চুয়াডাঙ্গা শহরের ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা নিয়ে ‘চোখ হারানো’ ২০ জনকে এক কোটি করে মোট ২০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।
আজ রোববার (১ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত হাইকোর্টে এ রিট দায়ের করেন।
রিট দায়েরের পর তিনি জানান, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিটের ওপর শুনানি হতে পারে।
রিট আবেদনে, ৫ মার্চ চুয়াডাঙ্গার ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমুনিটি হেল্থ সেন্টারে তিন দিনের চক্ষু শিবিরে চক্ষু চিকিৎসায় ২০ জনের চোখ অস্ত্রোপচারে কার্যকর, যথাযথ ও পর্যাপ্ত নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণে নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ২০ জনের প্রত্যেককে কেন এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না, সেই মর্মেও রুল জারির আবেদন করা হয়েছে।
প্রয়োজনীয় নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে দায়সারাভাবে চক্ষু অপারেশন করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে না, মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে, স্বাস্থ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন, ডিসি ও এসপি, ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেল্থ সেন্টার, ডা. মোহাম্মদ শাহীনসহ ১০ জনকে।
একটি জাতীয় দৈনিকে ‘চক্ষু শিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন’! শীর্ষক শিরোনামে ২৯ মার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনযুক্ত হাইকোর্টে রিট করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘চুয়াডাঙ্গার ইমপ্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমুনিটি হেল্থ সেন্টারে তিন দিনের চক্ষু শিবিরের দ্বিতীয় দিন ৫ মার্চ ২৪ জন নারী-পুরুষের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীন। তবে বাসায় ফিরেই ২০ জন রোগীর চোখে ইনফেকশন দেখা দেয়। এসব রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ মার্চ অপারেশনের পর ৬ মার্চ তাদের প্রত্যেককেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বাড়ি ফিরে ওই দিনই কারও বিকেলে, কারও সন্ধ্যায়, কারও বা রাত থেকে চোখে জ্বালা-যন্ত্রণা ও পানি ঝরতে শুরু করে। পরদিনই তারা যোগাযোগ করেন ইমপ্যাক্ট হাসপাতালে। তাদের তখন গুরুত্ব না দিয়ে কোনো রকম চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে উঠলে ফের তারা ইমপ্যাক্টে যান। সেখান থেকে তখন কয়েকজন রোগীকে স্থানীয় এক চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। স্থানীয় ওই চক্ষু বিশেষজ্ঞ তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন। এদের মধ্যে চারজন রোগী নিজেদের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্বজনদের নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরে ইমপ্যাক্ট থেকে ১২ মার্চ একসঙ্গে ১৬ জন রোগীকে ঢাকায় নেওয়া হয়। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ৫ মার্চের ওই অপারেশনের ফলে এদের চোখের এত ভয়াবহক্ষতি হয়েছে যে ১৯ জনের একটি করে চোখ তুলে ফেলতে হয়েছে।’
‘এ ছাড়া হায়াতুন (৬০) নামে এক নারীর অপারেশন করা বাম চোখের অবস্থাও ভালো নয়। ঢাকায় দ্বিতীয় দফায় অপারেশন করলেও দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসেনি তার। তিনি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় নিজ বাড়িতে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।’
‘এই ২০ রোগীর সবাই দরিদ্র। কেউ স্বজনের কাছে ধার-দেনা করে, কেউ বাড়ির ছাগল-মুরগি বিক্রি করে, কেউ বা এনজিও থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে ভর্তি হয়েছিলেন চুয়াডাঙ্গার ইমপ্যাক্ট হাসপাতালে। সেখানে অপারেশনের পরই তাদের চোখে ইনফেকশন হয়। পরে অপারেশন হওয়া চোখ তুলে ফেলতে হয়। তবে ঢাকার হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা ব্যয় দিয়েই নিজেদের দায় সেরেছে ইমপ্যাক্ট। যদিও সংশ্লিষ্টদের বিচার ও চিরদিনের জন্য অন্ধত্বের ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।’