নরসিংদীতে যৌতুক এনে না দেয়ায় সুমি নামের এক নারীর ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালানো হয়েছে। মাথার চুল ও ভ্রু কেটে দেয়া হয়েছে। দেয়া হয়েছে সিগারেটের ছ্যাঁকা। অমানুষিক নির্যাতন ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে তাকে। সম্প্রতি অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে নির্যাতিতার পরিবার। নরসিংদীর রায়পুরায় জাহাঙ্গীরনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
সুমির বাবা বাহার উদ্দিন বলেন, বিয়ে দিয়ে ছিলাম মেয়ে সুখে ঘর করবে বলে। সুখ তার কপালে হলো না। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর নির্যাতন সইতে হচ্ছে। পাষণ্ডের হাত থেকে মেয়েকে বাঁচাতে এ পযর্ন্ত যৌতুক বাবদ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছি। তারা ঘর নির্মাণের জন্য তিন লাখ টাকা দাবি করেছে। কিন্তু আমি কীভাবে দিবো? এত টাকাতো আমার নেই।
আজ মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) মোসা. অথরা আক্তার ওরফে সুমি (২২) বাদি হয়ে স্বামী কবির মিয়া, শ্বশুর, শাশুড়ি দেবরসহ ৫ জনকে আসামী করে রায়পুরা থানায় মামলা করেছেন। এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
সুমির পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ৬ বছর পূর্বে রায়পুরার পলাশতলী ইউনিয়নের শাহর খোলা গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী বাহার উদ্দিনের মেয়ে সুমিকে একই উপজেলা জাহাঙ্গীরনগর গ্রামের হাসেম মিয়ার ছেলে কবির মিয়ার সাথে বিয়ে দেয়া হয়। তাদের কোল আলো করে দুইটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। বিয়ের কিছু দিন পর থেকে রিক্সা গ্যারেজের মালিক কবির যৌতুকের জন্য স্ত্রীর ওপর নির্যাতন শুরু করেন। বিভিন্ন অজুহাতে যৌতুক এনে দেয়ার জন্য সুমিকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। যৌতুক এনে দিতে অস্বীকার করলেই নির্যাতন। বিভিন্ন সময় সুমি তার বাবার বাড়ি থেকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা এনে স্বামীর হাতে তুলে দেয়।
সম্প্রতি কবির মিয়া একটি ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এজন্য তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। সুমি যৌতুক এতে দিতে অস্বীকার করলে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত শনিবার বিকেলে সুমিকে পুনরায় যৌতুক আনতে চাপ দিতে থাকে কবির। এক পর্যায়ে সুমিকে এলোপাথাড়ি মারপিট শুরু করেন তিনি। পরে কাঁচি এনে তার মাথার চুল কেটে দেন। দেবর এসে সুমির চোখের ভ্রু কেটে দেন। শ্বশুর হাসেম মিয়া সিগারেট দিয়ে সুমির দুই হাতে ছ্যাঁকা দেয়। স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও দেবর সবাই মিলেই সুমির ওপর নির্যাতন করেন। সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারান সুমি। খবর পেয়ে বাবার বাড়ি লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সুমি বলেন, বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও দেবর যৌতুকের জন্য আমাকে নির্যাতন শুরু করেন। ঘর নির্মাণের জন্য তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। কিন্তু আমার বাবা মুদি দোকান চালিয়ে আমাদের সংসার চালায়। এত টাকা পাবে কোথায়? সেই ভেবে তাদের নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করেছি। কিন্তু আর কতো? তারা আমার সন্তান দুইটিকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চায়।
রায়পুরা থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করা হয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
জেলা প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম