সুপার শপ আগোরার চেয়ারম্যান নিয়াজ রহিমকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েই নথিসহ সংশ্লিষ্ট বিচারকের উধাও হওয়ার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ভবনে ঢাকার বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব সোবহানীর ওই রায় নিয়েও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে আদালত অঙ্গনে। মামলার যুক্তিতর্কের দিন রায় ঘোষণা করেই ম্যাজিস্ট্রেট নথিসহ খাস কামরা ত্যাগ করেন।
অগত্যা পরে আসামিপক্ষ জামিন আবেদন নিয়ে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের দ্বারস্থ হন এবং নথিসহ বিচারকের উধাও হওয়ার বিষয়টি সিএমএমকে অবহিত করেন। পরে সিএমএম তার অধীন আদালতের নেজারত বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটকে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের বিচারক মাহবুব সোবহানীর আদালতে পাঠান।
সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ভারপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট সংশ্লিষ্ট বিচারক ও মামলার মূল নথি খুঁজে পাওয়া যায়নি মর্মে সিএমএমকে অবহিত করেন। নথিসহ সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে ওই সময় খুঁজে পাওয়া না যাওয়ায় জামিন আবেদন নিষ্পত্তির দায়িত্ব দেয়া হয় স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী পাভেল সুইটকে। পরে মেহেদী পাভেলের আদালত আসামিকে ৩০ দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিলের শর্তে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন। মেহেদী পাভেলের আদালত জামিন মঞ্জুরের আদেশে বিচারিক আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটসহ রায়ের নথি না পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
আইনজীবীরা বলছেন, এভাবে আদালত থেকে মামলার নথি (বিচারিক নথি) অন্য কোথাও নেয়ার সুযোগ নেই। মামলার মূলনথি বাইরে নিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিরুদ্ধে ‘পেশাগত অদক্ষতার’ অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যায়।
এ বিষয়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবু বকর ফরহাদের সঙ্গে আলাপকালে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘বিচারিক নথি’ ব্যক্তিগত কোনো সম্পদ নয়। বিচারিক নথি অবশ্যই আদালতের মধ্যেই থাকবে। কেননা নথি হারিয়ে গেলে, কে দায়ী থাকবেন? নিশ্চয় বিচারক নিজেই দায়ী থাকবেন। তাই নথি আদালতের বাইরে নিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট বিচারককে ‘পেশাগত অদক্ষতার’ কারণে শাস্তির মুখোমুখি করা যায়।
জানতে চাইলে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুব সোবহানী গণমাধ্যমকে বলেন, মামলার রায় আমি দিয়ে দিয়েছি। এখন এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।
মামলার মূলনথি আদালতে না থাকার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, কেউ যদি মামলার নথি নেই বলে থাকেন, তাহলে তিনি কীভাবে বললেন, তা আমি জানি না। আমার অফিস আছে, ডেস্ক আছে। নিশ্চয়ই আমার কাছে আমার রেকর্ড (মামলার রেকর্ড) থাকবে। যদি উচ্চ আদালত তলব করেন, তাহলে সেক্ষেত্রে আমি দেব।
‘রায় ঘোষণার পর মূলনথি পাওয়া যায়নি’- অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই, যা বলার আমি বলেছি।
গত ২৮ ডিসেম্বর স্পেশাল মেট্রোপলিন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুব সোবহানী পিউর ফুড অর্ডিনেন্সের অধীনে দায়ের করা দুই মামলায় আগোরার চেয়ারম্যান নিয়াজ রহিমের এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দেন। একই সঙ্গে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। রায়ের পর পরই আপিলের শর্তে জামিনের জন্য আসামিপক্ষ সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলার নথি না পেয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিট ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) বরাবর জামিন আবেদন করেন।
আবেদনের সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট ও মামলার মূলনথি খুঁজে না পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। এর পরই সংশ্লিষ্ট আদালতে একজন বিচারক পাঠিয়ে প্রকৃত ঘটনা তুলে আনা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৮ ডিসেম্বর মামলার যুক্তিতর্কের দিন ধার্য ছিল। আসামিপক্ষের অভিযোগ, কোনো এক অজানা কারণে মামলার যুক্তিতর্কের ধার্য দিনে রায় ঘোষণা করা হয়েছে। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, রায় ঘোষণা করা ওই আদালতের কজলিস্টে রায়ের বিষয়ে কোনো কিছু না লিখে কেবল সাজা পরোয়ানা ইস্যু করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০৮ সালে ভেজাল খাদ্য বিক্রির অভিযোগে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে ওই দুটি মামলা হয়েছিল। দুটি মামলাতেই আগোরার বিরুদ্ধে ভেজাল ঘি বিক্রির অভিযোগ আনা হয়।
সূত্র : যুগান্তর