ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণতম চার বিচারপতি সঙ্গে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিবাদ মেটানোর চেষ্টা চলছে। পারিবারিক বিবাদ চার দেওয়ালের মধ্যে মিটিয়ে নেওয়ার দাবি উঠেছে। বিরোধ মেটাতে কাজ করছেন নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রতিনিধি, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও প্রবীণ আইনজীবীরা।
এদিকে আজ রোববার (১৪ জানুয়ারি) আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, ক্ষুব্ধ চার বিচারপতির অন্যতম কুরিয়েন জোসেফ জানিয়েছেন, বাইরে থেকে দূতিয়ালির প্রয়োজন নেই। সরকার বা রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপেরও প্রয়োজন নেই। এটা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। প্রতিষ্ঠানকেই মেটাতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ভেতরে যে সব ভুল হচ্ছে, সেগুলো শোধরাতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে চার প্রবীণতম বিচারপতি অভিযোগ তোলেন যে, কোন মামলা কোন বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি হবে, তা ঠিক করার সময় প্রধান বিচারপতি অনুচিত কাজ করছেন। প্রবীণ বিচারপতিদের বাদ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ, স্পর্শকাতর কিছু মামলা বাছাই করে বিচারপতির কাছেই পাঠানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে রোববার (আজ) প্রধান বিচারপতি চার প্রবীণ বিচারপতির সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন বলে খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু বিচারপতি জোসেফ বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র তাদের দাবি মানলেই কেবল সমস্যা মিটবে। না হলে নয়।
ক্ষুব্ধ বিচারপতিদের পাশে দাঁড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনও। আইনজীবীদের সিদ্ধান্ত, যে সব জনস্বার্থ মামলা হচ্ছে, সেগুলো প্রধান বিচারপতি ও অন্য চার প্রবীণ বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচটি বেঞ্চেই পাঠানো হোক। সংগঠনের যুগ্ম-সম্পাদক পীযূষ রায় বলেন, আগেও এমন হতো। আমরা কোনো পক্ষ নিচ্ছি না। কিন্তু প্রবীণ বিচারপতিরা এ বিষয়ে সমস্যার কথা তুলেছেন। এখন এই পথে সমস্যার সমাধান হতে পারে। অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, যে সব জনস্বার্থ মামলায় ইতিমধ্যেই শুনানি শুরু হয়ে গেছে, সেগুলোও এ পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চেই স্থানান্তর করা হোক।
বিচারক ব্রিজগোপাল লোয়ার মৃত্যু নিয়ে তদন্তের আবেদন প্রবীণ বিচারপতিদের বেঞ্চে না পাঠিয়ে, বিচারপতি অরুণ মিশ্রের বেঞ্চে পাঠিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি। শনিবার এটা নিয়েই আপত্তি তোলেন বিচারপতি চেলমেশ্বররা। বার অ্যাসোসিয়েশনের দাবি মানতে হলে প্রধান বিচারপতিকে এখন ওই মামলাটিও সরিয়ে নিতে হবে।
আইনজীবীরা জানান, আটটি সাংবিধানিক বেঞ্চে নানা মামলার শুনানির বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। কয়েকটি সাংবিধানিক বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি বাকি চার প্রবীণ বিচারপতিকে রাখেননি। এবার তারা জায়গা পাবেন কিনা সেটা দেখলেই বোঝা যাবে, প্রধান বিচারপতি নরম হচ্ছেন না নিজের অবস্থানে অনড় থাকছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে এই বিবাদ মেটানোর সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল। তিনি বলেন, সোমবার সকালেই সবাই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মধ্যে ঐক্য দেখতে পাবেন। আমাদের আশা, প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থে বিবাদ মিটিয়ে নেওয়া হবে। বিচারপতিরা অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যক্তি। তারা সমস্যা বাড়তে দেবেন না বলেই আমরা মনে করি।
প্রবীণ আইনজীবীদের মতে, সংবাদ সম্মেলন করার আগে সুপ্রিম কোর্টের ২৫ জন বিচারপতির এক সঙ্গে বৈঠক করা উচিত ছিল। রোববার সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনও সেই ফুল কোর্টের দাবি তুলেছে। সভাপতি বিকাশ সিংহ বলেন, দরজা বন্ধ করেই আপনারা বসুন। চার বিচারপতি যে অভিযোগ তুলেছেন, তা বিবেচনা করা হোক। এটা পারিবারিক বিবাদ। চার দেওয়ালের মধ্যেই মেটাতে হবে।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম