বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করে ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) চলতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এসময় আদালত বলেন, আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে ভ্রাম্যমাণ আদালতের প্রয়োজন আছে, তবে সরাসরি কারাদণ্ড দিলে ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব হয়।
আজ মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর রিট আবেদনকারী আইনজীবীর পক্ষে ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম।
আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ভ্রাম্যমাণ আদালতের পক্ষে বেশ কিছু যুক্তি ও উদাহরণ তুলে ধরেন। এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত কোনও আদালত না। এটা নির্বাহী বিভাগ দ্বারা পরিচালিত। এখানে সাজা দেওয়া যায় না। তারা অভিযোগ নেওয়ার পর অভিযুক্তকে সাজা দিয়ে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কেন পাঠান না?’
আদালত আরও বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত কোর্ট নয়, এই কারণে যে কোর্টের একটি পরিবেশ থাকে। সেই পরিবেশ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় থাকে না। সেখানে সেই পরিস্থিতিও থাকে না।’
অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতের সঙ্গে সম্মতি পোষণ করে বলেন, ‘হ্যাঁ, কোর্টের মামলায় সাক্ষী আসবে, তাদের সাক্ষ্য নেওয়া হবে।’
আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত বিশেষ আইনের অধীনে আছে। আজ আপনারা সরকারে আছেন, আমরা (বিচারপতিগণ) আছি। কিন্তু কাল তো নাও থাকতে পারি। তখন এর প্রভাব পড়বে। দেশের বাইরে কোথাও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালতের দ্বারা সাজার (কারাদণ্ড) বিধান নেই।
এসময় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা আদালতকে বলেন, ‘দেশের বাইরে অনেক দেশেই ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে সাজা দেওয়া হয়। কেউ ট্রেনে টিকেট না কেটে উঠলে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সঙ্গে সঙ্গে সাজা দেওয়া হয়।’ এসময় আদালত বলেন, সেসব দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজার বিধান নেই।
তিনি বলেন, সেখানেও সাজার বিধান আছে। তারা অপরাধ করলে তিন ধরনের সাজা দেওয়া হয়। আদালত বলেন, সেখানে সাজার বিধান আছে, কিন্তু জেল (কারাদণ্ড) নেই। ৬ মাস, ২ বছর করে তাদেরকে জেল দেওয়া হয় না।
আদালত আরও বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট করতে হবে, কিন্তু বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করে তা চলতে পারে না। আমরা আগামী শুনানিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার প্রেক্ষাপট, পরিস্থিতিগুলো দেখবো।’
আদালত এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে বলেন, ‘এ মামলার শুনানিতে আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনি শুধু সরকারের অ্যাটর্নি নন, আপনি অ্যাটর্নি ফর বাংলাদেশ। আপনি বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল। সুতরাং শুনানির সময় বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকারের চিন্তা করবেন। এটা আমরা প্রত্যাশা করি।’
এরপর আদালত এই মামলার শুনানির জন্য আগামী মঙ্গলবার দিন নির্ধারণের আদেশ দেন। রিটপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলাম দেশের বাইরে থাকায় শুনানির ওই দিন ধার্য করেন আদালত।
সুপ্রিমকোর্ট প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম