তানজিম আল ইসলাম: ভাড়া বাড়িতে থাকছেন। নতুন বছরের শুরুতে বাড়িভাড়া বাড়ানোর একটা প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু বাড়িওয়ালা ইচ্ছে করলেই ভাড়া বাড়াতে পারেন না।
১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন রয়েছে। আইন অনুযায়ী কোনো বাড়ির ভাড়া মানসম্মত ভাড়ার বেশি নির্ধারণ করা যাবে না এবং যখন-তখন ভাড়া বাড়ানো যাবে না। মানসম্মত ভাড়া বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে আপসে নির্ধারিত হতে পারে। আবার ঘরভাড়া নিয়ন্ত্রকও এ ভাড়া নির্ধারণ করতে পারেন। কোনো ব্যক্তি ভাড়ার অতিরিক্ত প্রিমিয়াম, সালামি, জামানত বা অনুরূপ কোনো অর্থ দাবি করে তা দেওয়ার জন্য ভাড়াটিয়াকে বলতে পারবেন না। দুই বছরের আগে বাড়ির ভাড়া বাড়ানো যাবে না। বাড়ির মালিক বা ভাড়াটিয়ার দরখাস্তের ভিত্তিতে দুই বছর পরপর নিয়ন্ত্রক মানসম্মত ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করতে পারবেন।
বাড়িওয়ালা যদি মানসম্মত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে আদায় করেন, তাহলে প্রথমবার অপরাধের জন্য অতিরিক্ত আদায়কৃত টাকার দ্বিগুণ পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং পরবর্তী সময়ে প্রতিবার অপরাধের জন্য ওই অতিরিক্ত টাকার তিন গুণ দণ্ডিত হবেন। কোনো বাড়ি ভাড়া নিতে চাইলে বাড়িওয়ালা এক মাসের ভাড়ার বেশি ভাড়া অগ্রিম হিসেবে নিতে পারবেন না। অর্থাৎ এক মাসের ভাড়া অগ্রিম হিসেবে নিতে পারবেন-এর বেশি নয়।
চুক্তিনামা সম্পাদন করুন
আইনমতে, বাড়িভাড়া নিতে গেলে একটি লিখিত চুক্তি করে নিতে হবে। চুক্তিপত্র করলে কোনো ঝুটঝামেলা দেখা দিলে অনেক হয়রানির হাত থেকে মুক্ত থাকা যাবে। এই চুক্তিপত্রে অবশ্যই বাড়িভাড়া নির্ধারণ, কত বছর পর ভাড়া বাড়ানো হবে, বাড়ি ছাড়ার আগে নোটিশ কেমন হবে প্রভৃতি শর্ত স্পষ্ট করে নিন। বাড়িভাড়ার চুক্তি ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে করা যেতে পারে এবং প্রয়োজনে নিবন্ধন করে নেওয়া যেতে পারে। বাড়ির মালিক ভাড়াটিয়াকে ভাড়া গ্রহণের লিখিত রসিদ প্রদানে বাধ্য থাকবেন। এ রসিদ নির্ধারিত ফরমে করে ভাড়াটিয়াকে প্রদান করতে হবে। এ রসিদ সম্পন্ন করার দায়দায়িত্ব বাড়িওয়ালার।
উচ্ছেদ করা যাবে?
চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া পরিশোধ করে থাকলে ভাড়াটিয়াকে হঠাৎ করে উচ্ছেদ করা যায় না। চুক্তিপত্রের অবর্তমানে যদি কোনো ভাড়াটিয়া প্রতি মাসের ভাড়া পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করেন, অথবা ঘরভাড়া নিয়ন্ত্রকের কাছে জমা করতে থাকেন, তাহলেও ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে না। যুক্তিসংগত কারণে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করতে চাইলে যদি মাসিক ভাড়ায় কেউ থাকে তাহলে ১৫ দিন আগে নোটিশ দিতে হবে। চুক্তি যদি বার্ষিক ইজারা হয় বা শিল্পকারখানা হয়, তবে ছয় মাস আগে নোটিশ দিতে হবে। চুক্তিপত্রের মেয়াদ শেষ হলেও বাড়িওয়ালা যদি ভাড়া নিয়ে থাকেন, তাহলে ধরে নেওয়া হবে যে বাড়িওয়ালা চুক্তিপত্রটি নবায়ন করেছেন।
আদালতে ভাড়া জমা দেওয়া যায়
বাড়িওয়ালা কোনো কারণে ভাড়া গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে ভাড়াটিয়াকে চুক্তি অনুযায়ী সময়ের মধ্যে অথবা চুক্তি না থাকলে পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে মানি অর্ডারযোগে বাড়িওয়ালার ঠিকানায় ভাড়া পাঠাতে হবে। মানি অর্ডারযোগে পাঠানো ভাড়ার টাকাও যদি বাড়িওয়ালা গ্রহণ না করেন, তাহলে ওই টাকা ফেরত আসার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে ভাড়াটিয়াকে ভাড়া নিয়ন্ত্রকের অর্থাৎ সহকারী জজের কাছে আইনজীবীর মাধ্যমে দরখাস্ত দিতে হবে। আদালত অনুমোদন দিলে প্রতি মাসে ভাড়া আদালতে জমা দেওয়া যাবে।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট