সব দুর্নীতিই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তফসিলভুক্ত অপরাধ নয় বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আমলারা যদি চেয়ারের মায়া ত্যাগ করে আইনানুগভাবে তাদের সব দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে কারও পক্ষেই দুর্নীতি করা সম্ভব নয়।’
আজ রোববার (১ এপ্রিল) দুদক সম্মেলন কক্ষে ‘জবাবদিহিমূলক প্রশাসন ব্যবস্থাপনা: দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধের প্রধান নিয়ামক’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘মানিলন্ডারিং আইন ও দুদক আইন সংশোধনের মাধ্যমে বেসরকারি ব্যক্তিদের জাল-জালিয়াতি, প্রতারণা, অর্থ-পাচার সংক্রান্ত অপরাধ, দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে তফসিল বহির্ভূত করা হয়েছে। ফলে পানামা পেপার কিংবা প্যারাডাইজ পেপার দুর্নীতিতে যে সব বেসরকারি ব্যক্তির নাম এসেছে, তাদের অনুসন্ধান করা কমিশনের জন্য কিছুটা জটিল বিষয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপরও কমিশন দেশের স্বার্থে ও জনগণের প্রত্যাশাকে সামনে রেখে অবৈধ সম্পদ খোঁজার মাধ্যমে তাদের অবৈধ সম্পদ পাচারের বিষয়টি অনুসন্ধান করছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমলারা যদি চেয়ারের মায়া ত্যাগ করে আইনানুগভাবে তাদের সব দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে কারও পক্ষেই দুর্নীতি করা সম্ভব নয়।’
অনৈতিক যোগসাজস ছাড়া কোনও দুর্নীতি সংঘটিত হতে পারে না মন্তব্য করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘পদ্ধতিগত সংস্কার ছাড়া আমলাতন্ত্রের দুর্নীতি নির্মূল করার খুব বেশি একটা সহজ পথ নেই।’
জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ কাউকে শান্তিতে ভোগ করতে দেবেন না হুঁশিয়ারি দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা কোচিং বাণিজ্যের ব্যাপারে কমিশন শূন্য-সহিষ্ণুতানীতি অবলম্বন করবে। কোচিংয়ের আড়ালে ভ্যাট-ট্যাক্সবিহীন উপার্জন অবশ্যই অনুপার্জিত আয়। বাংলাদেশের সংবিধান কাউকে এই অনুপার্জিত আয় ভোগ করার সুযোগ দেয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনও জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ কাউকে শান্তিতে ভোগ করতে দেবে না।’
এর আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক-এর ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘দুদকের উচিত, চিহ্নিত নামকরা দুর্নীতিবাজদের শুধু ডেকে না এনে, তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করে তা গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে সমাজে দুর্নীতিবিরোধী বার্তা পৌঁছে দেওয়া। দুদকের উচিত, প্রশাসনের নিয়োগবাণিজ্য, পদায়ন ও বদলি বাণিজ্যের লাগাম টেনে ধরা। পানামা পেপার ও প্যারাডাইস পেপারে অনেকের নাম এসেছে। এ বিষয়ে দুদকের কার্যক্রম মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণকে জানানো যেতে পারে।’
দুদকের কার্যক্রমের প্রচারণা বৃদ্ধির অনুরোধ জানিয়ে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক পরিমণ্ডল ছাড়া দুর্নীতি দমন বা প্রতিরোধ করা কঠিন।’ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের এবং তার পোষ্যদের সম্পদের উৎসসহ বিবরণি দাখিল বাধ্যতামূলক করেছে। আমাদের দেশেও সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীরা হলফনামা দিয়ে সম্পদ বিবরণি দাখিল করেন। আর কেউ যদি মিথ্য হলফনামা দিয়ে যাত্রা শুরু করেন, তাহলে তাদের প্রতি জনগণ আস্থা রাখবে কিভাবে?’
বিদ্যমান প্রশাসনিক ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা অনুপস্থিত উল্লেখ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হাফিজউদ্দীন খান বলেন, ‘দুর্নীতি দমন করতে হলে জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন থাকতেই হবে। কিন্তু দেশের বিদ্যমান প্রশাসনিক ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা অনুপস্থিত। জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন গড়তে হলে সরকারি নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, বদলি, পদায়নে, শৃঙ্খলা, পদোন্নতির স্বচ্ছতা ও বৈষম্যহীন নীতিমালা প্রয়োজন।’
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন, সাবেক মন্ত্রী ড. মিজানুর রহমান শেলী, সংসদ সদস্য আলহাজ একেএম রহমতউল্লাহ, সুজন সম্পাদক বদিউল মজুমদার, দুদক কমিশনার ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ, কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তানিয়া আমির, খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, সাংবাদিক সোহরাব হোসেন, অধ্যাপক জেরিনা জামান খান, অধ্যাপক আবুল কাশেম মজুমদার, চ্যানেল-৭১-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, প্রফেসর ড, নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। বাংলাট্রিবিউন