জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও ও মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা মামলার সরকারি কৌঁসুলি ও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ রথীশ চন্দ্র ভৌমিক (৫৮) নিখোঁজের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে রংপুর। এই আইনজীবীকে উদ্ধারে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার (১ এপ্রিল) সকাল থেকেই বিভিন্ন সংগঠন পৃথক কর্মসূচি পালন করেছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রথীশ চন্দ্রকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা না হলে রংপুর ‘অচল’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে তারা।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠন জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে। জেলা প্রশাসকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা নানা স্লোগান দেন। অবস্থান কর্মসূচি থেকে রথীশকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধারে প্রশাসনকে সময় বেঁধে দেন তারা।
এ সময় জেলা প্রশাসক নিজ কার্যালয় থেকে বেরিয়ে এসে অবস্থান নেওয়া বিভিন্ন সংগঠনের নেতা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, সকাল থেকে তিনি রথীশ চন্দ্র থেকে খুঁজে বের করার জন্য করণীয় নিয়ে কাজ করছেন। স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সকালে তাঁকে ফোন করেছিলেন। জেলা প্রশাসক বলেন, তিনি এখানে নতুন যোগ দিয়েছেন। রথীশ চন্দ্রের সঙ্গে তাঁর একবারই কথা হয়েছিল। তাঁকে খুঁজে বের করতে সবকিছু করছে প্রশাসন।
প্রশাসনের আশ্বাস পেয়ে আজকের মতো অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন আন্দোলনকারীরা। অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয় জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে সেখানে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দীন আহমেদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, জেলার দপ্তর সম্পাদক তৌহিদুর রহমান, পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বনমালী পাল প্রমুখ।
এ ছাড়া সকালে জেলা আইনজীবী সমিতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কে মানববন্ধন করেছে। সমিতি আজ দুপুর থেকে আদালত বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। জেলার লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরাও একই দাবিতে মানববন্ধন করেছে। তাঁরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
তাঁর নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ায় গতকাল শনিবার সকাল থেকে দিনভর শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ, সড়ক অবরোধ, সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এ নিয়ে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
রথীশ চন্দ্র বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত। তিনি রংপুর জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক। বাবু সোনা নামে পরিচিত এই আইনজীবী হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট ও রংপুর জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি। তাঁর স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার গতকাল বলেন, সকাল সোয়া ছয়টার দিকে উনি (রথীশ) স্নান করে বাড়ি থেকে বের হন। একটু পরেই আসবেন বলে জানান। বাড়ির বাইরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লাল রঙের একটি মোটরসাইকেলে করে তিনি বের হন। তবে মোটরসাইকেলের ব্যক্তিটিকে চিনতে পারেননি তিনি।