দেশের এক শ্রেণির মানুষ নিজেদের অশুভ শক্তির কাছে বিক্রি করতে প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘‘রাস্তার পাশে ডাস্টবিনে যেমন লেখা থাকে ‘ইউজ মি’। তেমনি রাজনীতি ও ক্ষমতার ক্ষেত্রে দেশের কিছু মানুষ বুকে সাইনবোর্ড লিখে বসে থাকে ‘ইউজ মি’- আমাকে ব্যবহার করুন। তারা আশায় বসে থাকে অসাংবিধানিক পথে মার্শাল ল’ দিয়ে কেউ ক্ষমতায় দখল করলে তাদের গুরুত্ব বাড়বে। তারা একটি পতাকা পাবে।’’
জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে গতকাল বুধবার (২৪ জানুয়ারি) তিনি এ কথা বলেন।
বাপ্পী তার প্রশ্নে বলেন ‘কিছু সুশীল ও পণ্ডিত সংবাদ সম্মেলন করে বলছেন দেশের অর্থনৈতিক কোনও অগ্রগতি দেখতে পারছেন না। উন্নয়নের ছোঁয়া দেখতে পারছেন না।’ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অভিমত জানতে চান তিনি।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ উন্নয়নের গতিধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। সারাবিশ্ব বাংলাদেশের স্বীকৃতি দিচ্ছে। এটা বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্য যে, এদেশের কিছু মানুষ উন্নয়নটা চোখে দেখে না। যারা চোখ থাকতে অন্ধ, কান থাকতে বধির–তাদের তো হাজার বলেও দেখানো যাবে না, শোনানোও যাবে না। যারা দেখতেই পায় না, শুনতেই পায় না, বুঝতেই পায় না, তাদের বোঝানোর কিছু নেই। তবে আমার চিন্তা মানুষ কী পেলো, তারা খুশি আছে কিনা। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছি কিনা– সেটা আমার বিবেচ্য বিষয়।’
সরকারের উন্নয়ন দেখতে না পাওয়াটাকে এক ধরনের অসুস্থতা বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তাদের দৃষ্টি রয়ে গেছে অবৈধ ক্ষমতা দখলের দিকে। এজন্যই তারা উন্নয়ন দেখে না।
সুশীল সমাজের সমালোচনা করে সরকার প্রধান বলেন, ‘বলা হচ্ছে সুশীল। আমি জানি না, এই সুশীলের অর্থটা কী, ব্যাখ্যাটা কী। কোন তত্ত্বের ভিত্তিতে তারা সুশীল। সেটাই প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয়, যখন তারা কোনও কিছু দেখেনও না, শোনেনও না, বুঝেনও না। তারা সুশীল না অসুশীল তা আমি জানি না। তবে আমাদের দেশে একটা শ্রেণি আছে যাদের আকাঙ্ক্ষা ক্ষমতায় যাওয়ার। তাদের আকাঙ্ক্ষা একটি পতাকা পাওয়ার। কিন্তু তারা জনগণের কাছে যেতে পারেন না। ভোটের রাজনীতিতে তারা অচল। ভোটের রাজনীতি করতে গেলে জনগণের ভোট পেতে হয়। জনগণের কাছে দাঁড়াতে হয়, ভোট ভিক্ষা চাইতে হয়। ভোট পেয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে এই সংসদে বসতে হয় এবং সরকার গঠন করতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা বিশ্বাস করলে অবশ্যই জনগণের কাছে যেতে হবে, নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসতে হবে। কিন্তু এই একটা শ্রেণি আছে তারা জনগণের কাছে যেতে চায় না, বাঁকা পথ খোঁজে ক্ষমতায় যেতে।’ সার্কাসের গাধার গল্প শুনিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি কাউকে গাধা বলছি না। তারা জ্ঞানী-গুণী, শিক্ষিত। বিদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রিপ্রাপ্ত। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। তবে তাদের আচরণ যখন দেখি–খুব স্বাভাবিকভাবেই গাধার কথা মনে পড়ে।’
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবাইকে নিয়েই চলতে চাই এবং সবাইকে নিয়েই চলছি। আমি বিশ্বাস করি, যেকোনও অর্জনের জন্য সবারই প্রচেষ্টা থাকে। তবে, একজনকে হাল ধরতে হয়। যেমনটি গাড়ি চালালে চালকের আসনে একজনই বসেন। তিনি যদি সঠিকভাবে চালিয়ে নিতে পারেন, তাহলে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারে। আর সঠিকভাবে না চালাতে পারলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। খুব স্বাভাবিকভাবে দেশ পরিচালনা তো কেউ এককভাবে করতে পারে না। তবে একজনকে উদ্যোগ নিয়ে, দায়িত্ব নিয়ে, ভালোমন্দ সবকিছুর দায়িত্ব নিয়ে চলতে হয়। আমি সবসময় চেষ্টা করি সবাইকে নিয়ে চলতে এবং সবাইকে নিয়েই চলব। তবে কথা আছে, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে..। আমি একলা চলতে চাই না। সবাইকে নিয়েই চলতে চাই। দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নটা সবার কাছে, তৃণমুল মানুষের কাছে পৌঁছাক–সেটাই আমরা চাই। আর সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
‘আজকের এই অর্জনগুলো সবার প্রয়াসের ফসল’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সবাই মিলে কাজ করেছি বলেই সম্ভব হয়েছে। বিরোধী দলকে ধন্যবাদ জানাই। তারা গঠনমূলক বক্তব্য রেখেছেন। গঠনমূলক আচরণ করেছেন। অন্তত এটুকু বলতে পারি বিএনপি থাকতে তখন যে খিস্তিখেউড় হতো, যে সমস্ত আলাপ-আলোচনা হতো, তা কান পেতে শোনা যেতো না। এখন সেসব নেই। অত্যন্ত গণতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে বিরোধী দল গঠনমূলক আলোচনা করছে এবং সর্বক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে। দেশবাসীর থেকে সহযোগিতা পেয়েছি বলেই এই উন্নয়ন হয়েছে। তৃণমুলের মানুষ উন্নয়নের ফসল পাচ্ছে।’
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার প্রশ্নোত্তরের প্রথম আধ ঘণ্টা প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ছিল।
সংসদ প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম