ভারতের প্রধান বিচারপতির এজলাসে তিন খ্যাতনামা আইনজ্ঞকে প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করল বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (বিসিআই)। তারা হলেন- কপিল সিব্বাল, অভিষেক মনু সিংভি এবং বিবেক তঙ্খার
কিন্তু প্রধান বিচারপতি দীপক কুমার মিশ্রর এজলাসে কেন উপস্থিত হতে পারবেন না এই তিন খ্যাতনামা আইনজ্ঞ? স্থানীয় গণমাধ্যম ডিএনএ সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু কংগ্রেস-সহ বেশ কয়েকটি বিরোধী দল প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব আনতে চলেছে, তাই সেই সব দলের সাংসদ তথা আইনজীবীদের সংশ্লিষ্ট এজলাস থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বার কাউন্সিল।
কাউন্সিলের সভাপতি মানান মিশ্রকে উদ্ধৃত করে ডিএনএ প্রতিবেদনে জানা যায়, “বিসিআই কখনও কোনও সাংসদের আদালতে প্রবেশাধিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে না। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও রয়েছে। যদি কোনও সাংসদ-আইনজীবী অথবা বিধায়ক আইনজীবী কোনও বিচারপতির বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট বা অপসারণের প্রস্তাব উত্থাপন করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁকে বা তাঁদের সংশ্লিষ্ট বিচারপতির এজলাসে প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে না। অধিকাংশ কাউন্সিল সদস্যদের এমনটাই মত”।
উল্লেখ্য, দেশের প্রাক্তন মানব সম্পদ উন্ননয়নমন্ত্রী তথা রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ কপিল সিব্বাল একজন প্রথম সারির আইনজীবী। সদ্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে কংগ্রেসের টিকিটে ও তৃণমূলের সমর্থনে রাজ্যসভায় যাওয়া অভিষেক মনু সিংভিও অতি দক্ষ আইনজীবী হিসাবে সুপরিচিত। আর, মধ্যপ্রদেশ থেকে রাজ্যসভায় যাওয়া কংগ্রেস সাংসদ বিবেক তঙ্খাও অত্যন্ত প্রবীণ আইনজ্ঞ। অতীতে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলের পদ সামলানো এই আইনজীবীকে এক সময় মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি হিসাবেও নিয়োগ করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সেই পদ গ্রহণ করতে চাননি। ফলে সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত ওকালতি করা দেশের এমন তিন হাই-প্রোফাইল আইনজীবীকে প্রধানবিচারপতির এজলাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা করার ঘোষণায় ইতিমধ্যে বিতর্ক ও জল্পনা তৈরি হয়েছে।
যদিও প্রত্যাশা মতোই কাউন্সিলের এমন পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছেন তিন আইনজীবীই। সিব্বাল, সিংভি এবং তঙ্খা ইতিমধ্যে কাউন্সিলকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, আদালতে তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করার কোনও ক্ষমতাই নেই আইনজীবীদের এই সংগঠনের।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলিতে অভিজ্ঞ বিচারপতিদের সামিল না করার অভিযোগে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি বেনজির বিদ্রোহ ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্টেরই চার প্রবীণ বিচারপতি। দেশের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে সে দিন আঙুল তুলেছিলেন, বিচারপতি চেল্লামেশ্বর, বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফ এবং বিচারপতি মদন বি লকুর। বিদ্রোহী বিচারপতিদের বক্তব্য ছিল, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সমান পদমর্যাদা সম্পন্নদের মধ্যে প্রথম। রীতি অনুযায়ী তিনিই সুপ্রিম কোর্টের রোস্টার অর্থাৎ কোন মামলা, কোন বিচারপতি শুনবেন সেটি নির্ধারণ করেন। আর এই রোস্টার তৈরি করতে গিয়েই বিচারপতি দীপক মিশ্র পক্ষপাতিত্ব করছেন বলে অভিযোগ বিদ্রোহীদের। এরপরই গোটা ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতির নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁকে ইমপিচ করার প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে বলে শোনা যায়।
বিশ্বস্ত সূত্রের খবর অনুয়ায়ী, এই প্রস্তাবে সায় রয়েছে কংগ্রেস, সপা, এনসিপি এবং টিডিপি-র। ফলে, এমন প্রস্তাব সংসদে উঠলে কংগ্রেস সাংসদ হিসাবে এই তিন আইনজীবী যে তার পক্ষেই থাকবেন এতে সন্দেহ নেই। আর সেই জন্যই বার কাউন্সিলের এমন বেনজির সিদ্ধান্ত। কিন্তু, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ হিসাবে স্বীকৃত বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ ক্ষেত্রে এমন পদক্ষেপ নেওয়া কতটা গণতান্ত্রিক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।