প্রসবকালে ইয়াছমিন আকতার নামে এক প্রসূতির মূত্রনালি কেটে ফেলার আড়াই মাস পর তার মৃত্যুর ঘটনায় ডাক্তারসহ এক ক্লিনিকের তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। গতকাল সোমবার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালতে এ মামলা দায়ের করেন ওই প্রসূতির দিনমজুর স্বামী নজরুল ইসলাম (৩৮)।
সাতকানিয়ার কেরানিহাটস্থ হেলথ কেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। মামলার আসামিরা হলেন ওই হসপিটালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রসনা বর্মন রোজ, ম্যানেজার নুরুল ইসলাম ও পরিচালক বিধান ধর।
নিহতের বাড়ি সাতকানিয়ার বাজালিয়া এলাকায়।
বিচারক চাঞ্চল্যকর এ মামলা আমলে নিয়ে এটাকে এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার জন্য সাতকানিয়া থানা কর্তৃপক্ষকে আদেশ দিয়েছেন। বাদী দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক)/ ৩৪ /৪২০ ৫০৬ ধারায় তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন মামলার এজাহারে।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, গত বছরের ৩১ অক্টোবর বাদীর স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হলে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাকে ঐ হসপিটালের বহির্বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় আবাসিক ডাক্তার হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন ডা. রসনা বর্মন রোজ। ডাক্তারের পরামর্শমত তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে আত্মীয় স্বজনদের জানান যে, তাকে সিজার অপারেশন করতে হবে। এ সময় বাদী ও অন্যান্যরা রোগীকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসতে চাইলে একজন বিশেষজ্ঞ সার্জন এসে এ অপারেশন করবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করা হয়। এ অবস্থায় ওই হাসপাতালে অপারেশনে সম্মত হন বাদী ও তার আত্মীয়–স্বজনরা। এ সময় বাদীকে আশ্বস্ত করে বলা হয়, অপারেশনের জন্য অভিজ্ঞ গাইনি ডাক্তার ও সার্জন ডাকা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে রোগীকে অপারেশনের জন্য অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো হয়। ৩০ মিনিট পর জানানো হয় রোগীর অপারেশন সম্পন্ন এবং একটি ছেলে সন্তান হয়েছে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। অপারেশনের পর বের হয়ে ডাক্তার বলেন, আমাদের কিছু ভুল হয়েছে। কিন্তু রোগী ভাল আছে।
এর কিছুক্ষণ পর ম্যানেজার নুরুল ইসলাম ও নার্স এসে বলেন, রোগীর অবস্থা ভাল না, তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর তাকে চমেক হাসপাতালের গাইনী বিভাগের ৩৩ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। চমেকের ডাক্তাররা সিজার অপারেশনের সময় রোগীর মুত্রনালী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং মূত্রনালী কেটে যাওয়ার কথা জানান তার স্বজনদের।
এরপর দফায় দফায় অপারেশন, ওষুধপত্র প্রয়োগ এবং পরীক্ষা–নিরীক্ষার পরও বাঁচানো যায়নি ওই প্রসূতিকে। গত ১১ জানুয়ারি সকাল ৫টায় তিনি মারা যান।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা অভিজ্ঞ ডাক্তার না রেখে হাসপাতাল পরিচালনা ও ডাক্তার রসনা সিজার অপারেশনের বিষয়ে কোন ধরনের জ্ঞান না থাকায় অপারেশনের সময় প্রসূতির মূত্রনালি কেটে ফেলেন। একই সাথে ওই হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম না রেখে অপারেশনের মতো ঝুকিপূর্ণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলেও বাদী এজাহারে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বাবলু জানান, চিকিৎসার নামে অদক্ষ ডাক্তার দিয়ে একজন প্রসূতিকে মৃত্যু পর্যন্ত ঠেলে দেয়ার ঘটনায় আদালতে মামলা করে ডাক্তারসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়েছি। তিনি আরো বলেন, বিচারক মামলাটিকে আমলে নিয়ে এফআইআর হিসেবে গণ্য করে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আদেশ দিয়েছেন।
জেলা প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম