মাসদার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘মাসদার হোসেন মামলার কোথায় লেখা আছে যে, অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের হাতেই থাকতে হবে? আমার মামলার রায়ের ১২ দফার নির্দেশনায় বিষয়টি কোথাও নেই।’ তিনি বলেন, ‘সরকার নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির যে গেজেট প্রকাশ করেছে, তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী নয়।’
বিধি অনুযায়ী অধস্তন আদালতের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপতি ও আইন মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে মাসদার হোসেন বলেন, ‘এটা ঠিকই আছে। সুপ্রিমকোর্টকে ‘হায়ার অথরিটি’ করে দেয়া সম্ভব নয়।’ সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘এ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, নিম্ন আদালতের সার্বিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ফলে সুপ্রিমকোর্টের যে ক্ষমতা নেই, তা তো নয়।’
সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘সরকার বা রাষ্ট্রপতি যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চান কিংবা নিম্ন আদালতের কোনো বিচারকের একদিনের ছুটিও যদি দিতে হয়, তাহলেও সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে দিতে হবে। বিধিতে এ বিষয়টি এসেছে। রাষ্ট্রপতি বা সরকার সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
বিধি প্রকাশে টানাপোড়েনের একপর্যায়ে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, এসকে সিনহা (পদত্যাগকারী সাবেক প্রধান বিচারপতি) রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিয়ে নিতে চান এ বিষয়ে মাসদার হোসেন বলেন, ‘আইনমন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেটাই ঠিক। এসকে সিনহা রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। আমিও তাই মনে করি। এসকে সিনহার নিয়ন্ত্রক কে হবেন, মূলত এটা নিয়েই তিনি আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন।’
গেজেট সঠিক হয়েছে বলে মন্তব্য করে মাসদার হোসেন আরও বলেন, ‘সংবিধানের ১০৯ ও ১১৬ অনুচ্ছেদ সুপ্রিমকোর্টের কাছে থাকায় চূড়ান্ত ঊর্ধ্বতন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (হেড অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অথরিটি) সুপ্রিমকোর্ট হওয়ার আবশ্যকতা নেই। কারণ রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন বিচারকদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। ফলে তিনি বিচারকদের নিয়ন্ত্রকও।’
নিজস্ব প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম