বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহান বলেছেন, নির্বাচনী রাজনৈতিক খেলোয়াড়দের কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলই একমাত্র লক্ষ্য হওয়ায় আদর্শ ও নীতি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গুরুত্ব হারিয়েছে। রাজনীতিতে অর্থের প্রভাব বাড়ছে। সাংসদদের অর্ধেকের বেশি এখন ব্যবসায়ী। জোটভিত্তিক নির্বাচনী রাজনীতির কারণে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির সম্ভাবনা মুছে গেছে।
জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন আয়োজিত চতুর্থ গুণীজন বক্তৃতায় রওনক জাহান এসব কথা বলেন। ফাউন্ডেশন গতকাল শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে এই বক্তৃতার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক–শিক্ষার্থী ছাড়াও সংবাদপত্রের সম্পাদক, মানবাধিকারকর্মী, গবেষকেরা উপস্থিত ছিলেন।
‘রাজনৈতিক দল: আন্দোলন, নির্বাচন এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র’ শীর্ষক বক্তৃতায় রওনক জাহান বলেন, আন্দোলনের রাজনীতি ও নির্বাচনী রাজনীতির মধ্যে চরিত্রগত পার্থক্য আছে। দুইয়ের মধ্যে ভালো-মন্দ দিক আছে। আন্দোলনের রাজনীতি আদর্শের ওপর গুরুত্ব দেয়। নীতিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক করে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মানুষের কাছে যায়। ষাটের দশকে ও সত্তরের নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আন্দোলনের মাধ্যমে ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা গড়ে তুলেছিল বলে নির্বাচনে বিপুল বিজয় সম্ভব হয়েছিল। তিনি বলেন, বিরোধী দলে অবস্থানও কিছু অর্জনের সুযোগ এনে দেয়। মানুষের প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আন্দোলন করা যায়, মানুষের কাছে যাওয়ার সুযোগ হয়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বিবর্তন ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর ইতিহাস বর্ণনা করে রওনক জাহান বলেন, অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেখা যাচ্ছে দেশে রাজনৈতিক বিরোধ ও বিভেদ তীব্রতর হচ্ছে। নির্বাচনী রাজনীতি দুই দল থেকে দুই জোটের দিকে যাচ্ছে। দুই জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এর ফলে একটি গ্রহণযোগ্য তৃতীয় রাজনৈতিক দল বা নির্বাচনী জোট গড়ে ওঠার সম্ভাবনা মুছে গেছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রওনক জাহানের পাণ্ডিত্য ও দূরদৃষ্টির প্রশংসা করে অনুষ্ঠানের সভাপতি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, পাকিস্তান ব্যর্থ রাষ্ট্র বিষয়ে রওনক জাহান অভিসন্দর্ভ লিখেছিলেন বাংলাদেশের জন্মের আগে। ছাপা হয়েছিল স্বাধীনতার পর। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার গণতান্ত্রিক চর্চা নিয়ে রওনক জাহানের উপস্থাপনা দেশের জন্য এটি একটি জীবন্ত বিষয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক ড. আহরার আহমদ। আর রওনক জাহানের জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরে তাঁকে দর্শক-শ্রোতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান।
মিলনায়তন ছিল তরুণ শ্রোতায় ঠাসা। রওনক জাহান বলেন, ‘আজকাল সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দেখি শ্রোতাদের গড় বয়স ৭০ বছর। আজ তরুণদের দেখে ভালো লাগছে।’ রাজনীতিতে অর্থের আধিপত্য বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সত্তরের দশকের প্রথমদিকে সাংসদদের এক–চতুর্থাংশ ছিলেন ব্যবসায়ী। এখন অর্ধেকের বেশি। প্রথম আলো
সম্পাদনা- ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম