ভুয়া খবর প্রকাশের জন্য দায়ীদের জরিমানা ও সর্বোচ্চ ছয় বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে নতুন একটি আইন পাশ করেছে মালয়েশিয়া।
মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক সরকারের আনা ‘এন্টি ফেক নিউজ ২০১৮’ বিলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে গতকাল সোমবার (২ এপ্রিল) পাস হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সাধারণ নির্বাচনের আগে ভিন্নমত দমন ও বাক স্বাধীনতা খর্ব করার উদ্দেশ্যে আইনটি পাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ সমালোচকদের।
নতুন এ আইনে ভুয়া খবরের সংজ্ঞায় ফিচার, অডিও রেকর্ডিং ও ভিজুয়াল মাধ্যমের সেসব ‘খবর, তথ্য, পরিসংখ্যান কিংবা প্রতিবেদনকে’ বিবেচনা করার কথা জানানো হয়েছে, যার ‘পুরোটা কিংবা আংশিক মিথ্যা’।
এ ধরনের খবর প্রকাশ ও প্রচারের শাস্তি হিসেবে আইনে ৫ লাখ রিঙ্গিত (এক লাখ ২৩ হাজার ডলার) পর্যন্ত জরিমানা ও সর্বোচ্চ ছয় বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
অবশ্য বিলটির প্রাথমিক খসড়ায় দায়ীদের দশ বছর পর্যন্ত সাজার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ডিজিটাল প্রকাশনার ক্ষেত্রেও নতুন এ আইনটি প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। মালয়েশিয়ার ভেতরে কিংবা বাইরে ছড়ানো বিদ্বেষপূর্ণ ভুয়া খবরের সঙ্গে জড়িত বিদেশিদেরও এতে অভিযুক্ত করা যাবে।
মালয়েশিয়া কিংবা এর কোনো নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এমন যে কোনো ভুয়া খবরের ক্ষেত্রে আইনটি বিবেচিত হবে বলে পার্লামেন্টে জানানো হয়েছে।
আইনটি ভিন্নমত দমনে ব্যবহার হতে পারে, সমালোচকরা এ আশঙ্কার কথা জানালেও সরকার বলছে, ভুয়া খবরের জন্য করা এ আইন বাক স্বাধীনতা হরণ করবে না।
ভুয়া খবর সংক্রান্ত মামলাগুলো স্বাধীন একটি বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হবে বলেও জানিয়েছে তারা।
“ভুয়া খবরের প্রসারের হাত থেকে জনগণকে সুরক্ষা দিতেই এ আইন করা হয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী জনগণের বাক স্বাধীনতার অধিকারও বলবৎ থাকছে,” পার্লামেন্টে বলেন মালয়েশিয়ার আইন মন্ত্রী আজালিনা ওথমান।
সোমবার জাতিসংঘের মতামত ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ রেপোর্টিয়ার ডেভিড কেইন মালয়েশিয়ার সরকারকে এ ধরনের আইন পাসে তড়িঘড়ি না করতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
“সরকারকে আমি বিলটি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি। নতুন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে সাধারণ ও প্রকৃত জনমত যাচাইয়ের জন্য বিলটি উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত,” টুইটারে বলেছিলেন তিনি।
মালয়েশিয়ার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থ কেলেঙ্কারির একটি অভিযোগ ঘোরাফেরার মধ্যেই সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার কয়েকদিন আগে দেশটিতে নতুন এ আইন হল।
নাজিব অবশ্য শুরু থেকেই রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতিসাধনের সব ধরনের অভিযোগের সঙ্গে জড়িত থাকার দায় অস্বীকার করে আসছেন।
গত মাসে দেশটির এক প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, সরকারি কর্তৃপক্ষের যাচাই ছাড়া রাষ্ট্রীয় অর্থ কেলেঙ্কারির যে কোনো সংবাদকেই ‘ভুয়া’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
ওই অভিযোগের হাত থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বাঁচাতেই সরকার ‘ভুয়া খবর’ রোধে নতুন আইন করেছে বলে দাবি বিরোধী সাংসদ লিম কিট সিয়াংয়ের।
রয়টার্স বলছে, ভুয়া খবর সামলাতে আইন করা বিশ্বের প্রথম কয়েকটি দেশের মধ্যে থাকা মালয়েশিয়াতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট ও প্রতিকূল সংবাদ ঠেকাতে ঔপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্রদ্রোহীতা আইনের মতো অসংখ্য আইন এমনিতেই ছিল। এবার তার সঙ্গে ‘এন্টি ফেক নিউজ ২০১৮’ যুক্ত হল।
সিঙ্গাপুর ও ফিলিপিন্সের মতো দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশও ভুয়া খবর সামলাতে নানান পরিকল্পনার কথা চিন্তা করছে।
গত বছর জার্মানির সরকার বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট সরাতে ব্যর্থ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নেটওয়ার্কগুলোকে জরিমানার আওতায় আনার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল।