মাজদার হোসেন মামলার রায়ে বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয়ের কথা বলা হলেও বস্তবে তা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
আজ রোববার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জেলা ও দায়রা জজ এবং সমপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ২১তম জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক কিংবা অগণতান্ত্রিক দেশে বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় নেই। জাতিসংঘভুক্ত ১৯৩টি দেশের বিচার বিভাগেরও কোনো আলাদা সচিবালয় নেই। ফলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় গঠন অবাস্তব ধারণা।”
মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত শুনানি করে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে ঐতিহাসিক এক রায় দেয়। ওই রায়ে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থি ও বাতিল ঘোষণার পাশাপাশি জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয় সর্বোচ্চ আদালত, সেখানে বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় করার কথাও ছিল।
মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হলেও গত এগারো বছরে বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা পায়নি। সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের সময়ে পুরাতন সড়ক ভবনে বিচার বিভাগীয় সচিবালয়ের উদ্বোধন করা হলেও এরপর কাজ আর এগোয়নি।
এ নিয়ে হাই কোর্টের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেনের সমালোচনার জবাবে আইনমন্ত্রী ২০১৬ সালে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আইন মন্ত্রণালয় সেক্রেটারিয়েট বানাতে পারে না। মাসদার হোসেন মামলার রায়েও বলা হয়নি যে বিচার বিভাগের সচিবালয় বানানোর দায়িত্ব আইন মন্ত্রণালয়ের ওপর বর্তাবে।
ওই ১২ দফা নির্দেশনার মধ্যে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের দীর্ঘ টানাপড়েন চলে। শেষপর্যস্ত গতবছরের শেষ দিকে ওই শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশ করে সরকার।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ যে রিভিউ আবেদন করেছে তার দ্রুত নিষ্পত্তি হবে তা অনেকের মত আমিও চাই।”
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মুসা খালেদের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহীরুল হক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
নিজস্ব প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম