কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় কিশোরী ফেলানী হত্যাকাণ্ডের সাত বছরেও ন্যায় বিচার পায়নি তার পরিবার। ১৮ জানুয়ারি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশনের শুনানির দিন ধার্য করায় এর দিকে চেয়ে আছে পরিবারটি।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে কাঁটাতারের বেড়ায় তৎকালীন বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে মৃত্যু হয় ফেলানীর। চাঞ্চল্যকর এ হত্যার বিচার ভারতের উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ালেও ন্যায় বিচার পাননি ফেলানীর স্বজনরা।
এ হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচারসহ সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবি এ পরিবারের সদস্যদের।
ন্যায় বিচারের আশায় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে দুইটি রিট পিটিশন দাখিল করেন যা বর্তমানে বিচারাধীন। এর আগে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে দুই দফায় বেকসুর খালাস দেন বিএসএফ’র বিশেষ আদালত।
ফেলানীর মা জাহানারা বেগমের ভাষায় গণমাধ্যমকে বলেন, আমাগোর মেয়ে ফেলানীরে বিএসএফ’র অমিয় ঘোষ পাখির মতো গুলি কইরা মারছে। কিন্তু এখনও এর বিচার পাই নাই। অমিয় ঘোষের বিচার অইলে ফেলানীর আত্মা শান্তি পাইবো।
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু গণমাধ্যমকে বলেন, বিএসএফ’র বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার ন্যায় বিচার না পেয়ে ২০১৫ সালে ভারতের আইনজীবী অপর্না ভাট ও মানবাধিকার সংগঠন মাসুম’র সহায়তায় ভারতের উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করি। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এ রিট গ্রহণ করে ১৮ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেছেন। আমি আশা করছি, এবার ন্যায় বিচার পাব। ন্যায় বিচারের আশায় এখন আদালতের দিকে তাকিয়ে আছি।
এ হত্যা মামলায় ফেলানীর বাবাকে আইনী সহায়তাকারী কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন গণমাধ্যমকে বলেন, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ফেলানীর বাবার দুইটি রিট গ্রহণ করে একাধিকবার শুনানীর দিন পিছালেও এ বছরের ১৮ জানুয়ারি শুনানীর দিন ধার্য করেছেন। এ মামলায় ভারতের উচ্চ আদালতে ইতিবাচক রায় হলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশের মানুষ।
ভারতের ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে নিহত ফেলানীর মরদেহ কাঁটাতারেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঝুলে থাকে দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘণ্টা। এ নিয়ে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকা ফেলানীর মরদেহের ছবি প্রকাশ হলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোতে সমালোচনার ঝড় উঠে।
পরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দাবির মুখে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে বিএসএফ’র বিশেষ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার শুরু হয়। ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু দুই দফা বিএসএফ’র আদালতে সাক্ষী দিলেও ওই বছরেরই ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
এরপর রায় পুনর্বিবেচনায় বিজিবি’র আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আবারও অমিয় ঘোষকে খালাস দেন ভারতের বিশেষ আদালত।
জেলা প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম